১১:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জিলহজ্জ মাস শুরুর আগে কাদের জন্য নখ-চুল কাটা সুন্নত?

  • ধর্ম ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০৬:১০:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
  • ৮৫ views

ইসলামী শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ আহকাম হলো কোরবানি। আর কোরবানির ইচ্ছা যাঁদের থাকে, তাঁদের জন্য জিলহজ মাসের কিছু সুন্নত রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে চুল, দাড়ি ও নখ না কাটা।

এ বিষয়ে সহিহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যখন তোমরা জিলহজ মাসের চাঁদ দেখো এবং তোমাদের কেউ যদি কোরবানি করার নিয়ত করে, তবে সে যেন তাঁর চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে (কোরবানি না দেওয়া পর্যন্ত)।

এই হাদিস অনুযায়ী আলেমগণ বলেন, জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনে অর্থাৎ চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানি করার আগ পর্যন্ত কোরবানিদাতার জন্য চুল, দাড়ি ও নখ না কাটা উত্তম। তবে এটি হারাম নয়, বরং সুন্নত বা মুস্তহাব।

অনেকেই মনে করেন, এই সময় নখ বা চুল কাটলে গুনাহ হবে। কিন্তু কুরআন হাদিস অনুযায়ী আলেমরা বলেছেন, এটি হারাম নয়, বরং সুন্নতের প্রতি আনুগত্য। বিশেষত হানাফি মাজহাব অনুযায়ী, এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদা—অর্থাৎ পালনে সওয়াব আছে, না করলেও গুনাহ হবে না। অন্যদিকে ইমাম মালিক, ইমাম আহমদ ও ইমাম শাফি (রহ.)-এর মতে, এই সময় চুল ও নখ না কাটা প্রায় ফরজের কাছাকাছি গুরুত্ব বহন করে।

কোরবানিদাতার করণীয় ও বর্জনীয়

জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন ইসলামে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। এ সময়ে নেক আমল, রোজা, তাসবিহ-তাহমিদ, কোরআন তেলাওয়াতের পাশাপাশি কোরবানির প্রস্তুতি নেওয়াও ইবাদতের অংশ।
করণীয়:

*কোরবানির পশু নির্বাচনে যত্নবান হওয়া

*নফল রোজা রাখা (বিশেষত আরাফার দিন)

*তাসবিহ, তাহলিল, তাকবিরে তাশরিক পড়া

*নিজে এবং পরিবারের জন্য ঈদের প্রস্তুতি নেওয়া

বর্জনীয় (যারা কোরবানি দেবেন):

*চাঁদ দেখার পর চুল, দাড়ি ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকা

*কোরবানির আগে আত্মম্ভরিতা বা অপচয় এড়িয়ে চলা

*যাঁরা কোরবানি দিচ্ছেন না, তাঁরাও চাইলে এই আমল করে সওয়াব অর্জন করতে পারেন।

যখন কোরবানি সম্পন্ন হয়ে যাবে, তখন চুল-নখ কাটায় আর কোনো নিষেধ নেই। বরং আলেমরা বলেন, এই কাটা চুল ও নখও ইবাদতের অংশ।

সর্বোপরি: কোরবানি শুধু পশু জবাইয়ের নাম নয়, বরং আত্মত্যাগ, আনুগত্য ও আল্লাহর নির্দেশের প্রতি আন্তরিকতা প্রকাশের প্রতীক। সেই জায়গা থেকে জিলহজের প্রথম দশ দিন চুল ও নখ না কাটা সুন্নতের প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। এটি কোনো জোরপূর্বক বাধ্যবাধকতা নয়, বরং একটি আত্মিক শৃঙ্খলা, যা মুসলমানকে কোরবানির মহাত্ম্য উপলব্ধি করতে সহায়তা করে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীর কবজি কেটে দিলেন বিএনপির কর্মী

জিলহজ্জ মাস শুরুর আগে কাদের জন্য নখ-চুল কাটা সুন্নত?

প্রকাশের সময় : ০৬:১০:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

ইসলামী শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ আহকাম হলো কোরবানি। আর কোরবানির ইচ্ছা যাঁদের থাকে, তাঁদের জন্য জিলহজ মাসের কিছু সুন্নত রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে চুল, দাড়ি ও নখ না কাটা।

এ বিষয়ে সহিহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যখন তোমরা জিলহজ মাসের চাঁদ দেখো এবং তোমাদের কেউ যদি কোরবানি করার নিয়ত করে, তবে সে যেন তাঁর চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে (কোরবানি না দেওয়া পর্যন্ত)।

এই হাদিস অনুযায়ী আলেমগণ বলেন, জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনে অর্থাৎ চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানি করার আগ পর্যন্ত কোরবানিদাতার জন্য চুল, দাড়ি ও নখ না কাটা উত্তম। তবে এটি হারাম নয়, বরং সুন্নত বা মুস্তহাব।

অনেকেই মনে করেন, এই সময় নখ বা চুল কাটলে গুনাহ হবে। কিন্তু কুরআন হাদিস অনুযায়ী আলেমরা বলেছেন, এটি হারাম নয়, বরং সুন্নতের প্রতি আনুগত্য। বিশেষত হানাফি মাজহাব অনুযায়ী, এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদা—অর্থাৎ পালনে সওয়াব আছে, না করলেও গুনাহ হবে না। অন্যদিকে ইমাম মালিক, ইমাম আহমদ ও ইমাম শাফি (রহ.)-এর মতে, এই সময় চুল ও নখ না কাটা প্রায় ফরজের কাছাকাছি গুরুত্ব বহন করে।

কোরবানিদাতার করণীয় ও বর্জনীয়

জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন ইসলামে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। এ সময়ে নেক আমল, রোজা, তাসবিহ-তাহমিদ, কোরআন তেলাওয়াতের পাশাপাশি কোরবানির প্রস্তুতি নেওয়াও ইবাদতের অংশ।
করণীয়:

*কোরবানির পশু নির্বাচনে যত্নবান হওয়া

*নফল রোজা রাখা (বিশেষত আরাফার দিন)

*তাসবিহ, তাহলিল, তাকবিরে তাশরিক পড়া

*নিজে এবং পরিবারের জন্য ঈদের প্রস্তুতি নেওয়া

বর্জনীয় (যারা কোরবানি দেবেন):

*চাঁদ দেখার পর চুল, দাড়ি ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকা

*কোরবানির আগে আত্মম্ভরিতা বা অপচয় এড়িয়ে চলা

*যাঁরা কোরবানি দিচ্ছেন না, তাঁরাও চাইলে এই আমল করে সওয়াব অর্জন করতে পারেন।

যখন কোরবানি সম্পন্ন হয়ে যাবে, তখন চুল-নখ কাটায় আর কোনো নিষেধ নেই। বরং আলেমরা বলেন, এই কাটা চুল ও নখও ইবাদতের অংশ।

সর্বোপরি: কোরবানি শুধু পশু জবাইয়ের নাম নয়, বরং আত্মত্যাগ, আনুগত্য ও আল্লাহর নির্দেশের প্রতি আন্তরিকতা প্রকাশের প্রতীক। সেই জায়গা থেকে জিলহজের প্রথম দশ দিন চুল ও নখ না কাটা সুন্নতের প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। এটি কোনো জোরপূর্বক বাধ্যবাধকতা নয়, বরং একটি আত্মিক শৃঙ্খলা, যা মুসলমানকে কোরবানির মহাত্ম্য উপলব্ধি করতে সহায়তা করে।