০৫:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গার মাটিতে কালো আঙুর চাষ করে বাজিমাত কলেজছাত্র শামিমের

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, বিদেশের মাটি ছেড়ে এখন দেশেই আঙুর চাষে ঝুঁকছেন অনেকে। এতে দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। আমরা সব উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দিচ্ছি।

শামিম হোসেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নবগঠিত মাখালডাঙ্গা ইউনিয়নের গাড়াবাড়ীয়া গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে। তিনি দামুড়হুদার আবদুল ওয়াদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজের অর্নাস তৃতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী।

সরজমিনে আঙুর বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বন্যপ্রাণী কিংবা পাখি থেকে রক্ষা পেতে চারপাশে তারকাটা, মশারি ও নেটের জাল দিয়ে আঙুর বাগান ঘেরা রয়েছে। আঙুর গাছের প্রতিটি থোকায় থোকায় আঙুর দোল খাচ্ছে।

তরুণ উদ্যোক্তা কলেজছাত্র শামিম হোসেন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, একদিন ইউটিউবে হঠাৎ বিদেশি ফল কালো আঙুরের প্রতিবেদন আমার সামনে আসে। ভিডিও দেখার পর কৌতুহলবশত আঙুর চাষ করার জন্য উদ্যোগ নিলাম। এবং পরীক্ষামূলকভাবে ৮ কাটা জমিতে আঙুর চাষ শুরু করি। এতে আমি যে পরিমাণ ফলন পেয়েছি তাতে আমি নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা মনে করি। এই ৮ কাটা জমিতে আঙুর চাষ করতে আমার প্রায় ২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। যে পরিমাণ আঙুর ধরেছে তা প্রায় চার লাখ টাকার অধিক আঙুর বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।

কলেজছাত্র শামিম হোসেন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমি আরও দুই বিঘা জমি বাড়িয়েছি। বর্তমানে আঙুরের বাগান আড়াই বিঘা। গত বছর আঙুর লাগিয়েছিলাম এবং এই বছরে যথেষ্ট পরিমাণ ফল পেয়েছি। তার জন্য আমার দেখাদেখি এলাকার অনেক চাষি আমায় দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছে এবং তারা এই নতুন নতুন চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। অনেক চাষি আমার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন ও আঙুরের চারা রোপণ করছেন। আমাদের মতো উদ্যোক্তা যদি বাংলাদেশে থাকে ও সবাই যদি ঘরে ঘরে উদ্যোক্তা তৈরি হয় তাহলে আমাদের আঙুর ফল পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে আমদানি করতে হবে না।

শামিম হোসেন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, এখন পর্যন্ত কৃষি অধিদপ্তর থেকে কোনো প্রকার সহযোগিতা পাইনি। কৃষি অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, তারা যদি আমাদের এই উদ্যোগের পাশে দাঁড়ায় তাহলে ভবিষ্যতে এর থেকে আরো ভালো কিছু করতে পারব।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন উদ্যোক্তা নিজ উদ্যোগে বাইরে থেকে চারা সংগ্রহ করে এখানে বাগান তৈরি করছে। ফলনও পাচ্ছেন। আমরা অনেক বাগানে দেখেছি তার মধ্যেই একজন সফল চাষি শামীম হোসেন যিনি এখনো পর্যন্ত ছাত্র। শখের বর্ষবর্তী হয়ে তিনি প্রথম ৮ কাটা জমিতে এই বাগান তৈরি করে। সফলতা আসায় পরবর্তীতে তিনি আরও বাগান বৃদ্ধি করেছেন। আমাদের এই আঙুর চাষ চুয়াডাঙ্গা সদরের পাশাপাশি জীবননগরে ও ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছে।

উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার আরও বলেন, আমরা আশা করি এই আঙুর চাষ যদি সফল হয় তাহলে বাইরে থেকে আমাদের যে আঙুর আমদানি করতে হয় তা আমদানিকৃত অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে এবং সেটা দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে নিয়ে আসবে। চুয়াডাঙ্গা জেলার মাটি, আবহাওয়া আঙুর চাষের জন্য অনেকটাই উপযোগী। আমরা কৃষি অধিদপ্তর এই মুহূর্তে তাদেরকে কোনো আর্থিক কিংবা অন্য কোনো সহযোগিতা করতে পারছি না। তবে আমরা তাদের সঙ্গে আছি তাদেরকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছি।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

