১২:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রেডিও চুয়াডাঙ্গায় সংবাদ প্রকাশ

চুয়াডাঙ্গার সেই শিশু জিহাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করলেন জেলা প্রশাসক

চুয়াডাঙ্গা সদরের দীননাথপুরের ভ্যানগাড়ি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিশু জিহাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন জেলা প্রশাসক।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) নিজ কার্যালয়ে শিশু জিহাদের বাবা তাহাজ্জেল মিয়ার হাতে নগত ১০ হাজার টাকা তুলে দেন জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা। এ সময় শিশু জিহাদও উপস্থিত ছিল।

এর আগে, এর আগে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় যাত্রীবেশে শিশু জিহাদের ভ্যানটি ছিনিয়ে নেয় এক দুষ্কৃতকারী। ঋণের টাকায় কেনা একমাত্র উপার্জনের সম্বল ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি হারিয়ে পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বাবা অ্যাজমা রোগী হওয়ায় ১২ বছর বয়সী শিশু জিহাদের উপার্জনেই চলত পরিবারটি। একদিন ভ্যান না চালালে খাবার জোটে না তাদের। ভ্যান ছিনতাইয়ের পর থেকে বাড়িতে রান্নাবান্না হয়নি বলে জানা গেছে।

ঘরে খাবার না থাকায় শুক্রবার মসজিদ থেকে পাওয়া খিচুড়ি খেয়েই সেদিন পার করেছিলেন পরিবারটি।

এ নিয়ে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) অনলাইন নিউজ পোর্টাল রেডিও চুয়াডাঙ্গায় সংবাদ প্রকাশ হলে মানবিক ব্যক্তিরা এগিয়ে আসেন। গরিব দুস্থদের নিয়ে কাজ করা ইসমাইল হোসেন পরিবারটি পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে সেন। তিনি শনিবার পুরো এক মাসের বাজার নিয়ে হাজির হন শিশু জিহাদের বাড়িতে৷ এছাড়া এক নারী উদ্যোক্তাও নগত টাকাসহ প্রয়োজনীয় বাজারঘাট করে দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নবগঠিত মাখালডাঙ্গা ইউনিয়নের দীননাথপুর গ্রামের পোস্ট অফিস পাড়ায় শিশু জিহাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা হাফিজা খাতুন অসুস্থ হয়ে বিছানায় শোয়া। কিডনি, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগে ভুগছেন দীর্ঘদিন যাবত। বাবা তাহাজ্জেল মিয়ারও বয়স হয়েছে। আর ভ্যান চালাতে পারেন না তিনি।

বৃদ্ধ তাহাজ্জেল মিয়া রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমি অ্যাজমা রোগী। ভ্যান চালাতে কষ্ট হয়। তাই একটি এনজিও থেকে আট মাস আগে ৫০ হাজার টাকা লোন তুলে জিহাদকে ভ্যান কিনে দিয়েছিলাম। এরপর থেকেই ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন হত তা দিয়ে টেনেটুনে চলত সংসার। আমার স্ত্রী দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ হয়ে বিছানায়। তার চিকিৎসার জন্য ওষুধ লাগে। ঘরে এখন চাল কেনারও টাকা নেই বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধ তাহাজ্জেল মিয়া।

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে স্থানীয় বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। এরপর সে আর পড়েনি। এখন আমার এই ছেলেটাই সম্বল। সে আমাদের দেখাশোনা করে। যাত্রীবেশে ছেলের নিকট থেকে ভ্যান নিয়ে গেছে। এনজিও থেকে লোন তুলে ভ্যান কিনে দিয়েছিলাম। ঘরে চাল কেনার টাকাই নেই, লোনের টাকা পরিশোধ করব কীভাবে! এই কথা বলতে বলতে অঝোরে কাঁদতে থাকেন তাহাজ্জেল মিয়া।

শিশু জিহাদের মা হাফিজা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমার ছেলে প্রতিদিন যা উপার্জন করে তা দিয়েই টেনেটুনে চলে সংসার। আমি দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ হয়ে বিছানায়। কয়েক দিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি এসেছি। এই ঘরটা ছাড়া কিছু নেই আমাদের। আমার স্বামীও অসুস্থ। আমার এই ছোট ছেলেটা ভ্যান চালিয়ে দেখাশোনা করে। এখন আমরা কী করব ভেবে পাচ্ছি না।

শিশু জিহাদ রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলে, এক ব্যক্তি গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে আমার ভ্যানে উঠে শহরের বড়বাজারে নিয়ে যেতে বলেন। সেখান থেকে দরদাম করে আলমডাঙ্গাতে নিয়ে যাই। আলমডাঙ্গা স্টেশন সংলগ্ন স্থানে গেলে আমাকে বলে পাশের দোকান থেকে একটি বস্তা নিয়ে আসতে। পরে এসে দেখি আমার ভ্যান নেই। দিনে ২০০-৩০০ টাকা যা উপার্জন হত তা আমার অসুস্থ বাবা-মাকে দিতাম। এনজিও থেকে লোন নিয়ে ভ্যানটি কেনা ছিল।

One thought on “চুয়াডাঙ্গার সেই শিশু জিহাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করলেন জেলা প্রশাসক

