০১:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় ভুল অস্ত্রোপচারে শিশুর মৃত্যু : অনুমতি ছাড়াই চুরি করে চলছিল হাসপাতালের কার্যক্রম

গত ১৯ আগস্ট অব্যবস্থাপনার প্রমাণ পাওয়ায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতিষ্ঠানটিকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও অনির্দিষ্টকালের জন্য সিলগালা করা হয়। তবে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হুমায়ন কবীর চুরি করেই কার্যক্রম চালাতেন।

গত মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বিআরএম প্রাইভেট হাসপাতালে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কুতুবপুর ইউনিয়নের আসানন্দপুর গ্রামের হতদরিদ্র আক্তার হোসেনের ৮ বছর বয়সী মেয়ে শিশু সুমাইয়া আক্তারের অ্যাপেন্ডিসাইটিস অস্ত্রোপচার করেন ডা. খন্দকার গোলাম মোস্তফা কবীর। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তড়িঘড়ি করে শিশু সুমাইয়াকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) রেফার্ড করেন। পরে কুষ্টিয়া পৌছালে শিশু সুমাইয়া খাতুনের মৃত্যু হয়। এরপরই চিকিৎসক, স্টাফসহ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হুমায়ুন করিব পালিয়ে যান। পরে উত্তেজিত জনতা প্রতিষ্ঠানটিতে তালা ঝুলিয়ে দেন।

আরও পড়ুন

অপর দিকে, গতকাল বুধবার (৩০ অক্টোবর) কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন শেষে শিশু সুমাইয়া খাতুনের মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্ত করা হয়।

এদিকে, অনুমতি না থাকলেও চুরি করে বিআরএম বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন হাসপাতালটির পরিচালক হুমায়ুন আহমেদ। এ ঘটনার পর এলাকায় সাধারণ জনগনের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা গেছে।

ঘটনার দিন শিশু সুমাইয়া খাতুনের খালু মাহাবুব রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, শিশু সুমাইয়াকে বিআরএম প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে তার সকল পরিক্ষা-নিরিক্ষার পর সকাল ৯ টার দিকে ডা: খন্দকার গোলাম মোস্তফা কবীর অস্ত্রোপচার শুরু করেন। প্রায় ২ ঘন্টা হলে শিশু সুমাইয়াকে অপারেশন থিয়েটার থেকে থেকে বের না করলে পরিবারের সদস্যরা কান্নকাটি শুরু করেন। এর কিছুক্ষন পরে সুমাইয়ার চিৎকার শুনতে পাই ‘আমার লাগছে মা, আমাকে বাঁচাও’।

মাহাবুব রহমান বলেন, সুমাইকা চিৎকার করলে তখন ডা: খন্দকার গোলাম মোস্তফা কবীরকে ধমক দিতে শোনা যায়। এরপরই সুমাইয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী নিয়ে যেতে হবে বলে তড়িঘড়ি করে অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে বলেন আমাদের। হাসপাতালের কর্মরতদেরকে বলেন, পরিবারের সদস্যদের জানাতে সুমাইয়াকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এখনি। এরপরই ডা. গোলাম মোস্তফা দ্রুত প্রতিষ্ঠান থেকে পালিয়ে যান। ভূল অপারেশন করে সুমাইয়াকে মেরে ফেলেছে। আমরা ওই চিকিৎসককে শাস্তির দাবি করছি।

আরও পড়ুন

ঘটনার দিন বিআরএম প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক হুমায়ুন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, সুমাইয়ার ঠান্ডাজনিত সমস্যা ছিল। স্যালাইন দেওয়ার পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তখন আমরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করি। সেখানে যাওয়ার পথে কুষ্টিয়ায় পৌছালে শিশু সুমাইয়ার মৃত্যু হয়।

ঘটনার দিন শিশু সুমাইয়ার পরিবার অভিযোগ করে বলেন, অস্ত্রোপচারের সময় মেয়েকে ধমক দিয়ে নির্যাতন করেছেন ওই চিকিৎসক। ভুল অপারেশনের ফলে অবস্থা শঙ্কটাপন্ন হলে তাকে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে তড়িঘড়ি হাসপাতাল থেকে বের করে দেন। এ ঘটনার পরপরই হাসপাতালের স্টাফরা পালিয়ে যায় এবং স্থানীয়রা হাসপাতালটিতে তালা ঝুলিয়ে দেয়।

চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমতি ছাড়ায় কীভাবে হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম ও অপারেশন করলেন, এ বিষয়ে গতকাল বুধবার মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালক হুমায়ুন আহমেদের বলেন, ‘আমি একটি আলোচনার মধ্যে আছি। এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারব না।’ ফ্রি হয়ে কথা বলবেন জানিয়ে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

অ্যাপেনডিসাইটিসের অপারেশনের কোন পর্যায়ে শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী পাঠানো হয় এবং কী কারণে শিশুটির মৃত্যু হতে পারে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে ডা. খন্দকার গোলাম মোস্তফা কবীর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের শেষ পর্যায়ে শিশুটির অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে যায়। এ সময় অ্যানেসথেসিয়াসহ যাবতীয় চিকিৎসা দেয়া হলেও শিশুটির অবস্থার উন্নতি হয়নি। ফলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।’ শিশুটির অ্যানেসথেসিয়া দেন কোন চিকিৎসক, জানতে চাইলে তিনি জরুরি সভায় ব্যস্ত থাকার অজুহাত দেখান। এবং পরে কথা বলবেন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

