০৪:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
দেশব্যাপী জুয়ালারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও চুয়াডাঙ্গায় খোলা

বাজুস নেতা চুয়াডাঙ্গার রিপনুলের গ্রেপ্তারের খবরে চুয়াডাঙ্গায় মিষ্টি বিতরণ

চুয়াডাঙ্গা শহরতলীর দৌলতদিয়ার এলাকার বাসিন্দা ও স্বর্ণ চোরাকারবারি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সহ-সভাপতি মো. রিপনুল হাসানকে গ্রেপ্তার করায় মিষ্টি বিতরণ করেছে স্থানীয়রা।

বুধবার (২৮ মে) রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রাণকেন্দ্র বড় বাজারের শহিদ হাসান চত্বরে স্থানীয়দের উদ্যোগে এই মিষ্টি বিতরণের আয়োজন করা হয়।

রিপনুল হাসান চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের দৌলাতদিয়াড় গ্রামের মাঝেরপাড়া আব্দুল হান্নানের ছেলে। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে এক ব্যক্তি নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা রয়েছে। এছাড়াও, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে সংগঠিত করতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগসহ কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে অবৈধ অর্থের যোগান দেবার অভিযোগসহ কমপক্ষে চারটি মামলা রয়েছে।

মিষ্টি বিতরণকালে স্থানীয়রা বলেন, স্বর্ণ চোরাকারবারি রিপনুল হাসান দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে কাজ করে এসেছে। মাদক, জুয়াসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ বহু পুরনো। তারা জানান, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের সময় সাধারণ মানুষের ওপর নিপীড়ন ও লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে গুলি চালিয়েছিল এই রিপন। অনেকেই তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগও তুলেছেন।

চুয়াডাঙ্গার স্থানীয়রা বলেন, ‘সারা দেশে জুয়েলারি ব্যবসা বন্ধ থাকবে কি না জানি না, তবে চোরাকারবারি রিপনের জন্য চুয়াডাঙ্গায় কোনো ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ রাখবে না। কেউ যদি আওয়ামী লীগের এই দোসরের জন্য দোকান বন্ধ রাখে, স্থানীয়রা তা ভালো চোখে দেখবে না, বরং প্রতিবাদ জানাবে।’

স্থানীয় বাসিন্দা মোমিন বলেন, রিপনের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো শেষ নেই। অবৈধ যত কাজ আছে সব কাজেই সে পারদর্শী। স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের সময়ে হঠাৎ করেই সে কোটিপতি হয়ে যায়। অবৈধ পথে বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসাসহ রাজকীয় জীবনযাপন করছিল। চুয়াডাঙ্গায় সে জুয়া, স্বর্ণ চোরাচালান আর মাদকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। তার কারণে বহু তরুণ বিপথে গেছে। তার গ্রেপ্তারে এলাকাবাসী স্বস্তি পেয়েছে। এই আনন্দে আমরা সাধারণ মানুষ মিষ্টি বিতরণ করছি।’

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, দেশব্যাপী জুয়েলারি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে বলে জেনেছি। তবে চুয়াডাঙ্গাতে যদি কোন জুয়েলারী ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ রাখে তাইলে জনতাকে নিয়ে প্রতিবাদ করা হবে।

এর আগে, বুধবার (২৮ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজধানীর স্বর্ণ ব্যবসাকেন্দ্র তাঁতীবাজারে অবস্থিত নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে রিপনুল হাসানকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই ঘটনাকে ঘিরে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

বাজুসের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গুলজার আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায় এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সহ-সভাপতি রিপনুল হাসানকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করা গভীর উদ্বেগজনক এবং তা সুপরিকল্পিত হয়রানির অংশ। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানায়।

এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশে সব জুয়েলারি দোকান বন্ধ থাকবে এবং প্রয়োজনে আরও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

এদিকে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই চুয়াডাঙ্গা শহরে প্রতিটি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান খোলা থাকতে দেখা গেছে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