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

নারী সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবিতে চুয়াডাঙ্গায় হেফাজতের বিক্ষোভ সমাবেশ

রেডিও চুয়াডাঙ্গায় সংবাদ প্রকাশ

চুয়াডাঙ্গার সেই শিশু জিহাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করলেন জেলা প্রশাসক

প্রকাশের সময় : ০৮:২০:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গা সদরের দীননাথপুরের ভ্যানগাড়ি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিশু জিহাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন জেলা প্রশাসক।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) নিজ কার্যালয়ে শিশু জিহাদের বাবা তাহাজ্জেল মিয়ার হাতে নগত ১০ হাজার টাকা তুলে দেন জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা। এ সময় শিশু জিহাদও উপস্থিত ছিল।

এর আগে, এর আগে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় যাত্রীবেশে শিশু জিহাদের ভ্যানটি ছিনিয়ে নেয় এক দুষ্কৃতকারী। ঋণের টাকায় কেনা একমাত্র উপার্জনের সম্বল ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি হারিয়ে পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বাবা অ্যাজমা রোগী হওয়ায় ১২ বছর বয়সী শিশু জিহাদের উপার্জনেই চলত পরিবারটি। একদিন ভ্যান না চালালে খাবার জোটে না তাদের। ভ্যান ছিনতাইয়ের পর থেকে বাড়িতে রান্নাবান্না হয়নি বলে জানা গেছে।

ঘরে খাবার না থাকায় শুক্রবার মসজিদ থেকে পাওয়া খিচুড়ি খেয়েই সেদিন পার করেছিলেন পরিবারটি।

এ নিয়ে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) অনলাইন নিউজ পোর্টাল রেডিও চুয়াডাঙ্গায় সংবাদ প্রকাশ হলে মানবিক ব্যক্তিরা এগিয়ে আসেন। গরিব দুস্থদের নিয়ে কাজ করা ইসমাইল হোসেন পরিবারটি পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে সেন। তিনি শনিবার পুরো এক মাসের বাজার নিয়ে হাজির হন শিশু জিহাদের বাড়িতে৷ এছাড়া এক নারী উদ্যোক্তাও নগত টাকাসহ প্রয়োজনীয় বাজারঘাট করে দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নবগঠিত মাখালডাঙ্গা ইউনিয়নের দীননাথপুর গ্রামের পোস্ট অফিস পাড়ায় শিশু জিহাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা হাফিজা খাতুন অসুস্থ হয়ে বিছানায় শোয়া। কিডনি, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগে ভুগছেন দীর্ঘদিন যাবত। বাবা তাহাজ্জেল মিয়ারও বয়স হয়েছে। আর ভ্যান চালাতে পারেন না তিনি।

বৃদ্ধ তাহাজ্জেল মিয়া রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমি অ্যাজমা রোগী। ভ্যান চালাতে কষ্ট হয়। তাই একটি এনজিও থেকে আট মাস আগে ৫০ হাজার টাকা লোন তুলে জিহাদকে ভ্যান কিনে দিয়েছিলাম। এরপর থেকেই ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন হত তা দিয়ে টেনেটুনে চলত সংসার। আমার স্ত্রী দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ হয়ে বিছানায়। তার চিকিৎসার জন্য ওষুধ লাগে। ঘরে এখন চাল কেনারও টাকা নেই বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধ তাহাজ্জেল মিয়া।

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে স্থানীয় বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। এরপর সে আর পড়েনি। এখন আমার এই ছেলেটাই সম্বল। সে আমাদের দেখাশোনা করে। যাত্রীবেশে ছেলের নিকট থেকে ভ্যান নিয়ে গেছে। এনজিও থেকে লোন তুলে ভ্যান কিনে দিয়েছিলাম। ঘরে চাল কেনার টাকাই নেই, লোনের টাকা পরিশোধ করব কীভাবে! এই কথা বলতে বলতে অঝোরে কাঁদতে থাকেন তাহাজ্জেল মিয়া।

শিশু জিহাদের মা হাফিজা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমার ছেলে প্রতিদিন যা উপার্জন করে তা দিয়েই টেনেটুনে চলে সংসার। আমি দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ হয়ে বিছানায়। কয়েক দিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি এসেছি। এই ঘরটা ছাড়া কিছু নেই আমাদের। আমার স্বামীও অসুস্থ। আমার এই ছোট ছেলেটা ভ্যান চালিয়ে দেখাশোনা করে। এখন আমরা কী করব ভেবে পাচ্ছি না।

শিশু জিহাদ রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলে, এক ব্যক্তি গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে আমার ভ্যানে উঠে শহরের বড়বাজারে নিয়ে যেতে বলেন। সেখান থেকে দরদাম করে আলমডাঙ্গাতে নিয়ে যাই। আলমডাঙ্গা স্টেশন সংলগ্ন স্থানে গেলে আমাকে বলে পাশের দোকান থেকে একটি বস্তা নিয়ে আসতে। পরে এসে দেখি আমার ভ্যান নেই। দিনে ২০০-৩০০ টাকা যা উপার্জন হত তা আমার অসুস্থ বাবা-মাকে দিতাম। এনজিও থেকে লোন নিয়ে ভ্যানটি কেনা ছিল।