০৩:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় নজরুল চেতনায় অরিন্দমের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

“সমাজে যেখানে ছন্দ পতন, সেখানে ছড়াব প্রাণের মাতন”, এই প্রাণময় স্লোগানকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গার স্বনামধন্য সাংস্কৃতিক সংগঠন অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠন উদযাপন করেছে তাদের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর তৃতীয় দিন।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় চুয়াডাঙ্গা শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই দিনটি পরিণত হয় সাহিত্য, সংগীত ও নাট্যজীবনের এক উজ্জ্বল মিলনমেলায়। দিনটির মূল প্রতিপাদ্য ছিল, “কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার আয়ুষ্কাল: প্রেক্ষিত নজরুলের বিদ্রোহী।”

অনুষ্ঠানের শুরুতেই আলোচনায় উঠে আসে কবি কাজী নজরুল ইসলামের মানবিক চেতনা, বৈষম্যবিরোধী মনোভাব এবং সামাজিক ন্যায়ের সংগ্রাম।

আলোচকরা বলেন, নজরুল শুধু কবি নন, তিনি ছিলেন সমাজ পরিবর্তনের সাহসী এক যোদ্ধা, যিনি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের ঐক্য ও মুক্তির গান গেয়েছেন।

প্রধান আলোচক চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মুস্নি আবু সাইফ বলেন, কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বৈষম্যহীন ও মানবিক মানুষ। সমাজে ঐক্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি লড়ে গেছেন, নিপীড়িতের পাশে দাঁড়িয়েছেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।

প্রধান অতিথি চুয়াডাঙ্গা আদর্শ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মনিরুজ্জামান বলেন, নজরুল ছিলেন ইতিহাসের এক প্রতিবাদী চরিত্র। তাঁর সাহিত্য ও সংগীত মানুষের আত্মমর্যাদা জাগিয়ে তুলেছে। তিনি অভাবের সংসারে জন্ম নিয়েও নিজের প্রতিভা ও লড়াই দিয়ে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।” দৈনিক সময় সমীকরণ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন বলেন, “নজরুল সমাজে সব ভেদাভেদ দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর মানবিক চেতনা আজও প্রাসঙ্গিক।

অনুষ্ঠানের সভাপতি ও অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহ-সভাপতি বজলুর রহমান জোয়ার্দার বলেন, নজরুল ছিলেন প্রতিবাদী, সাহসী ও মানবিক মানুষ। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন ছিলেন এবং সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আজীবন সংগ্রাম করেছেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মালিক, অরিন্দমের সভাপতি মো. আলাউদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক নাট্যকার ও কণ্ঠশিল্পী হারুন উর রশীদ শান্ত, সংলাপ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সভাপতি নজীর আহম্মেদ, কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদের সভাপতি সামসুল আলম, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম টুটুল, এবং আব্দুল মালেক, জুলফিকার আলী ভুট্টোসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা।

আলোচনা পর্ব শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। আবৃত্তি, সংগীত ও নৃত্যের মাধ্যমে নজরুলের জীবন দর্শন ও মানবিক চেতনার প্রতিফলন ঘটে মঞ্চজুড়ে। বিশেষ আকর্ষণ ছিল নজরুল স্মৃতি সংসদ কার্পাসডাঙ্গা পরিবেশিত নাটক ‘নীলকুঠি’, যা দর্শকদের আবেগাপ্লুত করে তোলে।

চুয়াডাঙ্গার সংস্কৃতিমনা মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। আলো, সুর ও সংলাপের সমন্বয়ে তৈরি হয় এক অনন্য সাংস্কৃতিক আবহ। অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের এই আয়োজনে কবি নজরুল ইসলামকে ঘিরে নতুন প্রজন্ম যেন আবারও খুঁজে পায় প্রেরণা, প্রতিবাদ ও মানবতার বোধ।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

চুয়াডাঙ্গায় নজরুল চেতনায় অরিন্দমের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

চুয়াডাঙ্গায় নজরুল চেতনায় অরিন্দমের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

প্রকাশের সময় : ১২:৩১:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

“সমাজে যেখানে ছন্দ পতন, সেখানে ছড়াব প্রাণের মাতন”, এই প্রাণময় স্লোগানকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গার স্বনামধন্য সাংস্কৃতিক সংগঠন অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠন উদযাপন করেছে তাদের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর তৃতীয় দিন।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় চুয়াডাঙ্গা শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই দিনটি পরিণত হয় সাহিত্য, সংগীত ও নাট্যজীবনের এক উজ্জ্বল মিলনমেলায়। দিনটির মূল প্রতিপাদ্য ছিল, “কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার আয়ুষ্কাল: প্রেক্ষিত নজরুলের বিদ্রোহী।”

অনুষ্ঠানের শুরুতেই আলোচনায় উঠে আসে কবি কাজী নজরুল ইসলামের মানবিক চেতনা, বৈষম্যবিরোধী মনোভাব এবং সামাজিক ন্যায়ের সংগ্রাম।

আলোচকরা বলেন, নজরুল শুধু কবি নন, তিনি ছিলেন সমাজ পরিবর্তনের সাহসী এক যোদ্ধা, যিনি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের ঐক্য ও মুক্তির গান গেয়েছেন।

প্রধান আলোচক চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মুস্নি আবু সাইফ বলেন, কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বৈষম্যহীন ও মানবিক মানুষ। সমাজে ঐক্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি লড়ে গেছেন, নিপীড়িতের পাশে দাঁড়িয়েছেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।

প্রধান অতিথি চুয়াডাঙ্গা আদর্শ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মনিরুজ্জামান বলেন, নজরুল ছিলেন ইতিহাসের এক প্রতিবাদী চরিত্র। তাঁর সাহিত্য ও সংগীত মানুষের আত্মমর্যাদা জাগিয়ে তুলেছে। তিনি অভাবের সংসারে জন্ম নিয়েও নিজের প্রতিভা ও লড়াই দিয়ে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।” দৈনিক সময় সমীকরণ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন বলেন, “নজরুল সমাজে সব ভেদাভেদ দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর মানবিক চেতনা আজও প্রাসঙ্গিক।

অনুষ্ঠানের সভাপতি ও অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহ-সভাপতি বজলুর রহমান জোয়ার্দার বলেন, নজরুল ছিলেন প্রতিবাদী, সাহসী ও মানবিক মানুষ। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন ছিলেন এবং সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আজীবন সংগ্রাম করেছেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মালিক, অরিন্দমের সভাপতি মো. আলাউদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক নাট্যকার ও কণ্ঠশিল্পী হারুন উর রশীদ শান্ত, সংলাপ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সভাপতি নজীর আহম্মেদ, কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদের সভাপতি সামসুল আলম, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম টুটুল, এবং আব্দুল মালেক, জুলফিকার আলী ভুট্টোসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা।

আলোচনা পর্ব শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। আবৃত্তি, সংগীত ও নৃত্যের মাধ্যমে নজরুলের জীবন দর্শন ও মানবিক চেতনার প্রতিফলন ঘটে মঞ্চজুড়ে। বিশেষ আকর্ষণ ছিল নজরুল স্মৃতি সংসদ কার্পাসডাঙ্গা পরিবেশিত নাটক ‘নীলকুঠি’, যা দর্শকদের আবেগাপ্লুত করে তোলে।

চুয়াডাঙ্গার সংস্কৃতিমনা মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। আলো, সুর ও সংলাপের সমন্বয়ে তৈরি হয় এক অনন্য সাংস্কৃতিক আবহ। অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের এই আয়োজনে কবি নজরুল ইসলামকে ঘিরে নতুন প্রজন্ম যেন আবারও খুঁজে পায় প্রেরণা, প্রতিবাদ ও মানবতার বোধ।