শিশু সুমাইয়া আক্তার চাঁদ মণির মৃত্যুর বিষয়ে চানতে চাইলে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. তাপস কুমার সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মঙ্গলবার হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত অবস্থায় পেয়েছিলেন। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া থানায় অবগত করা হয় গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় ময়নাতদন্ত বোর্ড শিশুটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’

কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) দিপেন্দ্রনাথ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ হয়নি।’

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত ১৯ আগস্ট বিআরএম বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযান চালানো হয়। এসময় হাসপাতালটির অপারেশন থিয়েটার মানসম্পন্ন না থাকা, সিজারিয়ানে একই চিকিৎসক অ্যানেসথেসিয়া দেয়া ও অপারেশন করা এবং ল্যাবের ব্যবস্থাপনা সঠিক না হওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম পাওয়া যায়। ফলে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানাসহ সিলগালা করে বন্ধ করা হয়। এরপর হাসপাতালটি পরিচালনার কোনো অনুমতি পেয়েছে কি না সে সম্পর্কে আমি অবগত নয়।’ বিআরএম বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর বিষয়ে এই চিকিৎসা কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনাটি সম্পর্কে জেনেছি। বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জনকে অবগত করা হয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিভিন্ন অনিয়ম থাকায় সরোজগঞ্জ বাজারের বিআরএম বেসরকারি হাসপাতালটি সিলগালা করে বন্ধ করা হয়। পরবর্তীতে শুধুমাত্র হাসপাতালটির উন্নয়ন কার্যক্রমের স্বার্থে সিলগালা খুলে দেয়া হয়। তবে সেখানে চিকিৎসা কার্যক্রমের কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি, তারা অনুমতি ছাড়ায় চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়েছে।’

হাসপাতালে ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি সম্পর্কে জানার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) ঘটনাটির তদন্ত করবেন। এ ছাড়াও অনুমতি ছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনার দ্বায়ে হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে, ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বুধবার শিশু চাঁদ মণির মরদেহ তার নিজ বাড়ি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার রসুলপুরে নেয়া হয়। বাদ মাগরিব স্থানীয় কবরস্থানে দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়ে বলে সুত্রে জানা গেছে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

চুয়াডাঙ্গায় ভুল অস্ত্রোপচারে শিশুর মৃত্যু : অনুমতি ছাড়াই চুরি করে চলছিল হাসপাতালের কার্যক্রম

প্রকাশের সময় : ১২:৪৬:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

গত ১৯ আগস্ট অব্যবস্থাপনার প্রমাণ পাওয়ায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতিষ্ঠানটিকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও অনির্দিষ্টকালের জন্য সিলগালা করা হয়। তবে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হুমায়ন কবীর চুরি করেই কার্যক্রম চালাতেন।

গত মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বিআরএম প্রাইভেট হাসপাতালে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কুতুবপুর ইউনিয়নের আসানন্দপুর গ্রামের হতদরিদ্র আক্তার হোসেনের ৮ বছর বয়সী মেয়ে শিশু সুমাইয়া আক্তারের অ্যাপেন্ডিসাইটিস অস্ত্রোপচার করেন ডা. খন্দকার গোলাম মোস্তফা কবীর। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তড়িঘড়ি করে শিশু সুমাইয়াকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) রেফার্ড করেন। পরে কুষ্টিয়া পৌছালে শিশু সুমাইয়া খাতুনের মৃত্যু হয়। এরপরই চিকিৎসক, স্টাফসহ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হুমায়ুন করিব পালিয়ে যান। পরে উত্তেজিত জনতা প্রতিষ্ঠানটিতে তালা ঝুলিয়ে দেন।

আরও পড়ুন

অপর দিকে, গতকাল বুধবার (৩০ অক্টোবর) কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন শেষে শিশু সুমাইয়া খাতুনের মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্ত করা হয়।

এদিকে, অনুমতি না থাকলেও চুরি করে বিআরএম বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন হাসপাতালটির পরিচালক হুমায়ুন আহমেদ। এ ঘটনার পর এলাকায় সাধারণ জনগনের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা গেছে।

ঘটনার দিন শিশু সুমাইয়া খাতুনের খালু মাহাবুব রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, শিশু সুমাইয়াকে বিআরএম প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে তার সকল পরিক্ষা-নিরিক্ষার পর সকাল ৯ টার দিকে ডা: খন্দকার গোলাম মোস্তফা কবীর অস্ত্রোপচার শুরু করেন। প্রায় ২ ঘন্টা হলে শিশু সুমাইয়াকে অপারেশন থিয়েটার থেকে থেকে বের না করলে পরিবারের সদস্যরা কান্নকাটি শুরু করেন। এর কিছুক্ষন পরে সুমাইয়ার চিৎকার শুনতে পাই ‘আমার লাগছে মা, আমাকে বাঁচাও’।

