০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভিডিও করার সময় উলটো দিক থেকে আসা ট্রেনে কাটা পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নিহত

ভিডিও করার সময় উলটো দিক থেকে আসা ট্রেনে কাটা পড়ে ইশতিয়াক আহমেদ রাফিদ (২০) নামে এক ফটোগ্রাফারের মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২ মে) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

রাফিদ ঢাকার খিলক্ষেতে খালার বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন। রাফিদের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়ন আজগবি গ্রামে। তার বাবার নাম রেজাউল করিম।

রেজাউল করিম পেশায় একজন যুব উন্নয়ন অফিসের কর্মকর্তা। তার একমাত্র ছেলে সন্তান রাফিদ। তার ছোট একটি বোন রয়েছে। সে স্থানীয় একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। রাফিদের শিবগঞ্জ সরকারি মডেল হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে ভর্তি হন একাদশ শ্রেণিতে। এই কলেজে এইচএসসি পাস করে তিনি রাজশাহী কলেজে স্নাতকে ভর্তি হন। তিনি কলেজটির বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

রাফিদের খালাতো ভাই ঢাকার কুর্মিটোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, রাফিদ মোবাইল ফোনে টঙ্গী থেকে কমলপুরগামী একটি ট্রেনের ভিডিও ধারণ করছিলেন। সে তখন অন্য লাইনে ছিল। কিন্তু এই লাইনে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আরেক ট্রেনে কাটা পড়েন রাফিদ। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ভাইয়া (রাফিদ) ভিডিও করার সময় আমাকে ট্রেনের খেয়াল রাখতে বলেছিলেন। ভিডিও করার সময় ট্রেন চলে আসলে চিৎকার করে বলছি, কিন্তু সে শুনতে পায়নি। এরপর ট্রেনের নিচে পড়ে মারা যান।

এ বিষয়ে ঢাকা রেলওয়ে থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস বলেন, এ ঘটনায় থানায় ইউডি মামলা হবে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

রাফিদের গ্রামের বাল্যবন্ধু ফাইয়াজ রহমান তনয় বলেন, রাফিদ ২০২০ সাল থেকে শখের বসে ফটোগ্রাফি করেন। প্রথম অবস্থায় মোবাইল ফোন দিয়ে শুরু হয় সখের ফটোগ্রাফি। পরবর্তীতে সে ক্যামেরাও কিনেছিল। ছোট বেলা থেকে আঁকাআঁকি কিংবা নতুন কিছুর প্রতিভা ছিল রাফিদের। রাফিদ তার এসএসসির পর ২০২০ সাল থেকেই ফটোগ্রাফির কাজ শুরু করে শখ থেকে। মূলত সে স্ট্রেট ফটোগ্রাফিতে আসক্ত ছিল। প্রকৃতির সঙ্গে জীবন যাত্রার যে সম্পর্ক সেটা তার ছবিতে ফুটে উঠত।

তিনি আরও বলেন, রাফিদের মরদেহ ঘটনাস্থল থেকে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন কাকরাইলে নেওয়া হয়। সেখানে থেকে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিবগঞ্জের গ্রামে। রাফিদের মৃত্যুতে তার গ্রামের বাড়িতে শোকের ছাঁয়া নেমে এসেছে।

রাফিদ শখের বসে করা ফটোগ্রাফি থেকে পেয়েছেন পুরস্কারও। ‘আমার চোখে পথশিশু’ ক্যাটাগরিতে জুম বাংলাদেশ ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর পঞ্চম স্থান অর্জন করে তার ছবি। তার মৃত্যুতে সহপাঠী ও বন্ধুরা আবেবগঘন পোস্ট করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

তাদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান সান তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন ‘ছবির-নেশায়-হারাইলাম-সবি ইসতিয়াক আহমেদ’ ইসতিয়াক আহমেদ আল্লাহ তোমাকে জান্নাত নসিব করুক, আমাদের হাস্যোজ্জ্বল বন্ধু ছিলো সে, ভাষা নাই কিছু বলার।‘

সাদিয়া আখতার লেখেন, ‘প্রথম থেকে পড়ে তারপর যখন এই লাইনে আসি, কত সুন্দর মনোমুগ্ধকর ছবি তোলেন… ভাবছিলাম হয়তো বিশেষ কিছু করেছেন, কিন্তু এ লাইনের পর এই খবরটা অপ্রত্যাশিত ছিল আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুক।’

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

চুয়াডাঙ্গায় রেললাইনের উপর ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বৃদ্ধ, ট্রেনের ধাক্কায় মৃ ত্যু 

