ঈদুল আজহার পর থেকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডাইরিয়া ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন শিশুসহ বয়োবৃদ্ধরা ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন। আবার রোগির চাপ রয়েছে বহিঃবিভাগেও।
রোববার (২৩ জুন) দুপুরে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছিয়া খাতুন (৮০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আছিয়া খাতুন চুয়াডাঙ্গা শহরের বাগানপাড়ার মৃত আশরাফ আলীর মেয়ে।
চিকিৎসকরা বলছেন, স্বাস্থ্য সচেতন না থাকা এসব রোগের প্রধান কারণ। একদিকে গরম আবহাওয়া, অন্যদিকে এসময়ে জীবাণুযুক্ত পানি পান, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস ও শিশুদের নিরাপদে না রাখা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া ঈদে অতিরিক্ত গোসতসহ অন্যান্য বাইরের খাবার খাওয়ার কারণে ডায়রিয়া রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ও ডাইরিয়া ওয়ার্ড সুত্রে জানা গেছে, গত ৭ দিনে অর্থাৎ ১৭ জুন থেকে ২৩ জুন বেলা ৩টার পর্যন্ত ডাইরিয়া ওয়ার্ডের নারী, শিশু, বয়োবৃদ্ধসহ মোট ১৭৩ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া
বহির্বিভাগে প্রতিদিন ডাইরিয়া আক্রান্ত হয়ে অনেকে রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সদর হাসপাতালে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছিয়া খাতুনের মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা জানায়, আছিয়া খাতুন বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। সম্প্রতি তার ডায়রিয়া শুরু হয়। অবস্থার অবনতি হলে রোববার সকালে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে আসলে চিকিৎসক ভর্তি করে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে পাঠায়। দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. নাজমুস শাকিব রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে আছিয়া খাতুনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আজ সকালে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে আছিয়া খাতুন সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। দুপুরে চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি মারা যান।
রোববার দুপুরে সরজমিনে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে একাধিক রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের।
নাজমুল নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, ঈদুল আজহার রাত থেকে হঠাৎ অ্যাসিডিটি বেড়ে যায়। পরবর্তীতে অ্যাসিডিটির ওষুধ খেলে কমে যায়। গত পরশুদিন রাত থেকে প্রচন্ড পেটে ব্যাথা শুরু হতে থাকে। সেই রাত থেকেই ডায়রিয়া শুরু হয়। পরদিন সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।
আহাদ আলী নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, কুরবারি ঈদের দুদিন পর থেকে বমি ও অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি সমস্যা শুরু হয়। এর আগে অতিরিক্ত তৈলাক্ত জাতীয় খাবার, ভাজাপোড়া-চটপটি খেয়েছিলাম। খাওয়ার পরই আরও বেশি গ্যাস্টিকের সমস্যা অনুভব করি। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে গ্যাস্টিকের ওষুধ খেয়ে কম হয়নি। গতকাল সকাল থেকে থেকে হঠাৎ শুরু হয় ডায়রিয়া। ওরপরই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।
আমেনা খাতুন নামের এক নারী বলেন, গত চারদিন আগে আমার ৮ বছরের ছেলের হঠায় বমি শুরু হয়। এরপর থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়। পরিস্থিতি বেগতিক হলে শুক্রবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। সুস্থ হওয়ায় গতকাল সকালে আমাদের ছাত্রপড় দিয়েছেন চিকিৎসক।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন একজন বৃদ্ধা মারা গেছেন বলে জেনেছি। তিনি নানান রোগে আক্রান্ত ছিলেন, এবং সম্প্রতি ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে গতকাল ভর্তি হয়েছিলেন। দুপুরে তিনি মারা যায়।
তিনি আরও বলেন, একদিকে গরম, অন্যদিকে ঈদের মধ্যে অতিরিক্ত গরু, খাসির গোসত বেশি খাওয়া, এবং বাহিরে ঘোরাঘুরির সময় ফুচকা- চটপটি ইত্যাদি ফাস্ট ফুড আইটেম বেশি খাওয়ার কারনে বদহজম থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। বাসি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, রাস্তার ধারের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রতি মানুষের সচেতনতা না বাড়লে ডায়রিয়া মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে। এছাড়া গরমে অনেকের মাঝে পানিশূন্যতাও তৈরি হয়ে থাকে। এজন্য প্রয়োজন গরমে বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করা, ফলমূলের শরবত পান করতে হবে।
বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। ৬ মাসের বড় বাচ্চাদের বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য নরম জাতীয় খাবার দিতে হবে।
এএইচ