০৪:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় কৌশলে শিশু জিহাদের ভ্যান নিয়ে চম্পট : অঝোরে কাঁদছেন অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা-মা

ঘরে বৃদ্ধ বাবা-মা দুজনই অসুস্থতায় ভুগছেন। একমাত্র সন্তান ১২ বছর বয়সী শিশু জিহাদ ভ্যান চালিয়ে সংসারের হাল ধরেছিল৷ ঋণের টাকায় কেনা একমাত্র উপার্জনের সম্বল ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি কৌশলে ছিনিয়ে নেই দুষ্কৃতিকারী। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েন শিশু জিহাদ সহ তার বৃদ্ধ বাবা-মা। কিছুতেই কান্না থামছেনা তাদের। ওষুধ ও চাল কেনার টাকাও নেই তাদের। এখন কি করবে তারা এ নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।

গতকাল বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় যাত্রীবেশে শিশু জিহাদকে মারধর করে ভ্যানটি ছিনিয়ে নেই দুষ্কৃতিকারী।

আজ বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নবগঠিত মাখালডাঙ্গা ইউনিয়নের দীননাথপুর গ্রামের পোস্ট অফিস পাড়ায় শিশু জিহাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা হাফিজা খাতুন অসুস্থ হয়ে বিছানাগত। কিডনি, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগে ভুগছেন দীর্ঘদিন যাবত। বাবা তাহাজ্জেল মিয়ার বয়স হয়েছে। আর ভ্যান চালাতে পারেন না তিনি।

বৃদ্ধ তাহাজ্জেল মিয়া রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমি অ্যাজমা রোগী। ভ্যান চালাতে কষ্ট হয় আমার। তাই একটি এনজিও থেকে ৮ মাস আগে ৫০ হাজার টাকা লোন তুলে জিহাদকে ভ্যান কিনে দিয়েছিলাম৷ এরপর থেকেই ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন হতো তা দিয়েই টেনেটুনে চলতো সংসার। আমার স্ত্রী দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ হয়ে বিছানাগত। তার চিকিৎসার জন্য ওষুধ লাগে। এমনকি ঘরে এখন চাল কেনার টাকাও নেই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে স্থানীয় বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেনি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। এরপর সে আর পড়েনি। এখন আমার এই ছেলেটাই সম্ব্‌ল। সে আমাকে দেখাশোনা করে। যাত্রীবেশে ছেলের নিকট থেকে ভ্যান নিয়ে গেছে। এনজিও থেকে লোন তুলে ভ্যান কিনে দিয়েছিলাম। ঘরে চাল কেনার টাকা নেই, লোনের টাকা পরিশোধ করব কিভাবে এই কথা বলে আবারো অঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি। সকলের সহযোগীতা চান এই পরিবার।

শিশু জিহাদের মা হাফিজা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমার ছেলে প্রতিদিন যা উপার্জন করে সেটা দিয়েই টেনেটুনে চলে সংসার। আমি দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ হয়ে বিছানাগত। কয়েকদিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি এসেছি। আমার এই ঘরটুকু ছাড়া কোন কিছুই নেই আমাদের। আমার স্বামীও অসুস্থ। আমার এই ছোট ছেলেটা ভ্যান চালিয়ে দেখাশোনা করে। এখন আমরা কি করব ভেবে পাচ্ছিনা।

শিশু জিহাদ রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে জানায়, বুধবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে আমার ভ্যান উঠে শহরের বড়বাজারে নিয়ে যেতে বলেন। সেখান থেকে ভাড়া দরদাম করে আলমডাঙ্গাতে নিয়ে যায়। আলমডাঙ্গা স্টেশন সংলগ্নস্থানে আমাকে বলে একটি বস্তা নিয়ে আসতে পাশের দোকান থেকে। পরে এসে দেখি আমার ভ্যান নেই।

শিশু জিহাদ জানায়, দিনে ৩০০-৪০০ টাকা যা উপার্জন হতো আমার অসুস্থ বাবা-মাকে দিতাম। এনজিও থেকে লোন নিয়ে ভ্যানটি কেনা ছিল বলে জানায় জিহাদ

আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) শেখ গণি মিয়া রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই।

2 thoughts on “চুয়াডাঙ্গায় কৌশলে শিশু জিহাদের ভ্যান নিয়ে চম্পট : অঝোরে কাঁদছেন অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা-মা