ভিডিও করার সময় উলটো দিক থেকে আসা ট্রেনে কাটা পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নিহত

প্রকাশের সময় : ১১:৩৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫

ভিডিও করার সময় উলটো দিক থেকে আসা ট্রেনে কাটা পড়ে ইশতিয়াক আহমেদ রাফিদ (২০) নামে এক ফটোগ্রাফারের মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২ মে) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

রাফিদ ঢাকার খিলক্ষেতে খালার বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন। রাফিদের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়ন আজগবি গ্রামে। তার বাবার নাম রেজাউল করিম।

রেজাউল করিম পেশায় একজন যুব উন্নয়ন অফিসের কর্মকর্তা। তার একমাত্র ছেলে সন্তান রাফিদ। তার ছোট একটি বোন রয়েছে। সে স্থানীয় একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। রাফিদের শিবগঞ্জ সরকারি মডেল হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে ভর্তি হন একাদশ শ্রেণিতে। এই কলেজে এইচএসসি পাস করে তিনি রাজশাহী কলেজে স্নাতকে ভর্তি হন। তিনি কলেজটির বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

রাফিদের খালাতো ভাই ঢাকার কুর্মিটোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, রাফিদ মোবাইল ফোনে টঙ্গী থেকে কমলপুরগামী একটি ট্রেনের ভিডিও ধারণ করছিলেন। সে তখন অন্য লাইনে ছিল। কিন্তু এই লাইনে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আরেক ট্রেনে কাটা পড়েন রাফিদ। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ভাইয়া (রাফিদ) ভিডিও করার সময় আমাকে ট্রেনের খেয়াল রাখতে বলেছিলেন। ভিডিও করার সময় ট্রেন চলে আসলে চিৎকার করে বলছি, কিন্তু সে শুনতে পায়নি। এরপর ট্রেনের নিচে পড়ে মারা যান।

এ বিষয়ে ঢাকা রেলওয়ে থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস বলেন, এ ঘটনায় থানায় ইউডি মামলা হবে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

রাফিদের গ্রামের বাল্যবন্ধু ফাইয়াজ রহমান তনয় বলেন, রাফিদ ২০২০ সাল থেকে শখের বসে ফটোগ্রাফি করেন। প্রথম অবস্থায় মোবাইল ফোন দিয়ে শুরু হয় সখের ফটোগ্রাফি। পরবর্তীতে সে ক্যামেরাও কিনেছিল। ছোট বেলা থেকে আঁকাআঁকি কিংবা নতুন কিছুর প্রতিভা ছিল রাফিদের। রাফিদ তার এসএসসির পর ২০২০ সাল থেকেই ফটোগ্রাফির কাজ শুরু করে শখ থেকে। মূলত সে স্ট্রেট ফটোগ্রাফিতে আসক্ত ছিল। প্রকৃতির সঙ্গে জীবন যাত্রার যে সম্পর্ক সেটা তার ছবিতে ফুটে উঠত।

তিনি আরও বলেন, রাফিদের মরদেহ ঘটনাস্থল থেকে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন কাকরাইলে নেওয়া হয়। সেখানে থেকে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিবগঞ্জের গ্রামে। রাফিদের মৃত্যুতে তার গ্রামের বাড়িতে শোকের ছাঁয়া নেমে এসেছে।

রাফিদ শখের বসে করা ফটোগ্রাফি থেকে পেয়েছেন পুরস্কারও। ‘আমার চোখে পথশিশু’ ক্যাটাগরিতে জুম বাংলাদেশ ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর পঞ্চম স্থান অর্জন করে তার ছবি। তার মৃত্যুতে সহপাঠী ও বন্ধুরা আবেবগঘন পোস্ট করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

তাদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান সান তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন ‘ছবির-নেশায়-হারাইলাম-সবি ইসতিয়াক আহমেদ’ ইসতিয়াক আহমেদ আল্লাহ তোমাকে জান্নাত নসিব করুক, আমাদের হাস্যোজ্জ্বল বন্ধু ছিলো সে, ভাষা নাই কিছু বলার।‘

সাদিয়া আখতার লেখেন, ‘প্রথম থেকে পড়ে তারপর যখন এই লাইনে আসি, কত সুন্দর মনোমুগ্ধকর ছবি তোলেন… ভাবছিলাম হয়তো বিশেষ কিছু করেছেন, কিন্তু এ লাইনের পর এই খবরটা অপ্রত্যাশিত ছিল আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুক।’