চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ডিউটিরত নার্সিং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশালীন ও মারমুখি আচরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তার দাবিতে পুরো হাসপাতালজুড়ে কর্মবিরতিতে রয়েছে নার্সিং শিক্ষার্থীরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রতিটা ওয়ার্ডের রোগী ও সরকারি স্টাফরা।
গত মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তিরত নারীর স্বামী ও এক স্বজন নার্সিং শিক্ষার্থীদের এ আচরণ করেন। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরা কর্মবিরতে রয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা পর্যন্ত তারা ডিউটিতে ফেরেননি বলে খোজ নিয়ে জানা গেছে।
নার্সিং শিক্ষার্থীরা বলছে, যতক্ষন ডিউটিরত অবস্থায় নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত না হবে ততক্ষন তারা ডিউটিতে যাবেন না।
মঙ্গলবার রাতে ঘটনার সময় গাইনি ওয়ার্ডে ডিউটিরত নার্স নাজমিন আক্তার রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমাদের আগের ডিউটিরতদের মধ্যে কেউ ওই রোগীর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ছোট কাগজে একটি ইনজেকশনের নাম লিখে কিনে আনতে বলেছিলেন। পরে আমাদের ডিউটিরত সময় তারা এসে বলেন, এই ইনজেকশন কে লিখেছে। ওয়ার্ডে থাকা ভর্তির কাগজ নিয়ে টানাটানি করতে থাকে। ডিউটিরত নার্সিং শিক্ষার্থীদের নাম জিজ্ঞাসা করে। পরে তাদের মুখের মাস্ক মুখে দেয় এবং অশালীন আচরণ ও মারমুখি হতে উদ্যত হন তারা। আমি বলি কি হয়েছে আমাকে বলেন, ওরা শিক্ষার্থী। যা বলার আমাকে বলেন। তারা কোনমতেই আমার কথা শুনছিল না। শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই খারাপ আচরন শুরু করে তারা।
তিনি আরও বলেন, এমকি ওই রোগীর স্বামী ও এক স্বজন ডিউটিরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একান্তই কথা বলতে চাপ দিতে থাকেন। পরিস্থিতি অবনতি হলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আব্দুল কাদেরকে কল করলে তিনি দ্রুত গাইনি ওয়ার্ডে আসেন। পরবর্তীতে তিনিও জরুরি বিভাগে রোগী আছে বলে চলে যান। নার্সিং সুপারভাইজার রোকেয়াকে কল করলে তিনি সেনাবাহিনীকে জানাতে বলেন। এ সময় আমরা কোন কারোর সহযোগিতা পাইনি। এমনকি তারা আমাদের মোবাইল বের করতেও দিচ্ছিলো না।
নাজমিন আক্তার রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, এরপর নার্সিংয়ের পুরুষ শিক্ষার্থীদের ডাকা হলে তারা ঘটনাস্থলে আসে এবং প্রতিবাদ করে। তাৎক্ষণিক নিরাপত্তাহীনভাবে ঝুকিতে ডিউটি করবে না জানিয়ে হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে থেকে নার্সিং শিক্ষার্থীরা ডিউটি ছেড়ে নার্সিং ইনস্টিটিউটে চলে যায়। এছাড়া আমরাও নিজেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এ দিকে, সদর হাসপাতালের ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, পুরুষ-নারী মেডিসিন ওয়ার্ডে ডিউটি করছেন একজন সিনিয়র নার্স। নার্সিং শিক্ষার্থীরা না থাকায় রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। এতে রোগীরা ঠিকমতো সেবা পাচ্ছেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়ার্ডের কয়েকজন সিনিয়র স্টাফ নার্সরা রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, নার্সিং শিক্ষার্থীরা না থাকায় একজন নার্স দিয়ে ওয়ার্ডে সেবা দিতে চরম কষ্টকর হয়ে হচ্ছে। দুই মেডিসিন ওয়ার্ডে দিনে ১৫০-২০০ রোগী ভর্তি হয়। এতে একজন নার্সের দ্বারা চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়।
তারা আরও বলেন, শুধু নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের সাথেই না। প্রতিনিয়তই আমাদের সঙ্গে রোগীর স্বজনরা খারাপ আচরণ করেন। এর কোন প্রতিকার নেই। আমরা নিরাপত্তাহীনভাবে ডিউটি করছি। দ্রুত এর প্রতিকার চান তারা।
খোজ নিয়ে জানা যায়, গাইনি ওয়ার্ডে ১৩ নাম্বার বেডে রিমা নামের এক নারী রক্তশূণ্যতা নিয়ে ভর্তি হন। গাইনি ওয়ার্ড থেকে মঙ্গলবার সকালে যে ইনজেকশনের নাম লিখে দেখা হয়েছিল সেখানে কত পাওয়ারের ইনজেকশন তা উল্লেখ করেনি। রাতে রোগীর ফার্মেসি থেকে ইনজেকশন ক্রয় করতে গেলে পুনরায় ইনজেকশনের পাওয়ার লিখে আনতে বলেন। যেহেতু ওয়ার্ডে দিনে ৩ টা শিফটে ডিউটি করা হয়। মঙ্গলবার সকালে যারা ডিউটিতে ছিলেন তারা রাতে ছিলেন না। ওই নারী রোগীর স্বামী ও স্বজনরা রাতে ডিউটিরত নার্স ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এই খারাপ আচরন করেন। তবে ওই নারী ও তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে একাধিক নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন মন্তব্য করবেন না বলে জানান।
চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর ফরিদা ইয়ামিন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, শিক্ষার্থীরা একটি দরখাস্ত দিয়েছে আমার নিকট। তারা ডিউটিরত অবস্থায় নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা উল্লেখ করেছেন। আমি তাদের এই দরখাস্তটি সিভিল সার্জনের নিকট পাঠিয়েছি। তিনি ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, শুনেছি রোগীর স্বজনরা নার্সিং শিক্ষার্থীদের ডিউটিরত অবস্থায় তাদের মুখের মাস্ক ও হিজাব খুলে দিয়েছে। তাদের সঙ্গে খারাপ আচরন করেছে। এরপর তারা ডিউটি থেকে কর্মবিরতিতে রয়েছে।
এএইচ