১১:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় ঋণের টাকায় কেনা ভ্যান ছিনতাই, তিন সন্তান নিয়ে কাঁদছেন বৃদ্ধ জাহাঙ্গীর

আজ শুক্রবার ২১ মার্চ ভোররাতে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেলগাছি-মাখালডাঙ্গা সড়কের ফাঁকা মাঠে এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী ভ্যানচালক জাহাঙ্গীর আলম সদর উপজেলার মাখালডাঙ্গা গ্রামের মাঝেরপাড়ার মৃত. ইউনুস আলী মণ্ডলের ছেলে। তার তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে এইচএইচসি পরিক্ষার্থী, মেজো ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণি ও ছোট ছেলে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ভ্যান চালিয়েই বৃদ্ধ জাহাঙ্গীর ছেলেদের পড়াশোনাসহ সংসার চালাতেন।

ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর আলম রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার ২০ মার্চ চুয়াডাঙ্গার মারকাজ মসজিদে চারজনকে রেখে এসেছিলাম। শুক্রবার সাহরির পর নিতে আসতে বলেছিলেন। সেই মোতাবেক আমি ভোর ৪টার দিকে আমার ছোট ছেলেকে নিয়ে বাড়ি থেকে তাদেরকে নিয়ে আসার জন্য বের হয়। পরে বেলগাছি-মাখালডাঙ্গা সড়কে কলা গাছ দিয়ে ব্যারিকেড দেখতে পাই। সেখানে থামার সাথে সাথে দুজন ব্যক্তি ধারাল অস্ত্র নিয়ে আমাদের জিম্মি করে। পরে আমার ও আমার ছেলের হাত-পা বেঁধে রাস্তার পাশে ফেলে রাখে।

ভ্যানচালক জাহাঙ্গীর আলম রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, ছিনতাইকারীরা আমার ও ছেলের পরনের লুঙি কেটে চোখ, হাত-পা বেঁধে রাখে। আমার ছোট ছেলের সামনে আমাকে উলঙ্গ না করার অনুরোধ করলে তারা আমার আকুতি শোনেনি। এছাড়াও সাহরির খুব বেশি সময় নেই জানালেও সেই আকুতিও না শুনে আমাদের বেঁধে রেখে ভ্যান, মোবাইল নিয়ে চলে যায়। পরে কোন রকমভাবে বাধন খুলে আমরা বাড়িতে পৌছায়।

ভুক্তভোগী ভ্যানচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত ৬ মাস আগে দেড় লাখ টাকা লোন তুলে ব্যাটারিচালিত নতুন পাখিভ্যানটি কিনেছি। এই ভ্যান চালিয়ে লোনের কিস্তির টাকা পরিশোধ সহ ছেলেদের পড়াশোনার খরচ এবং কোনমতে সংসার চালায়। এখন ভ্যানটি হারিয়ে কিভাবে কিস্তির টাকা পরিশোধ করব? আবার সংসার চালাব কিভাবে, এই কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

প্রতিবেশি লবাব রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, জাহাঙ্গীর আলম একজন অসহায় ব্যক্তি। তার ভ্যানটি সন্ত্রাসীরা (ছিনতাইকারী) কেড়ে নিয়েছে। তার চলার কোন গতি নেই এখন। সমাজের বিত্তবান ও সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা কামনা করছি। এছাড়া অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি করেন তিনি।

আরেক নারী প্রতিবেশী রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, জাহাঙ্গীর আলম খুব কষ্ট করে সংসার চালাই। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। লোন তুলে ভ্যানটি কিনেছিলেন। এর উপার্জনের মাধ্যমে সন্তানদের পড়াশোনা ও সংসার চলতো। এখন ভ্যানটি হারিয়ে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আমরা চাই তাকে সকলে সহযোগিতা করুক।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) খালেদুর রহমান রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, শুক্রবার সকালে ভুক্তভোগীকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে অভিযুক্তদের সনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন৷

