১২:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী, কলেরা স্যালাইনের সঙ্কট

ফুড পয়জনিং ও আবহাওয়াজনিত কারণে রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। এরমধ্যে অধিকাংশই শিশু রোগী।

এছাড়া প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় দেড় শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী।

এদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে এক সপ্তাহ যাবত কলেরা আইভি ফ্লুইড স্যালাইনের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বাইরে থেকে রোগীরা স্যালাইন কিনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, দূষিত পানি পান করা, অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের খাবার বিশেষ করে রাস্তার পাশের খোলা জায়গার স্ট্রিট ফুড খাওয়া। নিয়মিত হাত পরিস্কার না করে অপরিস্কার হাতে খাওয়া, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাদ্য সংরক্ষণ ইত্যাদি ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ। বর্তমানে রাতে ঠান্ডার ভাব আবার দিনে ভ্যাবসা গরম, এর থেকেই রোটা ভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে শিশু ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সচেতন হলেই ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড সুত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে অর্থাৎ ৮ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই বিকেল ৬টা পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ১৭৪ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ৭৪ জনই শিশু রোগী। বাকি ১০০ জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ।

এদিকে ১ সপ্তাহ যাবত কলেরা স্যালাইন সাপ্লাই না থাকায় রোগী ও স্বজনদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

ডায়রিয়া ওয়ার্ডের মিনা খাতুন নামে এক নারী রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমার ৬ বছরের ছেলে গত তিন দিন আগে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়েছি। প্রতিদিন কলেরা স্যালাইন দিতে হচ্ছে। সাপ্লায় না থাকার কারণে বাইরের ফার্মেসি থেকে কলেরা স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। একেক সময় একেক মূল্য নিচ্ছেন ফার্মেসি থেকে। হাসপাতালে সাপ্লাই না থাকায় ইচ্ছেমত কলেরা স্যালাইনের মূল্য নিচ্ছেন।

সকিরন নেছা নামের আরেক নারী রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, গত দুদিন থেকে পাতলা মল আর বমি হচ্ছিল মেয়ের। গত পরশু সকালে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করে। হাসপাতাল থেকে খাওয়া স্যালাইনসহ যাবতীয় ওষুধ দিলেও কলেরা স্যালাইন সাপ্লাই নেই জানিয়ে বাইরে থেকে কিনে আসতে বলে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও’র) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন সাপ্লাই নেই। তবে দুই একদিনের মধ্যেই চলে আসবে।

ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, ইদানিং ফুড পয়জনিং এর কারণে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা এবং বর্তমানে ঠান্ডা গরমের জন্য (আবহাওয়া পরিবর্তন) শিশুরা রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ডায়রিয়া হচ্ছে। কোন মতেই বাসি খাবার খাওয়া যাবেনা। যতটা সম্ভব বাইরের খাবার এড়িয়ে চলা ভাল৷ শিশুদের প্রতি বেশি যত্ন নিতে হবে। বাসি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, রাস্তার ধারের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রতি মানুষের সচেতনতা না বাড়লে ডায়রিয়া মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে। এছাড়া গরমে অনেকের মাঝে পানিশূন্যতাও তৈরি হয়ে থাকে। এজন্য প্রয়োজন গরমে বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করা, ফলমূলের শরবত পান করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। ৬ মাসের বড় বাচ্চাদের বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য নরম জাতীয় খাবার দিতে হবে৷

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

চুয়াডাঙ্গায় মা ক্লিনিকের নার্স বিপাশার লা শ উদ্ধার

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী, কলেরা স্যালাইনের সঙ্কট

প্রকাশের সময় : ০১:৫৫:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪

ফুড পয়জনিং ও আবহাওয়াজনিত কারণে রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। এরমধ্যে অধিকাংশই শিশু রোগী।

এছাড়া প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় দেড় শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী।

এদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে এক সপ্তাহ যাবত কলেরা আইভি ফ্লুইড স্যালাইনের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বাইরে থেকে রোগীরা স্যালাইন কিনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, দূষিত পানি পান করা, অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের খাবার বিশেষ করে রাস্তার পাশের খোলা জায়গার স্ট্রিট ফুড খাওয়া। নিয়মিত হাত পরিস্কার না করে অপরিস্কার হাতে খাওয়া, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাদ্য সংরক্ষণ ইত্যাদি ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ। বর্তমানে রাতে ঠান্ডার ভাব আবার দিনে ভ্যাবসা গরম, এর থেকেই রোটা ভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে শিশু ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সচেতন হলেই ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড সুত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে অর্থাৎ ৮ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই বিকেল ৬টা পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ১৭৪ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ৭৪ জনই শিশু রোগী। বাকি ১০০ জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ।

এদিকে ১ সপ্তাহ যাবত কলেরা স্যালাইন সাপ্লাই না থাকায় রোগী ও স্বজনদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

ডায়রিয়া ওয়ার্ডের মিনা খাতুন নামে এক নারী রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমার ৬ বছরের ছেলে গত তিন দিন আগে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়েছি। প্রতিদিন কলেরা স্যালাইন দিতে হচ্ছে। সাপ্লায় না থাকার কারণে বাইরের ফার্মেসি থেকে কলেরা স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। একেক সময় একেক মূল্য নিচ্ছেন ফার্মেসি থেকে। হাসপাতালে সাপ্লাই না থাকায় ইচ্ছেমত কলেরা স্যালাইনের মূল্য নিচ্ছেন।

সকিরন নেছা নামের আরেক নারী রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, গত দুদিন থেকে পাতলা মল আর বমি হচ্ছিল মেয়ের। গত পরশু সকালে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করে। হাসপাতাল থেকে খাওয়া স্যালাইনসহ যাবতীয় ওষুধ দিলেও কলেরা স্যালাইন সাপ্লাই নেই জানিয়ে বাইরে থেকে কিনে আসতে বলে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও’র) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন সাপ্লাই নেই। তবে দুই একদিনের মধ্যেই চলে আসবে।

ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, ইদানিং ফুড পয়জনিং এর কারণে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা এবং বর্তমানে ঠান্ডা গরমের জন্য (আবহাওয়া পরিবর্তন) শিশুরা রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ডায়রিয়া হচ্ছে। কোন মতেই বাসি খাবার খাওয়া যাবেনা। যতটা সম্ভব বাইরের খাবার এড়িয়ে চলা ভাল৷ শিশুদের প্রতি বেশি যত্ন নিতে হবে। বাসি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, রাস্তার ধারের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রতি মানুষের সচেতনতা না বাড়লে ডায়রিয়া মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে। এছাড়া গরমে অনেকের মাঝে পানিশূন্যতাও তৈরি হয়ে থাকে। এজন্য প্রয়োজন গরমে বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করা, ফলমূলের শরবত পান করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। ৬ মাসের বড় বাচ্চাদের বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য নরম জাতীয় খাবার দিতে হবে৷