চুয়াডাঙ্গা সদরের দীননাথপুর গ্রামের ১২ বছর বয়সী শিশু জিহাদের একমাত্র উপার্জনের সম্বল ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি কৌশল যাত্রীবেশে আলমডাঙ্গা থেকে ছিনিয়ে নেয় এক দুষ্কৃতকারী। এরপর থেকে বাড়ির রান্নাঘরে চুলায় আগুন জ্বলেনি। পরিবারের সদস্যরা খাবারের অভাবে দিন কাটিয়েছেন। ঘরে খাবার না থাকায় শুক্রবার মসজিদ থেকে পাওয়া খিচুড়ি খেয়েই সেদিন পার করেছিলেন পরিবারটি।
এ নিয়ে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) অনলাইন নিউজ পোর্টাল রেডিও চুয়াডাঙ্গায় সংবাদ প্রকাশ হলে মানবিক ব্যক্তিরা এগিয়ে আসেন। গরিব দুস্থদের নিয়ে কাজ করা ইসমাইল হোসেন পরিবারটি পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে সেন। তিনি গতকাল শনিবার পুরো এক মাসের বাজার নিয়ে হাজির হন শিশু জিহাদের বাড়িতে৷ এছাড়া এক নারী উদ্যোক্তাও নগত টাকাসহ প্রয়োজনীয় বাজারঘাট করে দিয়েছেন।
এর আগে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় যাত্রীবেশে শিশু জিহাদের ভ্যানটি ছিনিয়ে নেয় এক দুষ্কৃতকারী। ঋণের টাকায় কেনা একমাত্র উপার্জনের সম্বল ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি হারিয়ে পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বাবা অ্যাজমা রোগী হওয়ায় ১২ বছর বয়সী শিশু জিহাদের উপার্জনেই চলতো পরিবারটি। একদিন ভ্যান না চালালে খাবার জোটে না তাদের। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বৃদ্ধ তাহাজ্জেল মিয়া ও তার স্ত্রী হাফিজা খাতুন। ভ্যান ছিনতাইয়ের পর থেকে বাড়িতে রান্নাবান্না হয়নি বলে জানা গেছে।
এদিকে গতকাল শনিবার রাতে বৃদ্ধ তাহাজ্জেল মিয়ার সঙ্গে করা হয় রেডিও চুয়াডাঙ্গার প্রতিবেদকের সঙ্গে। তিনি বলেন, শনিবার দুজন চাল থেকে শুরু করে বাজার করে দিয়ে গেছেন। কিছু নগত টাকা দিয়েও সহযোগিতা করেছেন। তবে সমিতির লোন নিয়ে চিন্তিত। একটি ভ্যান পেলে সেখান থেকে উপার্জন করে লোন পরিশোধ করতে পারবেন তিনি।
ইসমাইল হোসেন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, অনলাইন রেডিও চুয়াডাঙ্গায় ভ্যান ছিনতাইয়ের সংবাদটি আমার নজরে আসে। এরপরই আমি শিশু জিহাদের বাড়িতে গিয়ে খোজ খবরসহ বাজার দিয়ে সহযোগিতা
করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমি দেখেছি, শিশু জিহাদের মা অসুস্থ হয়ে বিছানাগত৷ বাবা বৃদ্ধ তাহাজ্জেল অসুস্থ, তিনি আর ভ্যান চালাতে পারেন না। তাই বাধ্য হয়েই শিশু জিহাদকে লোন তুলে ভ্যানটি কিনে দিয়েছিলেন তারা বাবা। আর সেই ভ্যানটি যাত্রীবেশে এক ব্যক্তি ছিনিয়ে নিয়েছে৷ সমাজের উচ্চবিত্তরা এই অসহায় পরিবারটির পাশে দাড়ানোর আহবান জানান তিনি।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নবগঠিত মাখালডাঙ্গা ইউনিয়নের দীননাথপুর গ্রামের পোস্ট অফিস পাড়ায় শিশু জিহাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা হাফিজা খাতুন অসুস্থ হয়ে বিছানায় শোয়া। কিডনি, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগে ভুগছেন দীর্ঘদিন যাবত। বাবা তাহাজ্জেল মিয়ারও বয়স হয়েছে। যে কারণে আর ভ্যান চালাতে পারেন না তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বৃদ্ধ তাহাজ্জেল রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেছিলেন, আমি অ্যাজমা রোগী। ভ্যান চালাতে কষ্ট হয়। তাই একটি এনজিও থেকে আট মাস আগে ৫০ হাজার টাকা লোন তুলে জিহাদকে ভ্যান কিনে দিয়েছিলাম। এরপর থেকেই ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন হতো তা দিয়ে টেনেটুনে চলত সংসার। আমার স্ত্রী দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ হয়ে বিছানায়। কিডনি, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগে ভুগছেন দীর্ঘদিন যাবত। কিছুই খেতে পারেন না। স্যালাইন পানি পান করেই কাটিয়ে দিচ্ছে। তার চিকিৎসার জন্য ওষুধ লাগে। ঘরে এখন চাল কেনারও টাকা নেই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই বৃদ্ধ। এ নিয়ে রেডিও চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ হলে মানবিক ব্যক্তিরা এগিয়ে আসেন।
এএইচ
2 thoughts on “চুয়াডাঙ্গায় ভ্যান ছিনতাইয়ের পর শিশু জিহাদের বাড়িতে জ্বলেনি চুলা, এগিয়ে এলেন মানবিক ব্যক্তিরা”