০৫:০১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
চিকিৎসায় অবহেলা ও অপচিকিৎসার অভিযোগ

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. তন্ময়ের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

রোববার (২০ অক্টোবর) বেলা ১২টায় দিকে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে ওই মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে অপচিকিৎসায় মৃত্যু ঝুকিতে থাকা রোগীর পরিবারসহ ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বাজে আচরণ, অপচিকিৎসা, ক্লিনিক মুখী হতে বাধ্য করাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগীরা অংশ নেন।

মানববন্ধনে মহিমা বেগম (৪৫) নামের এক ভুল চিকিৎসার শিকার হওয়া ভুক্তভোগীর ছেলে ইমরান হুসাইন বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বর মাসের ৩ তারিখে আমার মায়ের ডান হাতের তালুতে বাঁশের একটি অংশ ফুটে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দেখায়, সেখানে উপস্থিত ছিলেন ডা. এহসানুল হক তন্ময়। তিনি আমার মায়ের হাত দেখে বলেন, হাতের ভেতরে কিছু নেই। আমি তারপর বললাম যে এক্সা-রে ছাড়া কিভাবে বলছেন কিছু নেই? জবাবে তিনি বলেন, তুমি ডাক্তার না আমি? এ বলে শুধু ওষুধ লিখে দেন। সাথে আরোও বলেন, যদি খুব বেশি সমস্যা হয় দুইদিন পরে চেম্বারে দেখাতে। এরপর ওষুধ খাওয়ার পরেও মায়ের হাতের অবস্থার অবনতি হলে আমি তৎক্ষণাৎ মাকে তার চেম্বারে নিয়ে যায়। এসময় তিনি হাত দেখে বলেন, ভেতরে ইনফেকশন হয়েছে, বাঁশের অংশ আছে অপারেশন করা লাগবে। তারপর আমি বলি, আমার আম্মা হার্টের রোগী। তার হার্টের ভাল্ব অপারেশন করা। অপারেশন করার পরে তিনি কোন ওষুধ খেতে পারেন না, ওষুধ খেলে তার অবস্থা খারাপ হয়ে যায় এবং হার্টের সমস্যা বেড়ে যায়। তিনি আমার কথা শোনার পরে বলেন, কোন সমস্যা নেই। হাতের ছোট অপারেশন করলেই ঠিক হয়ে যাবে। আমরা ডাক্তারের কথামতো অপারেশন করতে রাজি হই এবং ৫ তারিখে আম্মার অপারেশন করা হয়। কিন্তু অপারেশনের তিনদিন পর তার হাটের সমস্যা দেখা দেয়, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দেখালে তাকে সাথে সাথে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করে দেয়। অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না যার কারণে সেইখানে তিনি ছয় দিন সিসিইউতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাসায় আসেন। কিন্তু হাতের অপারেশনের জায়গাটা ঠিক না হয়ে ১৩ অক্টোবর রাতে ফুলে যায়। আজকে বেশি ফোলা দেখা দিলে হাত দিয়ে সামান্য চাপ দিতেই অপারেশনের স্থান থেকে রক্ত-পুজ এবং একটি বাঁশের চোচ বের হয় যেটা বের করার জন্য অপারেশন করা হয়েছিল। তাহলে অপারেশন করে তিনি কি বের করলেন হাতের ভেতর থেকে? নাকি অপারেশন এর নামে কাটাকাটি করলেন শুধু টাকা নেওয়ার জন্য? এমনকি আজকে তার সাথে কথা বললে তিনি তার ভুল স্বীকার করেননি। আমরা সাধারণ মানুষ কাদের ওপর ভরসা করে হাসপাতালে যাব?’

আরেক ভুক্তভোগীর স্বামী মোসারফ হোসেন বলেন, ‘আমার স্ত্রী আখি খাতুন পাইলস অপারেশনে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছে। ডা. তন্ময় অপারেশন করার পরে আমার স্ত্রী আরোও অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে রাজশাহী নিয়ে গেলে সেখানের চিকিৎসক জানান পাইলস এর অপারেশনই করা হয়নি৷ বরং অপারেশনের ফলে পাইল্স এর অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে৷ ভারতে নিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসা করাতে হবে। দুই বছর ধরে আমার স্ত্রী ডা. তন্ময়ের অপচিকিৎসার শিকার হয়ে ভুগছেন।’

মুরাদ হোসেন নামে আরেক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার স্ত্রীর সিজারিয়ান অপারেশন করেছিলেন ডা. তন্ময়। অপারেশনের পরও পেটের মধ্যে সুতা অবশিষ্ট ছিলো। দীর্ঘদিন আমরা এই ডাক্তারের কারণে ভুগছি। এই ডাক্তার মানুষকে মানুষ মনে করে না। প্রচণ্ড বাজে ব্যবহার। প্রচণ্ড রাগী। মনে হয় কোনো কিছুতে তিনি আসক্ত। সকলের সাথে খারাপ ব্যবহার তার অন্যতম একটি স্বভাব।’

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, ভুক্তভোগী সোহান উদ্দীন, রাখি বেগম, মুরাদ হোসেন প্রমুখ। মানববন্ধনে প্রায় অর্ধশতাধীক ভুক্তভোগী অংশ নেন। মানববন্ধনে অংশ নেয়া কয়েকজন বক্তব্যে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সময় মতো হাসপাতালে না এসে ক্লিনিকে রোগী দেখা এবং হাসপাতালে আসা রোগীকে সরাসরি ক্লিনিকে দেখানোর জন্য চাপ দেওয়াসহ স্বেচ্ছাচারীতার অভিযোগ তোলেন।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

দর্শনা থানা পুলিশের অভিযানে ৬ কেজি গাজাসহ দুজন আটক

চিকিৎসায় অবহেলা ও অপচিকিৎসার অভিযোগ

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. তন্ময়ের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

প্রকাশের সময় : ০৪:১৮:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

রোববার (২০ অক্টোবর) বেলা ১২টায় দিকে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে ওই মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে অপচিকিৎসায় মৃত্যু ঝুকিতে থাকা রোগীর পরিবারসহ ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বাজে আচরণ, অপচিকিৎসা, ক্লিনিক মুখী হতে বাধ্য করাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগীরা অংশ নেন।

মানববন্ধনে মহিমা বেগম (৪৫) নামের এক ভুল চিকিৎসার শিকার হওয়া ভুক্তভোগীর ছেলে ইমরান হুসাইন বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বর মাসের ৩ তারিখে আমার মায়ের ডান হাতের তালুতে বাঁশের একটি অংশ ফুটে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দেখায়, সেখানে উপস্থিত ছিলেন ডা. এহসানুল হক তন্ময়। তিনি আমার মায়ের হাত দেখে বলেন, হাতের ভেতরে কিছু নেই। আমি তারপর বললাম যে এক্সা-রে ছাড়া কিভাবে বলছেন কিছু নেই? জবাবে তিনি বলেন, তুমি ডাক্তার না আমি? এ বলে শুধু ওষুধ লিখে দেন। সাথে আরোও বলেন, যদি খুব বেশি সমস্যা হয় দুইদিন পরে চেম্বারে দেখাতে। এরপর ওষুধ খাওয়ার পরেও মায়ের হাতের অবস্থার অবনতি হলে আমি তৎক্ষণাৎ মাকে তার চেম্বারে নিয়ে যায়। এসময় তিনি হাত দেখে বলেন, ভেতরে ইনফেকশন হয়েছে, বাঁশের অংশ আছে অপারেশন করা লাগবে। তারপর আমি বলি, আমার আম্মা হার্টের রোগী। তার হার্টের ভাল্ব অপারেশন করা। অপারেশন করার পরে তিনি কোন ওষুধ খেতে পারেন না, ওষুধ খেলে তার অবস্থা খারাপ হয়ে যায় এবং হার্টের সমস্যা বেড়ে যায়। তিনি আমার কথা শোনার পরে বলেন, কোন সমস্যা নেই। হাতের ছোট অপারেশন করলেই ঠিক হয়ে যাবে। আমরা ডাক্তারের কথামতো অপারেশন করতে রাজি হই এবং ৫ তারিখে আম্মার অপারেশন করা হয়। কিন্তু অপারেশনের তিনদিন পর তার হাটের সমস্যা দেখা দেয়, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দেখালে তাকে সাথে সাথে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করে দেয়। অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না যার কারণে সেইখানে তিনি ছয় দিন সিসিইউতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাসায় আসেন। কিন্তু হাতের অপারেশনের জায়গাটা ঠিক না হয়ে ১৩ অক্টোবর রাতে ফুলে যায়। আজকে বেশি ফোলা দেখা দিলে হাত দিয়ে সামান্য চাপ দিতেই অপারেশনের স্থান থেকে রক্ত-পুজ এবং একটি বাঁশের চোচ বের হয় যেটা বের করার জন্য অপারেশন করা হয়েছিল। তাহলে অপারেশন করে তিনি কি বের করলেন হাতের ভেতর থেকে? নাকি অপারেশন এর নামে কাটাকাটি করলেন শুধু টাকা নেওয়ার জন্য? এমনকি আজকে তার সাথে কথা বললে তিনি তার ভুল স্বীকার করেননি। আমরা সাধারণ মানুষ কাদের ওপর ভরসা করে হাসপাতালে যাব?’

আরেক ভুক্তভোগীর স্বামী মোসারফ হোসেন বলেন, ‘আমার স্ত্রী আখি খাতুন পাইলস অপারেশনে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছে। ডা. তন্ময় অপারেশন করার পরে আমার স্ত্রী আরোও অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে রাজশাহী নিয়ে গেলে সেখানের চিকিৎসক জানান পাইলস এর অপারেশনই করা হয়নি৷ বরং অপারেশনের ফলে পাইল্স এর অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে৷ ভারতে নিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসা করাতে হবে। দুই বছর ধরে আমার স্ত্রী ডা. তন্ময়ের অপচিকিৎসার শিকার হয়ে ভুগছেন।’

মুরাদ হোসেন নামে আরেক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার স্ত্রীর সিজারিয়ান অপারেশন করেছিলেন ডা. তন্ময়। অপারেশনের পরও পেটের মধ্যে সুতা অবশিষ্ট ছিলো। দীর্ঘদিন আমরা এই ডাক্তারের কারণে ভুগছি। এই ডাক্তার মানুষকে মানুষ মনে করে না। প্রচণ্ড বাজে ব্যবহার। প্রচণ্ড রাগী। মনে হয় কোনো কিছুতে তিনি আসক্ত। সকলের সাথে খারাপ ব্যবহার তার অন্যতম একটি স্বভাব।’

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, ভুক্তভোগী সোহান উদ্দীন, রাখি বেগম, মুরাদ হোসেন প্রমুখ। মানববন্ধনে প্রায় অর্ধশতাধীক ভুক্তভোগী অংশ নেন। মানববন্ধনে অংশ নেয়া কয়েকজন বক্তব্যে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সময় মতো হাসপাতালে না এসে ক্লিনিকে রোগী দেখা এবং হাসপাতালে আসা রোগীকে সরাসরি ক্লিনিকে দেখানোর জন্য চাপ দেওয়াসহ স্বেচ্ছাচারীতার অভিযোগ তোলেন।