ঋণের দায়ে গাভি কেড়ে নিলেন বিএনপি নেতা, বাছুর নিয়ে আদালতে নারগিস

চুয়াডাঙ্গার মাটিতে কালো আঙুর চাষ করে বাজিমাত কলেজছাত্র শামিমের

প্রকাশের সময় : ০৯:৫৯:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, বিদেশের মাটি ছেড়ে এখন দেশেই আঙুর চাষে ঝুঁকছেন অনেকে। এতে দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব। আমরা সব উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দিচ্ছি।

শামিম হোসেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নবগঠিত মাখালডাঙ্গা ইউনিয়নের গাড়াবাড়ীয়া গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে। তিনি দামুড়হুদার আবদুল ওয়াদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজের অর্নাস তৃতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী।

সরজমিনে আঙুর বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বন্যপ্রাণী কিংবা পাখি থেকে রক্ষা পেতে চারপাশে তারকাটা, মশারি ও নেটের জাল দিয়ে আঙুর বাগান ঘেরা রয়েছে। আঙুর গাছের প্রতিটি থোকায় থোকায় আঙুর দোল খাচ্ছে।

তরুণ উদ্যোক্তা কলেজছাত্র শামিম হোসেন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, একদিন ইউটিউবে হঠাৎ বিদেশি ফল কালো আঙুরের প্রতিবেদন আমার সামনে আসে। ভিডিও দেখার পর কৌতুহলবশত আঙুর চাষ করার জন্য উদ্যোগ নিলাম। এবং পরীক্ষামূলকভাবে ৮ কাটা জমিতে আঙুর চাষ শুরু করি। এতে আমি যে পরিমাণ ফলন পেয়েছি তাতে আমি নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা মনে করি। এই ৮ কাটা জমিতে আঙুর চাষ করতে আমার প্রায় ২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। যে পরিমাণ আঙুর ধরেছে তা প্রায় চার লাখ টাকার অধিক আঙুর বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।

কলেজছাত্র শামিম হোসেন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমি আরও দুই বিঘা জমি বাড়িয়েছি। বর্তমানে আঙুরের বাগান আড়াই বিঘা। গত বছর আঙুর লাগিয়েছিলাম এবং এই বছরে যথেষ্ট পরিমাণ ফল পেয়েছি। তার জন্য আমার দেখাদেখি এলাকার অনেক চাষি আমায় দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছে এবং তারা এই নতুন নতুন চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। অনেক চাষি আমার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন ও আঙুরের চারা রোপণ করছেন। আমাদের মতো উদ্যোক্তা যদি বাংলাদেশে থাকে ও সবাই যদি ঘরে ঘরে উদ্যোক্তা তৈরি হয় তাহলে আমাদের আঙুর ফল পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে আমদানি করতে হবে না।

শামিম হোসেন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, এখন পর্যন্ত কৃষি অধিদপ্তর থেকে কোনো প্রকার সহযোগিতা পাইনি। কৃষি অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, তারা যদি আমাদের এই উদ্যোগের পাশে দাঁড়ায় তাহলে ভবিষ্যতে এর থেকে আরো ভালো কিছু করতে পারব।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন উদ্যোক্তা নিজ উদ্যোগে বাইরে থেকে চারা সংগ্রহ করে এখানে বাগান তৈরি করছে। ফলনও পাচ্ছেন। আমরা অনেক বাগানে দেখেছি তার মধ্যেই একজন সফল চাষি শামীম হোসেন যিনি এখনো পর্যন্ত ছাত্র। শখের বর্ষবর্তী হয়ে তিনি প্রথম ৮ কাটা জমিতে এই বাগান তৈরি করে। সফলতা আসায় পরবর্তীতে তিনি আরও বাগান বৃদ্ধি করেছেন। আমাদের এই আঙুর চাষ চুয়াডাঙ্গা সদরের পাশাপাশি জীবননগরে ও ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছে।

উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার আরও বলেন, আমরা আশা করি এই আঙুর চাষ যদি সফল হয় তাহলে বাইরে থেকে আমাদের যে আঙুর আমদানি করতে হয় তা আমদানিকৃত অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে এবং সেটা দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে নিয়ে আসবে। চুয়াডাঙ্গা জেলার মাটি, আবহাওয়া আঙুর চাষের জন্য অনেকটাই উপযোগী। আমরা কৃষি অধিদপ্তর এই মুহূর্তে তাদেরকে কোনো আর্থিক কিংবা অন্য কোনো সহযোগিতা করতে পারছি না। তবে আমরা তাদের সঙ্গে আছি তাদেরকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছি।