০৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ দরদাতার

শিয়ালমারী পশুহাটের কালেকশন পকেটে ভরার কৌশল নিচ্ছে

দীর্ঘ ১৬ বছর পর টেন্ডার হলেও সেই খাস কালেকশনের দিকেই এগোচ্ছে চুয়াডাঙ্গার শিয়ালমারী পশুর হাট। সর্বোচ্চ দরদাতা প্রয়োজনীয় অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আদালতে সময় চেয়ে রিট করেছেন। আর দ্বিতীয় দরদাতাকে হুমকি ধামকি দেয়ায় তিনি রাজি নন হাটের ইজারা নিতে।

এ পরিস্থিতি আগের কতিপয় প্রভাবশালীর দেখানো পথেই হাঁটছে শিয়ালমারী পশুহাটের কালেকশন। এতে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের যোগসাজশে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল পশুর হাটের কালেকশন পকেটে ভরার কৌশল নিচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (০৮ এপ্রিল) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব জানান হাটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা জীবননগরের মুন্সী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মুন্সী মাহবুবুর রহমান বাবু।

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার পোস্ট অফিসপাড়ার মুন্সী মাহবুবুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, জীবননগর উপজেলার সর্ববৃহৎ পশুর হাট শিয়ালমারী পশুরহাট। এই হাট প্রতি বৃহস্পতিবারে বসে। ২০০৯ সালে শেষ বারের মতো পশুর হাটটির ইজারা বন্দোবস্ত দেয় সরকার। এরপর থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা হাটের টাকা তুলে নামমাত্র টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়। দীর্ঘ ১৬ বছর পর হাটটির ইজারা বন্দোবস্ত দেয়ার সময় এ বছর আবারও পুরোনো কৌশলেই ফিরছে এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী।

তিনি আরও বলেন, এ বছরের ২২ জানুয়ারি উপজেলার সর্ববৃহৎ শিয়ালমারী পশুরহাটের ইজারা বিক্তপ্তি প্রকাশ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল আমিন। ১১ ফেব্রুয়ারি দরপত্র জমা দেয়া হয়। এতে উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামের ইছাহক ম-লের ছেলে আলতাফ হোসেন ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা মূল্য দিয়ে সর্ব্বোচ দরদাতা নির্বাচিত হন। ১৮ ফেব্রুয়ারি তাকে ইজারা বরাদ্দপত্র দেয়া হয়। কিন্তু ইজারাদার পুরোপুরি টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে সময় চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন করেন। আবেদন না মঞ্জুর হলে ইজারাদার আফতাফ হোসেন হাইকোর্টের ডিভিশনে একটি রিট করেন। এই পরিস্থিতি দ্বিতীয় দরদাতা হিসেবে ৩ কোটি ৩০ লাখ ৩০ হাজার টাকায় মুন্সী ট্রেডার্সকে শিয়ালমারী পশুরহাটটি প্রদানের ইজারাপত্র দেয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার। কিন্তু মুন্সী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মুন্সী মাহবুবুর রহমান ইজারা নিতে অস্বীকৃতি জানান।

এ ব্যাপারে মুন্সী মাহবুবুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, যেখানে এক পক্ষ মামলা করেছেন, সেই মামলার হাট আমি নিতে চাই না। এ অবস্থায় আমার ব্যাংক ড্রাফট করা জামানত ৯১ লাখ টাকা ফেরত চেয়ে আবেদন করি। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন কোনো কর্ণপাত করছে না। এ অবস্থায় জেলা প্রশাসকের কাছে ধরনা দিয়েই আমরা ব্যাংক ড্রাফট ফেরত পাচ্ছি না। মুন্সী মহবুবুর রহমান নাম প্রকাশ না করে বলেন, হাটের সর্বোচ্চ দরদাতা সম্প্রতি ইফতারের জন্য আমাকে দাওয়াত দেন। সেখানে সন্ধ্যায় গিয়ে দেখতে পাই বিএনপির স্থানীয় কতিপয় নেতা ও ক্যাডার পরিকল্পিতভাবে সমবেত হয়েছে। তারা আমাকে হাটের ইজারা নিতে বারণ করে দেয়। যদি শিয়ালমারী হাটের বন্দোবস্ত নিই তাহলে তারা খুন খারাবির হুমকি দেয়।

তিনি বলেন, আমার ধারণা সর্বোচ্চ দরদাতা হাটের ইজারা নিতে চান না। তারা আদালতে মামলা ঠুকে দিয়ে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে খাস কালেকশন করে নিজেদের পকেট ভরতে চান। এ কারণেই পরিকল্পিতভাবে হাইকোর্টে তারা রিট করেছেন।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা সরকারি বিধি অনুযায়ী আগুচ্ছি। প্রথম সর্বোচ্চ দরদাতার জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাও যদি নির্ধারিত তারিখের মধ্যে বিধি অনুযায়ী টাকা জমা দিয়ে হাটের ইজারা গ্রহণে ব্যর্থ হন তারও জামানত বাতিল করা হবে। আর তিনি হাট নিতে সম্মত হলে হুমকি ধামকির বিষয়টি খতিয়ে দেখে আমরা তাকে হাট বুঝিয়ে দেব।

এদিকে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জামানত স্বরূপ আটক রাখা পে-অর্ডার মুন্সী ট্রেডার্সকে ফেরত দেয়ার জন্য লিগ্যাল নোটিশ বিভাগীয় কমিশনার খুলনা, জেলা প্রশাসক চুয়াডাঙ্গা ও জীবননগর উপজেলা নির্বাহীকে গতকালই প্রদান করা হয়েছে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