চুয়াডাঙ্গায় মেছো বিড়াল সংরক্ষণে সচেতনতামূলক আলোচনা সভা

দেশব্যাপী জুয়ালারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও চুয়াডাঙ্গায় খোলা

বাজুস নেতা চুয়াডাঙ্গার রিপনুলের গ্রেপ্তারের খবরে চুয়াডাঙ্গায় মিষ্টি বিতরণ

প্রকাশের সময় : ১১:৪৮:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা শহরতলীর দৌলতদিয়ার এলাকার বাসিন্দা ও স্বর্ণ চোরাকারবারি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সহ-সভাপতি মো. রিপনুল হাসানকে গ্রেপ্তার করায় মিষ্টি বিতরণ করেছে স্থানীয়রা।

বুধবার (২৮ মে) রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রাণকেন্দ্র বড় বাজারের শহিদ হাসান চত্বরে স্থানীয়দের উদ্যোগে এই মিষ্টি বিতরণের আয়োজন করা হয়।

রিপনুল হাসান চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের দৌলাতদিয়াড় গ্রামের মাঝেরপাড়া আব্দুল হান্নানের ছেলে। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে এক ব্যক্তি নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা রয়েছে। এছাড়াও, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে সংগঠিত করতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগসহ কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে অবৈধ অর্থের যোগান দেবার অভিযোগসহ কমপক্ষে চারটি মামলা রয়েছে।

মিষ্টি বিতরণকালে স্থানীয়রা বলেন, স্বর্ণ চোরাকারবারি রিপনুল হাসান দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে কাজ করে এসেছে। মাদক, জুয়াসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ বহু পুরনো। তারা জানান, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের সময় সাধারণ মানুষের ওপর নিপীড়ন ও লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে গুলি চালিয়েছিল এই রিপন। অনেকেই তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগও তুলেছেন।

চুয়াডাঙ্গার স্থানীয়রা বলেন, ‘সারা দেশে জুয়েলারি ব্যবসা বন্ধ থাকবে কি না জানি না, তবে চোরাকারবারি রিপনের জন্য চুয়াডাঙ্গায় কোনো ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ রাখবে না। কেউ যদি আওয়ামী লীগের এই দোসরের জন্য দোকান বন্ধ রাখে, স্থানীয়রা তা ভালো চোখে দেখবে না, বরং প্রতিবাদ জানাবে।’

স্থানীয় বাসিন্দা মোমিন বলেন, রিপনের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো শেষ নেই। অবৈধ যত কাজ আছে সব কাজেই সে পারদর্শী। স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের সময়ে হঠাৎ করেই সে কোটিপতি হয়ে যায়। অবৈধ পথে বাড়ি, গাড়ি, ব্যবসাসহ রাজকীয় জীবনযাপন করছিল। চুয়াডাঙ্গায় সে জুয়া, স্বর্ণ চোরাচালান আর মাদকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। তার কারণে বহু তরুণ বিপথে গেছে। তার গ্রেপ্তারে এলাকাবাসী স্বস্তি পেয়েছে। এই আনন্দে আমরা সাধারণ মানুষ মিষ্টি বিতরণ করছি।’

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, দেশব্যাপী জুয়েলারি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে বলে জেনেছি। তবে চুয়াডাঙ্গাতে যদি কোন জুয়েলারী ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ রাখে তাইলে জনতাকে নিয়ে প্রতিবাদ করা হবে।

এর আগে, বুধবার (২৮ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজধানীর স্বর্ণ ব্যবসাকেন্দ্র তাঁতীবাজারে অবস্থিত নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে রিপনুল হাসানকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই ঘটনাকে ঘিরে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

বাজুসের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গুলজার আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায় এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সহ-সভাপতি রিপনুল হাসানকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করা গভীর উদ্বেগজনক এবং তা সুপরিকল্পিত হয়রানির অংশ। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানায়।

এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশে সব জুয়েলারি দোকান বন্ধ থাকবে এবং প্রয়োজনে আরও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

এদিকে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই চুয়াডাঙ্গা শহরে প্রতিটি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান খোলা থাকতে দেখা গেছে।