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

ফের বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন সিদ্দিকের প্রাক্তন স্ত্রী

চুয়াডাঙ্গায় কৌশলে শিশু জিহাদের ভ্যান নিয়ে চম্পট : অঝোরে কাঁদছেন অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা-মা

প্রকাশের সময় : ০৮:৫২:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঘরে বৃদ্ধ বাবা-মা দুজনই অসুস্থতায় ভুগছেন। একমাত্র সন্তান ১২ বছর বয়সী শিশু জিহাদ ভ্যান চালিয়ে সংসারের হাল ধরেছিল৷ ঋণের টাকায় কেনা একমাত্র উপার্জনের সম্বল ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি কৌশলে ছিনিয়ে নেই দুষ্কৃতিকারী। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েন শিশু জিহাদ সহ তার বৃদ্ধ বাবা-মা। কিছুতেই কান্না থামছেনা তাদের। ওষুধ ও চাল কেনার টাকাও নেই তাদের। এখন কি করবে তারা এ নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।

গতকাল বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় যাত্রীবেশে শিশু জিহাদকে মারধর করে ভ্যানটি ছিনিয়ে নেই দুষ্কৃতিকারী।

আজ বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নবগঠিত মাখালডাঙ্গা ইউনিয়নের দীননাথপুর গ্রামের পোস্ট অফিস পাড়ায় শিশু জিহাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা হাফিজা খাতুন অসুস্থ হয়ে বিছানাগত। কিডনি, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগে ভুগছেন দীর্ঘদিন যাবত। বাবা তাহাজ্জেল মিয়ার বয়স হয়েছে। আর ভ্যান চালাতে পারেন না তিনি।

বৃদ্ধ তাহাজ্জেল মিয়া রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমি অ্যাজমা রোগী। ভ্যান চালাতে কষ্ট হয় আমার। তাই একটি এনজিও থেকে ৮ মাস আগে ৫০ হাজার টাকা লোন তুলে জিহাদকে ভ্যান কিনে দিয়েছিলাম৷ এরপর থেকেই ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন হতো তা দিয়েই টেনেটুনে চলতো সংসার। আমার স্ত্রী দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ হয়ে বিছানাগত। তার চিকিৎসার জন্য ওষুধ লাগে। এমনকি ঘরে এখন চাল কেনার টাকাও নেই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে স্থানীয় বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেনি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। এরপর সে আর পড়েনি। এখন আমার এই ছেলেটাই সম্ব্‌ল। সে আমাকে দেখাশোনা করে। যাত্রীবেশে ছেলের নিকট থেকে ভ্যান নিয়ে গেছে। এনজিও থেকে লোন তুলে ভ্যান কিনে দিয়েছিলাম। ঘরে চাল কেনার টাকা নেই, লোনের টাকা পরিশোধ করব কিভাবে এই কথা বলে আবারো অঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি। সকলের সহযোগীতা চান এই পরিবার।

শিশু জিহাদের মা হাফিজা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমার ছেলে প্রতিদিন যা উপার্জন করে সেটা দিয়েই টেনেটুনে চলে সংসার। আমি দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ হয়ে বিছানাগত। কয়েকদিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি এসেছি। আমার এই ঘরটুকু ছাড়া কোন কিছুই নেই আমাদের। আমার স্বামীও অসুস্থ। আমার এই ছোট ছেলেটা ভ্যান চালিয়ে দেখাশোনা করে। এখন আমরা কি করব ভেবে পাচ্ছিনা।

শিশু জিহাদ রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে জানায়, বুধবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে আমার ভ্যান উঠে শহরের বড়বাজারে নিয়ে যেতে বলেন। সেখান থেকে ভাড়া দরদাম করে আলমডাঙ্গাতে নিয়ে যায়। আলমডাঙ্গা স্টেশন সংলগ্নস্থানে আমাকে বলে একটি বস্তা নিয়ে আসতে পাশের দোকান থেকে। পরে এসে দেখি আমার ভ্যান নেই।

শিশু জিহাদ জানায়, দিনে ৩০০-৪০০ টাকা যা উপার্জন হতো আমার অসুস্থ বাবা-মাকে দিতাম। এনজিও থেকে লোন নিয়ে ভ্যানটি কেনা ছিল বলে জানায় জিহাদ

আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) শেখ গণি মিয়া রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই।