০৮:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গার রোগীসহ বিভিন্নজনের ৫০ লাখ টাকা আত্মসাত, নারী চিকিৎসককে মারধর

শারমিন সুলতানা নামে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি, ঘর, জমি, ভাতা দেওয়াসহ বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে প্রায় ৫০ জনের কাছে থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। পাওনা টাকা না পেয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করেছেন ভুক্তভোগীরা।

আজ সোমবার (৫ মে) দুপুর ১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেছে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ। ওই নারী একজন এমবিবিএস চিকিৎসক। তিনি বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখেন।

কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) মোশাররফ রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন হোসেন।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার সালমা খাতুন বলেন, ডা. শারমিন সুলতানা সরকারি চাকরি, জমি, ঘরবাড়ি ও ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে আমাদের ৫০ থেকে ৬০ জনের কাছে থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। জমি, ঘরবাড়ি, ভাতা বা চাকরির ব্যবস্থা না করে দিয়ে সেই টাকা আত্মসাৎ করেছে। জমি দেওয়ার কথা বলে আমার কাছে থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছে। আর আমার জামাইয়ের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়েছে। আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে৷ আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, আমরা আমাদের টাকা ফেরত পেতে চাই।

চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনার খাদিজা খাতুন বলেন, জমি দেওয়ার নাম করে আমার কাছ থেকে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা নিয়েছে ডা. শারমিন। প্রলোভন দিয়ে টাকা নিয়েছে সে। এখন টাকাও ফেরত দেয় না, জমিও দেয় না। আমার মতো অনেকের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে এই ডাক্তার। আমরা কুষ্টিয়া এসেছি আমাদের টাকা আদায়ের জন্য। আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই। আমরা এই ডাক্তারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জাহিরা খাতুন বলেন, আমার কেউ নেই। আমি খুব গরিব মানুষ। আমার দুইটা ছাগল ছিল। সেই ছাগল বিক্রি করে শারমিন ডাক্তারকে টাকা দিয়েছে। প্রলোভন দেখিয়ে ঘর দেওয়ার নাম করে আমার কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়েছে। পরে টাকাও দেয় না, ঘরও দেয় না। আমরা তার শাস্তি চাই। আমার টাকা ফেরত চাই।

মেহেরপুরের মুজিবনগর এলাকার সুমি খাতুন বলেন, আমি অসুস্থ হয়ে কুষ্টিয়ায় ডা. শারমিন সুলতানা কাছে এসেছিলাম। তার কাছে চিকিৎসা নিয়েছিলাম। বেশ কয়েক বছরের পরিচয়। হঠাৎ করে ৭-৮ মাস আগে সরকারি চাকরি, জায়গা-জমি, ঘরবাড়ি ও ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে আমাদের কাছে থেকে টাকা নিয়েছেন ডা. শারমিন। তার প্রলোভনে পড়ে আমি, আমার আত্মীয়-স্বজনসহ ৩০ থেকে ৪০ জন তাকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা দিয়েছি। সে আমাদের টাকাও ফেরত দেয় না, চাকরিও দেয় না, জমিও দেয় না, ভাতার ব্যবস্থা করেও দেয় না। তাই আজকে আমরা কুষ্টিয়ায় এসেছি। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই। আমরা গরিব মানুষ, ধারদেনা করে বিভিন্নভাবে কষ্ট করে টাকা ম্যানেজ করে তাকে দিয়েছে। আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডা. শারমিন সুলতানা বলেন, আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নিইনি। তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে। দুপুরে আমি একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাই। এ সময় তারা আমাকে মারধর করে এবং আমার গহনা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, খবর পেয়ে আমরা ওই চিকিৎসককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছি। চিকিৎসকের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন বেশ কয়েকজন নারী। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

ঋণের দায়ে গাভি কেড়ে নিলেন বিএনপি নেতা, বাছুর নিয়ে আদালতে নারগিস

চুয়াডাঙ্গার রোগীসহ বিভিন্নজনের ৫০ লাখ টাকা আত্মসাত, নারী চিকিৎসককে মারধর

প্রকাশের সময় : ০৯:০৩:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫

শারমিন সুলতানা নামে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি, ঘর, জমি, ভাতা দেওয়াসহ বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে প্রায় ৫০ জনের কাছে থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। পাওনা টাকা না পেয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করেছেন ভুক্তভোগীরা।

আজ সোমবার (৫ মে) দুপুর ১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেছে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ। ওই নারী একজন এমবিবিএস চিকিৎসক। তিনি বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখেন।

কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) মোশাররফ রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন হোসেন।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার সালমা খাতুন বলেন, ডা. শারমিন সুলতানা সরকারি চাকরি, জমি, ঘরবাড়ি ও ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে আমাদের ৫০ থেকে ৬০ জনের কাছে থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। জমি, ঘরবাড়ি, ভাতা বা চাকরির ব্যবস্থা না করে দিয়ে সেই টাকা আত্মসাৎ করেছে। জমি দেওয়ার কথা বলে আমার কাছে থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছে। আর আমার জামাইয়ের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়েছে। আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে৷ আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, আমরা আমাদের টাকা ফেরত পেতে চাই।

চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনার খাদিজা খাতুন বলেন, জমি দেওয়ার নাম করে আমার কাছ থেকে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা নিয়েছে ডা. শারমিন। প্রলোভন দিয়ে টাকা নিয়েছে সে। এখন টাকাও ফেরত দেয় না, জমিও দেয় না। আমার মতো অনেকের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে এই ডাক্তার। আমরা কুষ্টিয়া এসেছি আমাদের টাকা আদায়ের জন্য। আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই। আমরা এই ডাক্তারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জাহিরা খাতুন বলেন, আমার কেউ নেই। আমি খুব গরিব মানুষ। আমার দুইটা ছাগল ছিল। সেই ছাগল বিক্রি করে শারমিন ডাক্তারকে টাকা দিয়েছে। প্রলোভন দেখিয়ে ঘর দেওয়ার নাম করে আমার কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়েছে। পরে টাকাও দেয় না, ঘরও দেয় না। আমরা তার শাস্তি চাই। আমার টাকা ফেরত চাই।

মেহেরপুরের মুজিবনগর এলাকার সুমি খাতুন বলেন, আমি অসুস্থ হয়ে কুষ্টিয়ায় ডা. শারমিন সুলতানা কাছে এসেছিলাম। তার কাছে চিকিৎসা নিয়েছিলাম। বেশ কয়েক বছরের পরিচয়। হঠাৎ করে ৭-৮ মাস আগে সরকারি চাকরি, জায়গা-জমি, ঘরবাড়ি ও ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে আমাদের কাছে থেকে টাকা নিয়েছেন ডা. শারমিন। তার প্রলোভনে পড়ে আমি, আমার আত্মীয়-স্বজনসহ ৩০ থেকে ৪০ জন তাকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা দিয়েছি। সে আমাদের টাকাও ফেরত দেয় না, চাকরিও দেয় না, জমিও দেয় না, ভাতার ব্যবস্থা করেও দেয় না। তাই আজকে আমরা কুষ্টিয়ায় এসেছি। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই। আমরা গরিব মানুষ, ধারদেনা করে বিভিন্নভাবে কষ্ট করে টাকা ম্যানেজ করে তাকে দিয়েছে। আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডা. শারমিন সুলতানা বলেন, আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নিইনি। তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে। দুপুরে আমি একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাই। এ সময় তারা আমাকে মারধর করে এবং আমার গহনা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, খবর পেয়ে আমরা ওই চিকিৎসককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছি। চিকিৎসকের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন বেশ কয়েকজন নারী। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।