০৭:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় পালিয়ে বিয়ের পর পরিবারের চাপে ডিভোর্স দিল কিশোরী স্ত্রী, অত:পর…

প্রায় দেড় মাস আগে পছন্দের নারীকে পালিয়ে বিয়ে করেছিল চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গোপালপুর গ্রামের এসএসসি পরিক্ষার্থী রিফাত হোসেন। উভয়পক্ষের পরিবারের সদস্যরা তাদের বিয়ে মেনে নেয়ার কথা জানালে তার কয়েকদিন পর কিশোরী স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে আসে রিফাত। তবে কয়েকদিন আগে মেয়েকে দেখার নাম করে নিয়ে যায় তার পরিবারের সদস্যরা। এরপরই ঘটে বিপত্তি।

রিফাতের পরিবারের বরাত দিয়ে প্রতিবেশিরা রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে জানান, মেয়েকে জোরপূর্বক আটকে রেখে চাপ প্রয়োগ করে ডিভোর্স দিতে বাধ্য করে তার পরিবারের সদস্যরা। এই ডিভোর্সের কথা শোনার পরই নিজের ফেসবুকে ইঙ্গিতপূর্ণ স্ট্যাস্টাস দিয়ে বিষপান করে রিফাত। স্ট্যাটাস দেখার পর তার বন্ধুরা রিফাতের বাড়ির লোকদের জানালে আশংকাজনক অবস্থায় রিফাতকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। অবস্থার অবনতি হলে নেয়া হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে গতকাল শনিবার ৩ মে রাতে চিকিৎসারত অবস্থায় রিফাত মারা যায়।

নিহত রিফাত হোসেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের গোপালপুরে গ্রামের উত্তরপাড়ার মধুর ছেলে। সে এবার এসএসসি পরিক্ষা দিচ্ছিল। তার স্ত্রীও নবম শ্রেনীর ছাত্রী বলে জানা গেছে।

রিফাতের ফেসবুক আইডি সুত্রে জানা যায়, গত ১৭ মার্চ তারা বিবাহ করে। সব শেষ গত ১ মে রিফাত তার ফেসবুকে তার স্ত্রীর ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখেন, “শূন্যতায় বন্দি আমি তুমি বন্দি খেয়ালে, ভাষাগুলো আটকে আছে নীরবতার দেয়ালে”।

এর আগে গত শুক্রবার ২ মে রাতে নিজ বাড়িতে সবার আগচরে বিষপান করে রিফাত। পরে পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরদিন শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রিফাতকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পরিবারের সদস্যরা। ওইদিন রাতেই সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যায় রিফাত।

স্থানী বাসিন্দা সোহরাব হোসেন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, ছেলে-মেয়ে দুজনই অপ্রাপ্তবয়স্ক। দুজনের বাড়ি একই গ্রামে। দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে মাস দেড়েক আগে পালিয়ে বিয়ে করে তারা। এর কিছুদিন পর রিফাত তার স্ত্রীকে নিয়ে তাদের বাড়িতে আসে। শুনেছিলাম উভয়পক্ষই মেনে নিয়েছিল। তবে কয়েকদিন মেয়েকে দেখার নাম করে তার পরিবারের সদস্যরা নিয়ে আটকে দেয়। শুনেছি মেয়েকে দিয়ে জোরপূর্বক ডিভোর্স দিতে বাধ্য করেছে তার পরিবার। এমনকি মেয়ের পরিবারের সদস্যরা আজও ছেলের পক্ষকে মোবাইলে হুমকি ধামকিও দিয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, তারা পালিয়ে বিয়ে করেছিল। পরে মেয়ে ডিভোর্স দিয়েছে এই সংবাদটা রিফাতের পরিবার গোপন রেখেছিল। গত শুক্রবার রাতে ডিভোর্সের খবর জানতে পেরে ফেসবুকে স্ট্যাস্টাস দিয়ে নিজ শয়নকক্ষে বিষপান করে রিফাত। পরে তার বন্ধুরা ফেসবুকে স্ট্যাস্ট্যাস দেখে তার পরিবারকে জানালে রিফাতকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী নেয়া হয়। সেখানে শনিবার রাতে তার মৃত্যু হয়। আজ রোববার সন্ধার পর তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আসার কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে রিফাতের বাবার নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলে নাম্বারটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) হুমায়ুন কবীর রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, প্রেমে করে বিয়ে করেছি। এক পক্ষ সম্ভবত মানেনি। তাই অভিমানে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসছে পরিবারের সদস্যরা। তবে এ ঘটনায় এখনো কেউ অভিযোগ করেনি।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

