শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পরপরই বাড়ি এবং এলাকা ছাড়তে শুরু করেছেন চুয়াডাঙ্গার আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও নেতাকর্মীরা। জেলার দুজন সাবেক সংসদ ইতোমধ্যে গা ঢাকা দিয়েছেন।
বুধবার (৭ আগস্ট) বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ছাড়া সোমবার শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, সাবেক এমপি, নেতাকর্মীদের বাড়িঘর, অফিস ও ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটায়।
এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য (সদ্য সাবেক) আলী আজগার টগর সীমান্ত পার হয়ে ভারতে চলে গেছেন বলে অনেকেই জানিয়েছেন। দলের সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরাও গা ঢাকা দিয়েছেন।
এদিকে দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে হামলা-মামলার ভয়ে আত্মীয়-স্বজনের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন অনেক নেতাকর্মী।
সর্বশেষ রোববার (৪ আগস্ট) পর্যন্ত মাঠে ছিল আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টাও করেছিলেন তারা। এসময় অনেকে জড়িয়ে পড়েন সংঘর্ষে।
সোমবার (৫ আগস্ট) সকাল থেকে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। ক্ষমতা থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দিনে সকাল থেকে দলটির নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। শুধু তাই নয়, দলের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলেও দলের কাউকে তা প্রতিরোধ করতে দেখা যায়নি।
সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে থেকে লাগানো ছিল কলাপসিবল গেইট। অগ্নিসংযোগে পাল্টে গেছে ভবনের রং। বিবর্ণ পাঁচতলা ভবনটিই শুধু ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। ভিতরের আসবাবপত্র পুড়ে ছাই। উৎসুক জনতার অনেককেই কার্যালয়ের সমনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠনের কোন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সেখানে দেখা যায়নি।
গত ৫ আগস্ট স্থানীয় শহীদ দিবস পালন শেষে আটকবর থেকে ফেরার পথেই চুয়াডাঙ্গার নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে যেতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে একে একে তারা নিরাপদ স্থানে চলে যান।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন আটকবর থেকে আসার পরই একা নিজ বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। তবে তিনি কোথায় গেছেন, সেটা জানা সম্ভব হয়নি। তার বাড়িটি এখন ভষ্মিভূত।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, সাবেক উপ-প্রচার সম্পাদক শওকত আলী বিশ্বাস, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন হেলা, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের, যুবলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম আসমান, আব্দুর রশিদ, শেখ সেলিম, টুটুল, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজালুল হক বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক রিপন মন্ডলের খোঁজখবর পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার চেয়ারম্যান নঈম হাসান জোয়ার্দ্দারের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক ও চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপুর অবস্থানও জানা যায়নি।
জেলা আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা, দীর্ঘকালীন সময়ের সভাপতি চারবারের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপিরও তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে, নিকট আত্মীয়-স্বজন, ভাই, সকলেই যখন নিরাপদ স্থানে গেছেন, তখনও সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বাড়িতেই ছিলেন। তারপর উত্তেজিত জনতা অংশ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের পুরাতন বাড়িতে আগুন দেয়। এরপর তিনিও নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান।
সুত্র : দৈনিক আকাশ খবর
এএইচ