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

জনপ্রিয় গায়ক নোবেল গ্রেপ্তার

চুয়াডাঙ্গায় ঋণের টাকায় কেনা ভ্যান ছিনতাই, তিন সন্তান নিয়ে কাঁদছেন বৃদ্ধ জাহাঙ্গীর

প্রকাশের সময় : ০৫:০০:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

আজ শুক্রবার ২১ মার্চ ভোররাতে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেলগাছি-মাখালডাঙ্গা সড়কের ফাঁকা মাঠে এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী ভ্যানচালক জাহাঙ্গীর আলম সদর উপজেলার মাখালডাঙ্গা গ্রামের মাঝেরপাড়ার মৃত. ইউনুস আলী মণ্ডলের ছেলে। তার তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে এইচএইচসি পরিক্ষার্থী, মেজো ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণি ও ছোট ছেলে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ভ্যান চালিয়েই বৃদ্ধ জাহাঙ্গীর ছেলেদের পড়াশোনাসহ সংসার চালাতেন।

ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর আলম রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার ২০ মার্চ চুয়াডাঙ্গার মারকাজ মসজিদে চারজনকে রেখে এসেছিলাম। শুক্রবার সাহরির পর নিতে আসতে বলেছিলেন। সেই মোতাবেক আমি ভোর ৪টার দিকে আমার ছোট ছেলেকে নিয়ে বাড়ি থেকে তাদেরকে নিয়ে আসার জন্য বের হয়। পরে বেলগাছি-মাখালডাঙ্গা সড়কে কলা গাছ দিয়ে ব্যারিকেড দেখতে পাই। সেখানে থামার সাথে সাথে দুজন ব্যক্তি ধারাল অস্ত্র নিয়ে আমাদের জিম্মি করে। পরে আমার ও আমার ছেলের হাত-পা বেঁধে রাস্তার পাশে ফেলে রাখে।

ভ্যানচালক জাহাঙ্গীর আলম রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, ছিনতাইকারীরা আমার ও ছেলের পরনের লুঙি কেটে চোখ, হাত-পা বেঁধে রাখে। আমার ছোট ছেলের সামনে আমাকে উলঙ্গ না করার অনুরোধ করলে তারা আমার আকুতি শোনেনি। এছাড়াও সাহরির খুব বেশি সময় নেই জানালেও সেই আকুতিও না শুনে আমাদের বেঁধে রেখে ভ্যান, মোবাইল নিয়ে চলে যায়। পরে কোন রকমভাবে বাধন খুলে আমরা বাড়িতে পৌছায়।

ভুক্তভোগী ভ্যানচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত ৬ মাস আগে দেড় লাখ টাকা লোন তুলে ব্যাটারিচালিত নতুন পাখিভ্যানটি কিনেছি। এই ভ্যান চালিয়ে লোনের কিস্তির টাকা পরিশোধ সহ ছেলেদের পড়াশোনার খরচ এবং কোনমতে সংসার চালায়। এখন ভ্যানটি হারিয়ে কিভাবে কিস্তির টাকা পরিশোধ করব? আবার সংসার চালাব কিভাবে, এই কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

প্রতিবেশি লবাব রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, জাহাঙ্গীর আলম একজন অসহায় ব্যক্তি। তার ভ্যানটি সন্ত্রাসীরা (ছিনতাইকারী) কেড়ে নিয়েছে। তার চলার কোন গতি নেই এখন। সমাজের বিত্তবান ও সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা কামনা করছি। এছাড়া অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি করেন তিনি।

আরেক নারী প্রতিবেশী রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, জাহাঙ্গীর আলম খুব কষ্ট করে সংসার চালাই। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। লোন তুলে ভ্যানটি কিনেছিলেন। এর উপার্জনের মাধ্যমে সন্তানদের পড়াশোনা ও সংসার চলতো। এখন ভ্যানটি হারিয়ে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আমরা চাই তাকে সকলে সহযোগিতা করুক।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) খালেদুর রহমান রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, শুক্রবার সকালে ভুক্তভোগীকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে অভিযুক্তদের সনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন৷