বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী ‘মেছো বিড়াল’ সংরক্ষণে চুয়াডাঙ্গায় অনুষ্ঠিত হয়েছে বন বিভাগ ও বাংলাদেশ ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড নেচার ইনিশিয়েটিভের যৌথ আলোচনা সভা ও প্রচারণা কর্মসূচি।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে তিনটায় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, কৃষকের অকৃত্রিম বন্ধু এই প্রাণী সংরক্ষণে সচেতনতা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বড় সলুয়া নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজের প্রাণিবিদ্যা প্রভাষক ও বাংলাদেশ ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড নেচার ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আহসান হাবীব শিপলু। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সামাজিক বন বিভাগ, কুষ্টিয়ার সহকারী বন সংরক্ষক রফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা রকিক উদ্দিন, তিতুদহ পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক মাহমুদুল হাসান ও হুমায়ুন কবির।
প্রধান অতিথি রফিকুল ইসলাম বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা বন্যপ্রাণীর ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত। এখনো এই অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মেছো বিড়াল দেখা যায়। কিন্তু সচেতনতার অভাব ও ভ্রান্ত ধারণার কারণে মাঝে মাঝে এরা মানুষের হাতে নিধনের শিকার হয়। তিনি বলেন, বন বিভাগ ও বাংলাদেশ ওয়াইল্ড লাইফ ইনিশিয়েটিভ একসঙ্গে কাজ করছে এই প্রাণীটিকে রক্ষা করতে। প্রতিটি প্রাণীই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, এ বিষয়টি মানুষকে বোঝানোই এখন মূল কাজ।

বিশেষ অতিথি রকিক উদ্দিন বলেন, মেছো বিড়াল কৃষকের প্রকৃত বন্ধু। এরা মাঠে মাঠে ইঁদুরসহ ক্ষতিকর প্রাণী খেয়ে কৃষকের ফসল রক্ষা করে। তিনি বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ অনুযায়ী মেছো বিড়াল একটি সংরক্ষিত প্রাণী। কেউ এই প্রাণীকে হত্যা, আটক, বহন বা পাচার করলে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
সভাপতি আহসান হাবীব শিপলু বলেন, আল্লাহ প্রত্যেকটি প্রাণীকে মানুষের কল্যাণে সৃষ্টি করেছেন। একটি মেছো বিড়াল তার দশ বছরের জীবদ্দশায় প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকার ফসলের ক্ষতি থেকে কৃষককে রক্ষা করে। তিনি বলেন, “আমরা চাই, চুয়াডাঙ্গার মেছো বিড়ালসহ প্রতিটি বন্যপ্রাণী মানুষের সহাবস্থানে বেঁচে থাকুক। এর জন্য বন বিভাগের পাশাপাশি প্রতিটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে।”
আলোচনা শেষে তিতুদহ বাজার এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় মেছো বিড়াল সংরক্ষণে প্রচারণা ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি। এতে স্থানীয় জনগণকে এই প্রাণীর উপকারিতা সম্পর্কে অবহিত করা হয় এবং হত্যা বা নির্যাতন না করার আহ্বান জানানো হয়।

সভায় তিতুদহ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত বাংলাদেশ ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড নেচার ইনিশিয়েটিভের স্বেচ্ছাসেবীরা, বন বিভাগের কর্মচারী, স্থানীয় সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন)-এর লাল তালিকাভুক্ত বিপন্ন প্রাণী মেছো বিড়াল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে, বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনা অঞ্চলে বিস্তৃত। এই প্রাণী নিধন রোধ ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মেছো বিড়ালের সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে পারলেই, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা ও কৃষকের ক্ষতি প্রতিরোধে বড় অবদান রাখা সম্ভব, এমনটাই মনে করেন আজকের এই আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা।
এএইচ
নিজস্ব প্রতিবেদক 





