মাহাবুব রহমান বলেন, সুমাইকা চিৎকার করলে তখন ডা: খন্দকার গোলাম মোস্তফা কবীরকে ধমক দিতে শোনা যায়। এরপরই সুমাইয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী নিয়ে যেতে হবে বলে তড়িঘড়ি করে অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে বলেন আমাদের। হাসপাতালের কর্মরতদেরকে বলেন, পরিবারের সদস্যদের জানাতে সুমাইয়াকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এখনি। এরপরই ডা. গোলাম মোস্তফা দ্রুত প্রতিষ্ঠান থেকে পালিয়ে যান। ভূল অপারেশন করে সুমাইয়াকে মেরে ফেলেছে। আমরা ওই চিকিৎসককে শাস্তির দাবি করছি।

আরও পড়ুন

ঘটনার দিন বিআরএম প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক হুমায়ুন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, সুমাইয়ার ঠান্ডাজনিত সমস্যা ছিল। স্যালাইন দেওয়ার পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তখন আমরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করি। সেখানে যাওয়ার পথে কুষ্টিয়ায় পৌছালে শিশু সুমাইয়ার মৃত্যু হয়।

ঘটনার দিন শিশু সুমাইয়ার পরিবার অভিযোগ করে বলেন, অস্ত্রোপচারের সময় মেয়েকে ধমক দিয়ে নির্যাতন করেছেন ওই চিকিৎসক। ভুল অপারেশনের ফলে অবস্থা শঙ্কটাপন্ন হলে তাকে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে তড়িঘড়ি হাসপাতাল থেকে বের করে দেন। এ ঘটনার পরপরই হাসপাতালের স্টাফরা পালিয়ে যায় এবং স্থানীয়রা হাসপাতালটিতে তালা ঝুলিয়ে দেয়।

চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমতি ছাড়ায় কীভাবে হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম ও অপারেশন করলেন, এ বিষয়ে গতকাল বুধবার মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালক হুমায়ুন আহমেদের বলেন, ‘আমি একটি আলোচনার মধ্যে আছি। এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারব না।’ ফ্রি হয়ে কথা বলবেন জানিয়ে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

অ্যাপেনডিসাইটিসের অপারেশনের কোন পর্যায়ে শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী পাঠানো হয় এবং কী কারণে শিশুটির মৃত্যু হতে পারে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে ডা. খন্দকার গোলাম মোস্তফা কবীর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের শেষ পর্যায়ে শিশুটির অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে যায়। এ সময় অ্যানেসথেসিয়াসহ যাবতীয় চিকিৎসা দেয়া হলেও শিশুটির অবস্থার উন্নতি হয়নি। ফলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।’ শিশুটির অ্যানেসথেসিয়া দেন কোন চিকিৎসক, জানতে চাইলে তিনি জরুরি সভায় ব্যস্ত থাকার অজুহাত দেখান। এবং পরে কথা বলবেন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

শিশু সুমাইয়া আক্তার চাঁদ মণির মৃত্যুর বিষয়ে চানতে চাইলে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. তাপস কুমার সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মঙ্গলবার হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত অবস্থায় পেয়েছিলেন। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া থানায় অবগত করা হয় গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় ময়নাতদন্ত বোর্ড শিশুটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’

কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) দিপেন্দ্রনাথ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ হয়নি।’

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত ১৯ আগস্ট বিআরএম বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযান চালানো হয়। এসময় হাসপাতালটির অপারেশন থিয়েটার মানসম্পন্ন না থাকা, সিজারিয়ানে একই চিকিৎসক অ্যানেসথেসিয়া দেয়া ও অপারেশন করা এবং ল্যাবের ব্যবস্থাপনা সঠিক না হওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম পাওয়া যায়। ফলে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানাসহ সিলগালা করে বন্ধ করা হয়। এরপর হাসপাতালটি পরিচালনার কোনো অনুমতি পেয়েছে কি না সে সম্পর্কে আমি অবগত নয়।’ বিআরএম বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর বিষয়ে এই চিকিৎসা কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনাটি সম্পর্কে জেনেছি। বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জনকে অবগত করা হয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিভিন্ন অনিয়ম থাকায় সরোজগঞ্জ বাজারের বিআরএম বেসরকারি হাসপাতালটি সিলগালা করে বন্ধ করা হয়। পরবর্তীতে শুধুমাত্র হাসপাতালটির উন্নয়ন কার্যক্রমের স্বার্থে সিলগালা খুলে দেয়া হয়। তবে সেখানে চিকিৎসা কার্যক্রমের কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি, তারা অনুমতি ছাড়ায় চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়েছে।’

হাসপাতালে ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি সম্পর্কে জানার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) ঘটনাটির তদন্ত করবেন। এ ছাড়াও অনুমতি ছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনার দ্বায়ে হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে, ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বুধবার শিশু চাঁদ মণির মরদেহ তার নিজ বাড়ি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার রসুলপুরে নেয়া হয়। বাদ মাগরিব স্থানীয় কবরস্থানে দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়ে বলে সুত্রে জানা গেছে।