চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার একটি বাদে সবগুলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রেখে মিলমেলা ও বনভোজন করেন শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির নেতারা। এতে অংশ নেন বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক সহ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ। স্কুল বন্ধ রেখে এই আয়োজন চলাকালীন সময়ে বিষয়টি নিয়ে অভিভাবক মহলে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। একপর্যায়ে তাৎক্ষণিকভাবে ছুটি বাতিল করে বিদ্যালয় খোলা নির্দেশ দেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। এছাড়া শিক্ষকদের ছুটি মঞ্জুর করার কারণে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে শোকজ করা হয়েছে। একদিনের মধ্যে ব্যাখা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে, গতকাল সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারী) চুয়াডাঙ্গা বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা শাখার ব্যানারে আক্কাছ লেক ভিউ পার্ক এন্ড রিসোর্ট এ আয়োজন করা হয়।
অভিভাবক বলছেন, চলতি বছর প্রায় শিক্ষাথীরা এখনো বই পাইনি। শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। সোমবার বিদ্যালয় বন্ধ করে বনভোজন। মঙ্গলবার সরকারি ছুটি। এমনিতেই
শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার ওপর এভাবে ছুটি দিয়ে বনভোজন করা ঠিক হয়নি। অনুষ্ঠানটি যেকোনো ছুটির দিনে করা উচিত ছিল বলে জানান তারা।
শিক্ষক সমিতির নেতারা বলছেন, সংরক্ষিত ছুটি নিয়েই তারা আয়োজন করেছেন। পরে ছুটি বাতিল করা হলে সবাই ক্লাসে ফিরে গেছে।
এদিকে, কিভাবে ও কেন ছুটি দিয়েছে তা জানতে চুয়াডাঙ্গা উপজেলার শিক্ষা অফিসার লাইলা তাসলিমা নাসরিনের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। আজ মঙ্গলবারের মধ্যে ব্যাখা দিতে বলা হয়েছে।
এ আয়োজনে রাজনীতি দলেন নেতারা এ মিলনমেলায় অংশ নেন। স্কুল বন্ধ রেখে এই আয়োজন করায় আলোচনার জন্ম হলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, সহকারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার সহ প্রায় সব কর্মকর্তা কমচারী দাওয়াত পেলেও শেষ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন যোগ দেননি। তবে, পিকনিকের চাঁদা দিলেও অনেকের ভাগ্যে জোটেনি পিকনিকের রান্না করা বাহারী খাবার।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সংরক্ষিত ছুটির আবেদন করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমাদের ছুটি মঞ্জুর করেন। এরপরই আমরা মিলনমেলা ও বনভোজনের আয়োজন করা হয়। আয়োজন চলাকালীন সময়ে হঠাৎ আমাদের জানানো হয় ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এখনি স্কুল খোলার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। এরপরই বেলা ২টার মধ্যে আমরা গুছিয়ে বের হয়।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষকরা বছরে তিনটি সংরক্ষিত ছুটি পেয়ে থাকেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা ছুটি পাশ করিয়ে আয়োজন করেছিলাম। তবে কয়েকটা বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অংশগ্রহণ না করায় তাদের বিদ্যালয় খোলা ছিল। তবে এ বিষয়টি এখন কেন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে তা আমার জানা নেই৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করা হয়। সেখানে বনভোজন ও মিলনমেলার জন্য শিক্ষকদের জনপ্রতি ৫শ’ টাকা চাঁদার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন মহিলা শিক্ষিকা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সমিতির নেতারা বনভোজনের জন্য ৫০০ টাকা টাকা চাঁদা তুলছেন। বনভোজনে শিক্ষকদের যাওয়ার জন্য কোন যানবহনের ব্যবস্থা রাখেনি। ১৫ কিলোমিটার পথ নিজ ব্যবস্থায় যেতে হবে। তাই আমার মত অনেকেই চাঁদা দিয়েও বনভোজনে অংশ নেইনি।
বনভোজনে অংশ নেয়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, আগে কখনোই
বিদ্যালয় বন্ধ রেখে এভাবে প্রাথমিক শিক্ষকদের বনভোজন আয়োজন হয়নি। বনভোজনের জন্য
প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ৫০০ টাকা করে চাঁদা নেয়া হয়। কিন্ত আয়োজনে
ত্রুটি থাকায় শেষ পর্যন্ত অনেক শিক্ষক খাবার পায়নি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার লাইলা তাসলিমা নাসরিন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, শিক্ষা অফিসারের অনুমতিক্রমে প্রধান শিক্ষকরা বছরে তিনদিন সংরক্ষিত ছুটি নিতে পারেন৷ আমরা শিক্ষকরা বিশেষ করে শিক্ষক সমিতির যারা আছেন উনারা চাইছিলেন তাদের আয়োজনে পিকনিক করবেন। তাই সকল শিক্ষকগণ সংরক্ষিত ছুটির জন্য আবেদন করেন। তারই পরিপেক্ষিতে আমি ছুটি দিই।
শিক্ষা অফিসার লাইলা তাসলিমা নাসরিন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, এর আগে কখনো এমন হয়নি। শিক্ষকরা সংরক্ষিত ছুটি নিয়ে থাকেন। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে শিক্ষকদের মধ্যে দুটি গ্রুপিংয়ের কারণে রিপোর্ট হয়েছে৷ আয়োজন চলাকালীন সময়ে ছুটি বাতিল করা হলে সকল শিক্ষকরা তাদের বিদ্যালয়ে যায় এবং ক্লাস শুরু করেন। এ বিষয়ে ব্যাখা জানতে চেয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। আমি ব্যাখা দিব।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অহীন্দ্র কুমার মন্ডল রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ছুটি ক্যান্সিল করে বিদ্যালয় খোলা হয়েছে। সারাদিন ক্লাসও হয়েছে৷ ছুটি কিভাবে দিয়েছিলেন, কেন দিয়েছেন তা জানতে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবারের মধ্যেই ব্যাখা জানাতে বলা হয়েছে।
এএইচ