চুয়াডাঙ্গায় মা ক্লিনিকের নার্স বিপাশার লা শ উদ্ধার

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ দরদাতার

শিয়ালমারী পশুহাটের কালেকশন পকেটে ভরার কৌশল নিচ্ছে

প্রকাশের সময় : ১১:৪৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫

দীর্ঘ ১৬ বছর পর টেন্ডার হলেও সেই খাস কালেকশনের দিকেই এগোচ্ছে চুয়াডাঙ্গার শিয়ালমারী পশুর হাট। সর্বোচ্চ দরদাতা প্রয়োজনীয় অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আদালতে সময় চেয়ে রিট করেছেন। আর দ্বিতীয় দরদাতাকে হুমকি ধামকি দেয়ায় তিনি রাজি নন হাটের ইজারা নিতে।

এ পরিস্থিতি আগের কতিপয় প্রভাবশালীর দেখানো পথেই হাঁটছে শিয়ালমারী পশুহাটের কালেকশন। এতে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের যোগসাজশে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল পশুর হাটের কালেকশন পকেটে ভরার কৌশল নিচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (০৮ এপ্রিল) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব জানান হাটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা জীবননগরের মুন্সী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মুন্সী মাহবুবুর রহমান বাবু।

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার পোস্ট অফিসপাড়ার মুন্সী মাহবুবুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, জীবননগর উপজেলার সর্ববৃহৎ পশুর হাট শিয়ালমারী পশুরহাট। এই হাট প্রতি বৃহস্পতিবারে বসে। ২০০৯ সালে শেষ বারের মতো পশুর হাটটির ইজারা বন্দোবস্ত দেয় সরকার। এরপর থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা হাটের টাকা তুলে নামমাত্র টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়। দীর্ঘ ১৬ বছর পর হাটটির ইজারা বন্দোবস্ত দেয়ার সময় এ বছর আবারও পুরোনো কৌশলেই ফিরছে এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী।

তিনি আরও বলেন, এ বছরের ২২ জানুয়ারি উপজেলার সর্ববৃহৎ শিয়ালমারী পশুরহাটের ইজারা বিক্তপ্তি প্রকাশ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল আমিন। ১১ ফেব্রুয়ারি দরপত্র জমা দেয়া হয়। এতে উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামের ইছাহক ম-লের ছেলে আলতাফ হোসেন ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা মূল্য দিয়ে সর্ব্বোচ দরদাতা নির্বাচিত হন। ১৮ ফেব্রুয়ারি তাকে ইজারা বরাদ্দপত্র দেয়া হয়। কিন্তু ইজারাদার পুরোপুরি টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে সময় চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন করেন। আবেদন না মঞ্জুর হলে ইজারাদার আফতাফ হোসেন হাইকোর্টের ডিভিশনে একটি রিট করেন। এই পরিস্থিতি দ্বিতীয় দরদাতা হিসেবে ৩ কোটি ৩০ লাখ ৩০ হাজার টাকায় মুন্সী ট্রেডার্সকে শিয়ালমারী পশুরহাটটি প্রদানের ইজারাপত্র দেয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার। কিন্তু মুন্সী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মুন্সী মাহবুবুর রহমান ইজারা নিতে অস্বীকৃতি জানান।

এ ব্যাপারে মুন্সী মাহবুবুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, যেখানে এক পক্ষ মামলা করেছেন, সেই মামলার হাট আমি নিতে চাই না। এ অবস্থায় আমার ব্যাংক ড্রাফট করা জামানত ৯১ লাখ টাকা ফেরত চেয়ে আবেদন করি। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন কোনো কর্ণপাত করছে না। এ অবস্থায় জেলা প্রশাসকের কাছে ধরনা দিয়েই আমরা ব্যাংক ড্রাফট ফেরত পাচ্ছি না। মুন্সী মহবুবুর রহমান নাম প্রকাশ না করে বলেন, হাটের সর্বোচ্চ দরদাতা সম্প্রতি ইফতারের জন্য আমাকে দাওয়াত দেন। সেখানে সন্ধ্যায় গিয়ে দেখতে পাই বিএনপির স্থানীয় কতিপয় নেতা ও ক্যাডার পরিকল্পিতভাবে সমবেত হয়েছে। তারা আমাকে হাটের ইজারা নিতে বারণ করে দেয়। যদি শিয়ালমারী হাটের বন্দোবস্ত নিই তাহলে তারা খুন খারাবির হুমকি দেয়।

তিনি বলেন, আমার ধারণা সর্বোচ্চ দরদাতা হাটের ইজারা নিতে চান না। তারা আদালতে মামলা ঠুকে দিয়ে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে খাস কালেকশন করে নিজেদের পকেট ভরতে চান। এ কারণেই পরিকল্পিতভাবে হাইকোর্টে তারা রিট করেছেন।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা সরকারি বিধি অনুযায়ী আগুচ্ছি। প্রথম সর্বোচ্চ দরদাতার জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাও যদি নির্ধারিত তারিখের মধ্যে বিধি অনুযায়ী টাকা জমা দিয়ে হাটের ইজারা গ্রহণে ব্যর্থ হন তারও জামানত বাতিল করা হবে। আর তিনি হাট নিতে সম্মত হলে হুমকি ধামকির বিষয়টি খতিয়ে দেখে আমরা তাকে হাট বুঝিয়ে দেব।

এদিকে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জামানত স্বরূপ আটক রাখা পে-অর্ডার মুন্সী ট্রেডার্সকে ফেরত দেয়ার জন্য লিগ্যাল নোটিশ বিভাগীয় কমিশনার খুলনা, জেলা প্রশাসক চুয়াডাঙ্গা ও জীবননগর উপজেলা নির্বাহীকে গতকালই প্রদান করা হয়েছে।