আজ পবিত্র শবে বরাত। আজ দিবাগত রাত সমগ্র মুসলিম উম্মাহ‘র জন্য বরকতময় একটি রাত। হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি ‘শবে বরাত’ নামে পরিচিত। এই রজনীতে হযরত মুহাম্মদ সা. কি কি বিশেষ আমল করতেন? কোন আমলটিই বা সবচেয়ে পছন্দের ছিলো তার? চলুন রাসূল সা. এর সহিহ হাদিস দ্বারা জেনে নেওয়া যাক।
শবে বরাত কথাটি মূলত ফারসি ভাষা থেকে এসেছে। শব মানে রাত আর বরাত মানে মুক্তি; অর্থাৎ শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। ‘শবে বরাত’-এর আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারকাত’।
হাদীস শরীফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী বলা হয়েছে। আরবি দিনপঞ্জিকার হিসেবে আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি সেই শবে বরাত পালিত হবে পুরো বিশ্বজুড়ে। বিশেষ এই রাতের ফজিলত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
আলী বিন আবু তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত সুনানে ইবনে মাজাহ এর ১৩৮৮ নাম্বার হাদিসে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘অর্ধ শাবানের রাত তোমরা ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোজা রাখো।
কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে এসে বলেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোনো রিজিক অন্বেষণকারী আছো কি? আমি তাকে রিজিক প্রদান করবো। আছো কি কোনো রোগাক্রান্ত? আমি তাকে আরোগ্য দান করবো। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে তাদের ডাকতে থাকেন।’
আর মুফাসসিরিনগণের ভাষ্য অনুযায়ী, শাবান মাসের ১৪ তারিখের এ সম্পূর্ণ দিনটি ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটাতেন মহানবী (সা.)। পুরো রাত জেগে ইবাদত করতেন তিনি। রাতভর মশগুল থাকতেন নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল পাঠ, তওবা-ইস্তেগফার ইত্যাদি আমলে। এসবই ছিলো বিশেষ এই রাতে রাসূল সা. এর বিশেষ আমল।
হজরত আয়েশা (রা.) দ্বারা বর্ণিত আরেকটি সহিহ হাদিস দ্বারা এই রাত ও রাতের আমল সম্পর্কে জানা যায়া হযরত আয়েশা রা. বলেন, একবার রাসুল (সা.) রাতে নামাজে দাঁড়িয়ে এত দীর্ঘ সময় সেজদায় রইলেন যে, আমার ধারণা হলো, হয়তো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। তখন আমি তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিয়ে দেখলাম। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়েশা, ওহে হুমাইরা! তোমার কি আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না হে আল্লাহর রাসুল! আপনার দীর্ঘ সেজদায় আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত অর্থাৎ শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত। আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন, বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই’
শবে বরাতে নবীজি (সা.) রাতভর ইবাদত করতেন এবং দিনের বেলা রোজা রাখতেন।
উম্মে সালমা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে শাবান ও রমজান ছাড়া দুই মাস একাধারে রোজা রাখতে দেখিনি। আর শবে বরাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করা।
কারণ, বরকতময় এই রাতে আল্লাহ তায়ালা প্রথম আকাশে এসে বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন। তাদের গোনাহগুলো মাফ করেন।
হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুল (সা.) বললেন, ‘যখন অর্ধ শাবানের রাত আসে তখন আল্লাহ তায়ালা প্রথম আকাশে অবস্থান করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া অন্যদের ক্ষমা করে দেন।’
বিশেষ এই রাতে মহানবী সা. বেশি বেশি ইস্তেগফারের আমল করতেন।
এএইচ