ঋণের দায়ে গাভি কেড়ে নিলেন বিএনপি নেতা, বাছুর নিয়ে আদালতে নারগিস

চুয়াডাঙ্গায় পালিয়ে বিয়ের পর পরিবারের চাপে ডিভোর্স দিল কিশোরী স্ত্রী, অত:পর…

প্রকাশের সময় : ০৭:৫৫:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫

প্রায় দেড় মাস আগে পছন্দের নারীকে পালিয়ে বিয়ে করেছিল চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গোপালপুর গ্রামের এসএসসি পরিক্ষার্থী রিফাত হোসেন। উভয়পক্ষের পরিবারের সদস্যরা তাদের বিয়ে মেনে নেয়ার কথা জানালে তার কয়েকদিন পর কিশোরী স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে আসে রিফাত। তবে কয়েকদিন আগে মেয়েকে দেখার নাম করে নিয়ে যায় তার পরিবারের সদস্যরা। এরপরই ঘটে বিপত্তি।

রিফাতের পরিবারের বরাত দিয়ে প্রতিবেশিরা রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে জানান, মেয়েকে জোরপূর্বক আটকে রেখে চাপ প্রয়োগ করে ডিভোর্স দিতে বাধ্য করে তার পরিবারের সদস্যরা। এই ডিভোর্সের কথা শোনার পরই নিজের ফেসবুকে ইঙ্গিতপূর্ণ স্ট্যাস্টাস দিয়ে বিষপান করে রিফাত। স্ট্যাটাস দেখার পর তার বন্ধুরা রিফাতের বাড়ির লোকদের জানালে আশংকাজনক অবস্থায় রিফাতকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। অবস্থার অবনতি হলে নেয়া হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে গতকাল শনিবার ৩ মে রাতে চিকিৎসারত অবস্থায় রিফাত মারা যায়।

নিহত রিফাত হোসেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের গোপালপুরে গ্রামের উত্তরপাড়ার মধুর ছেলে। সে এবার এসএসসি পরিক্ষা দিচ্ছিল। তার স্ত্রীও নবম শ্রেনীর ছাত্রী বলে জানা গেছে।

রিফাতের ফেসবুক আইডি সুত্রে জানা যায়, গত ১৭ মার্চ তারা বিবাহ করে। সব শেষ গত ১ মে রিফাত তার ফেসবুকে তার স্ত্রীর ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখেন, “শূন্যতায় বন্দি আমি তুমি বন্দি খেয়ালে, ভাষাগুলো আটকে আছে নীরবতার দেয়ালে”।

এর আগে গত শুক্রবার ২ মে রাতে নিজ বাড়িতে সবার আগচরে বিষপান করে রিফাত। পরে পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরদিন শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রিফাতকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পরিবারের সদস্যরা। ওইদিন রাতেই সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যায় রিফাত।

স্থানী বাসিন্দা সোহরাব হোসেন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, ছেলে-মেয়ে দুজনই অপ্রাপ্তবয়স্ক। দুজনের বাড়ি একই গ্রামে। দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে মাস দেড়েক আগে পালিয়ে বিয়ে করে তারা। এর কিছুদিন পর রিফাত তার স্ত্রীকে নিয়ে তাদের বাড়িতে আসে। শুনেছিলাম উভয়পক্ষই মেনে নিয়েছিল। তবে কয়েকদিন মেয়েকে দেখার নাম করে তার পরিবারের সদস্যরা নিয়ে আটকে দেয়। শুনেছি মেয়েকে দিয়ে জোরপূর্বক ডিভোর্স দিতে বাধ্য করেছে তার পরিবার। এমনকি মেয়ের পরিবারের সদস্যরা আজও ছেলের পক্ষকে মোবাইলে হুমকি ধামকিও দিয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, তারা পালিয়ে বিয়ে করেছিল। পরে মেয়ে ডিভোর্স দিয়েছে এই সংবাদটা রিফাতের পরিবার গোপন রেখেছিল। গত শুক্রবার রাতে ডিভোর্সের খবর জানতে পেরে ফেসবুকে স্ট্যাস্টাস দিয়ে নিজ শয়নকক্ষে বিষপান করে রিফাত। পরে তার বন্ধুরা ফেসবুকে স্ট্যাস্ট্যাস দেখে তার পরিবারকে জানালে রিফাতকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী নেয়া হয়। সেখানে শনিবার রাতে তার মৃত্যু হয়। আজ রোববার সন্ধার পর তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আসার কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে রিফাতের বাবার নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলে নাম্বারটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) হুমায়ুন কবীর রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, প্রেমে করে বিয়ে করেছি। এক পক্ষ সম্ভবত মানেনি। তাই অভিমানে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসছে পরিবারের সদস্যরা। তবে এ ঘটনায় এখনো কেউ অভিযোগ করেনি।