বৃষ্টির কারণে সবজি ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় উৎপাদন কমে সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। সবজি উৎপাদন করতে সার কীটনাশক খরচ অনেক বেশি। বাজারে কৃষকের ক্ষেত থেকে হাত বদলে ভোক্তা পর্যায়ে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় ক্ষুব্ধ সবাই। কৃষকের থেকে সবজি ক্রয়ের পর সেই সবজি একই হাটে খুচরা বাজারে বিক্রয় হয় ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দামে।
ব্যবসারী বলছেন, চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ, দশমাইল ও ঝিনাইদহ জেলার ডাকবাংলা বাজারে কৃষকদের থেকে পাইকারি পটল, কচু, লাউ, ফুলকপি, মুলাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি ক্রয় করে থাকেন। সেগুলোকে ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশালসহ বিভিন্ন অঞ্চলে দিয়ে থাকেন। পাইকারি বাজার থেকে যে সবজি কৃষকের থেকে ক্রয় করেন, সেই সব সবজিগুলো তিনি আড়তে বিক্রি করেন। সেখান থেকে তাদের কেজি প্রতি ২ থেকে ৫ টাকা করে লাভ করেন, এর মধ্যে আবার খরচের বিষয় থাকে। আড়তে বিক্রয়ের পর সেই সবজিগুলো খুচরা বাজারে বিক্রয়ের জন্য খুচরা ব্যবসায়ীরা ক্রয় করেন। এতে ওই আড়ৎদারও লাভ করেন। এভাবে ভোক্তা পর্যায়ে এই সবজি তিন থেকে চার হাত বদলে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে। এ কারণে কৃষকের দামের তুলনায় ভোক্তা বাজারে সবজির দামটা বেশি।

রোববার (২০ অক্টোবর) সকালে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা বাজারে সবজির পাইকারি বাজার ঘুরে এমনি চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রকার ভেদে পাইকারি দামে পটল বিক্রয় হচ্ছে কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ফুলকপি কেজি প্রতি বিক্রয় হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, পুইশাক ৯০ থেকে ১০০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লাউ প্রকারভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, শশা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, কচু ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ওলকচু ৫০ টাকা, শিম জাত ভেদে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, পেপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, পুইশাক ১৫ আটি, ঝিঙা ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং মুলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কৃষক বিক্রয় করতে পারছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নূর-এ-নবি বলেন, এ বছর ঝিনাইদহ সদর উপজেলাতে ১ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। সবজির মধ্যে মুলা, পালংশাক, লালশাক, লাউ, শিম, করলা, পুইশাকসহ বিভিন্ন সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এইসব সবজির ক্ষেত বেশিরভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার আগাম সবজি চাষে সার ও কীটনাশক খরচও অনেক বেশি। যার কারণে সবজির বাজার একটু বেশি। তবে আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে হয়তো সবজির দাম স্বাভাবিক হবে।

একই বাজারে কৃষকের থেকে এই সব সবজি কেনার পর খুচরা ব্যবসায়ীরা বাজারে পটল ৬০ টাকা, ফুলকপি ৯০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, পুইশাক মেচড়ী ১২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, বেগুন ১৩০ টাকা, লাউ ৫০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ১৬০ টাকা, শশা ৬০ টাকা, কচু ৫০ টাকা, ওলকচু ৬০ টাকা, শিম ১৮০ টাকা, পেপে ৩০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, মুলা ৭০ টাকা ও পুইশাক আটি ২০ টাকা দরে বিক্রয় করতে দেখা গেছে। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ঝিনাইদহের এই বাজার থেকে সবজি ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কমিশনে বা কেজি প্রতি ২ থেকে ৫ টাকা লাভ করেন বলে জানা গেছে।
ব্যবসায়ী মো. আশরাফ মিয়া বলেন, চাহিদার চেয়ে বাজারে সবজি কম। যার কারণে বেশি দাম দিয়ে কৃষকদের থেকে সবজি ক্রয় করতে হচ্ছে। আবার ঝিনাইদহ থেকে সবজি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিতে গেলে গাড়ি খরচ পড়ে যায় অনেক বেশি, সেকারণে লোকাল বাজারের থেকে অন্যসব বাজারে সবজির দাম বেশি।
ডাকবাংলা বাজারের খুচরা সবজি ব্যবসায়ী রবিউল বলেন, তারা সরাসরি বাজারে কৃষদের থেকে সবজি ক্রয় করেন এবং একই বাজারে বিক্রয় করেন। খুচরা বাজারে কেজি প্রতি প্রথমে ১৫-২০ টাকা লাভ করেন। তবে কোনো ভোক্তা সবজি ক্রয় করতে এলে, তিনি সবজি বেছে বেছে ক্রয় করেন। কিন্তু তারা কৃষকদের থেকে ঝাপি বা বস্তা ধরেই ক্রয় করে আনেন। সবজিগুলো বিক্রয়ের এক পর্যায়ে দেখা যায় শেষের সবজিগুলোর মান কমে যাওয়ায় কম দামে বিক্রয় করতে হয়। তবে এভারেজ ৫-১০ টাকা করে কেজিতে লাভ করেন তারা।
খুচরা ব্যবসায়ী বাবলু জানান, বাজার থেকে বেশি দামে সবজি ক্রয় করতে হচ্ছে। তারা কেজি প্রতি সবজি ১০ থেকে ২০ টাকা লাভ করে থাকে। তবে প্রথমে ক্রেতারা বেছে বেছে সবজি কেনার পর শেষে গিয়ে আর প্রথম যে দামে বিক্রয় করা হয় সেই দাম থাকে না। তখন আবার আসল দামে সবজি বিক্রয় করতে হয়।

ভাতুড়িয়া গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহামান বলেন, বৃষ্টিতে সবজির ক্ষেত কিছু নষ্ট হয়ে গেছে, মাঠে সবজির উৎপাদন কম। আগাম সবজি চাষে পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে গেছে, কীটনাশক ও সারের দাম অনেক বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। যার কারণে সবজির এমন দাম। সবজি উৎপাদন করতে যে পরিমাণ খরচ সেই তুলানায় বর্তমান বাজার ঠিকই আছে।
বেড়াদী গ্রামের কৃষক শরিফুল বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে সব সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে আবার সবজি লাগানোর জন্য চারা দেব সেই সময়টুকুও পাওয়া যাচ্ছে না আবার বৃষ্টি হচ্ছে। তবে যতটুকু সবজি আছে সেগুলোকে ভালোভাবে পরিচর্যা করার কারণে অল্প কিছু সবজি বাজারে বিক্রয় করতে পারছি। আবহাওয়া ভালো হলে নতুন করে সবিজর চাষ করতে হবে। তখন নতুন সবজি বাজারে ওঠার পর হয়তো সবজির দাম কমতে পারে।
সুত্র – ঢাকা পোস্ট
এএইচ