জনরোষের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। এই সুযোগে অনেকেই বাড়ি, প্রতিষ্ঠানে হামলার পাঁয়তারা করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে।
অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু খুলে দিলে তবুও আতঙ্কে আছেন চুয়াডাঙ্গার মানুষ। পুলিশ না থাকায় অনেকটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান অনেকে।
এজন্য নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিজেরাই পাহারা বসিয়েছেন। চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই রোধে বিভিন্ন মহল্লাতেও রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন সাধারন মানুষ।
শহরের বিভিন্নস্থানে ঘুরে ঘুরে চিত্র দেখা গেছে, সকাল থেকে দোকানপাট ও অফিস-আদালত, ব্যাংক খুললেও দুপুরের পরই বেশিরভাগ বন্ধ হয়ে যায়। খোলা মেলেনি ব্যাংকের এটিএম বুথও। জেলাবাসীর আশঙ্কা, আর্মি টহল দিয়ে চলে যাওয়ার পর ঘটতে পারে হামলা-লুটপাট।
তাছাড়া অনেক পুরনো অপরাধীদের রাস্তাঘাটে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন অনেকে। যারা একসময় ছিনতাই-চুরির সাথে জড়িত ছিল। পুলিশ থাকলে অভিযোগ করা যায় কিন্তু এখন থানা, ফাঁড়ির সব পুলিশ সদস্যরা এখন নিষ্ক্রিয় রয়েছে। অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই। পুলিশ শূণ্য চুয়াডাঙ্গায় ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় ভেঙে পড়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থা। হামলার আশঙ্কায় রাত জেগে ব্যবসায়ীরা পাহারা দিয়েছেন বিভিন্ন বিপনী বিতান।
গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ক্ষমতার পট পরিবর্তনে সকাল থেকেই খুলেছে স্কুল-কলেজ, ব্যাংক-অফিস, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যাও ছিল বেশ। তবে সবকিছু খুললেও কাজ ছিল ঢিলেঢালা। অফিসে লোকজন ছিল কম, যেকোনো সময় হামলার আশঙ্কায় ভীত ছিলেন কর্মরতরা।
লুটপাটের আশঙ্কায় ব্যাংকের এটিএম বুথগুলো ছিল বন্ধ, ব্যাংক খুললেও অল্প সময় পর তা বন্ধ হয়ে যায়। অনেক গ্রাহক জানান, দুপুরের পর গিয়ে ব্যাংক খোলা পাননি। দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা প্রহরী জানান, সকালে ব্যাংক খুলে দুপুরের দিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক অফিস ছাড়াও দোকানপাটেরও একই অবস্থা ছিল। সকালে বেলা করে খুলে আবার দুপুরের পরই বন্ধ হয়ে যায় এসব দোকান। তবে ছোটাখাটো দোকান খুললেও নামদামি কোনো ব্রান্ডের দোকান বা ফ্যাশন হাউস খুলতে দেখা যায়নি।
নিজেদের নিরাপত্তায় নিজেরাই রাতজেগে পাহারা দিচ্ছেন দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শহরের সদর থানার সামনে স্বর্ণ পট্টিতে রাত জেগে পাহারা দিতে দেখা যায় ব্যবসায়ী ও করিগরদের। এসময় স্বর্ণ শিল্পী সমিতির এক নেতা নিজাম উদ্দীন বলেন, ‘থানার সামনে থেকেও এখন নিরাপত্তা নেই। পুলিশের দেখা মিলছে না। তাই নিজেদের জান-মাল রক্ষায় নিজেরাই মাঠে নেমেছি। অধিক গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানের দায়িত্ব নিয়ে আমরাই পাহারা দিচ্ছি।’
এদিকে, পুলিশ না থাকায় নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি ভেঙে পড়েছে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাও। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আগের মতো যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে জেলাজুড়ে। বিভিন্ন সিএনজি ও ইজিবাইক স্ট্যান্ডে ছিল সারি সারি অটোরিকশা দাঁড়ানো। বাইরে থেকেও প্রচুর যানবাহন শহরে প্রবেশ করেছে।
ভুক্তোভোগীরা জানান, তিনদিন থেকে পুলিশ নেই, লুটপাট হওয়ার খবর শুনছি। তাই সন্ধ্যার আগে বাসাবাড়িতে যেতে হবে। সেই তাড়ায় সবাই হন্তদন্ত হয়ে ছুটছেন। সবার মধ্যেই এক নীরব আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এএইচ
One thought on “তবুও আতঙ্কে কাটছে না চুয়াডাঙ্গার মানুষের, নিজেরাই রাত জেগে দিচ্ছেন পাহারা”