১০:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় পুলিশের বিরুদ্ধে দুই সাংবাদিককে হেনস্থা ও মারধরের অভিযোগ

চুয়াডাঙ্গায় শিমুল হোসেন নামে এক ভিডিও সাংবাদিককে হেনস্থা-মারধর এবং ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক কামরুজ্জামান সেলিমের মোবাইলফোন কেড়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

রোববার (২ জুন) রাত ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সাতগাড়িতে এঘটনা ঘটে।

তবে মারধর ও মোবাইল কেড়ে নেয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি বলে অস্বীকার করেছেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা। পুলিশ বলছে, ওই ভিডিও সাংবাদিকই পুলিশের কাজে (সরকারি কাজ) বাধা প্রদান করেছেন। তাকে কোন মারধরের ঘটনা ঘটেনি।

পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, সাতগাড়ি গ্রামে এক নারীকে মারধরের অভিযোগ বিষয়ে তদন্তে যান চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) নাসরিন আক্তারসহ তার সঙ্গীয় ফোর্স। সেখানেই এঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধির ক্যামেরাপারসন (ভিডিও সাংবাদিক) শিমুল হোসেন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, রোববার সন্ধ্যার পর আমি নিজের বাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এসময় সদর থানা পুলিশের এএসআই নাসরিন আক্তাসহ একটি টিম আসেন। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাকে কল করতে বলেন আমাকে। তার ফোন নাম্বার আমার কাছে নেই বলে জানালে পুলিশের এক সদস্য বলেন, তাহলে তুই এখানে কি করছিস? সর এখান থেকে। পরে আমার পরিচয় (ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক) জানালে সাংবাদিকের পরিচয়পত্র দেখতে চান কনস্টেবল শাহিন। পরিচয়পত্র বাড়িতে আছে জানালে আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। পরে বিষয়টি ডিবিসি নিউজের চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি সাংবাদিক কামরুজ্জামান সেলিম ভাইকে জানালে তিনি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানায়। পরে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এএসআই নাসরিনের নিকট কল করে জানানোর পর কনস্টেবল শাহিন আরও উত্তেজিত হয়ে বলেন, তোকে মারেনি তো ভাগ্য ভাল।

তিনি আরও বলেন, এর কিছুক্ষন পর সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামুন ঘটনাস্থলে এসে আমাকে বলেন, তুই পুলিশের কাজে বাধা কেন দিয়েছিস? পরে আমাকে মারধর করে পুলিশের গাড়িতে তোলেন। খবর পেয়ে সাংবাদিক কামরুজ্জামান সেলিম ভাই ঘটনাস্থলে এসে ছবি তুলতে গেলে তার মোবাইলও কেড়ে নেই পুলিশ। পরে লোকজন জড়ো হলে আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে তারা চলে যায়।

এ বিষয়ে এএসআই নাসরিন আক্তার রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, এক নারী মারধরের অভিযোগ করেছিলেন তার স্বামীসহ দুজনের বিরুদ্ধে। আমরা ঘটনাস্থলে খবর পেয়ে ওই নারীর স্বামী পালিয়ে যান। পরে ওই নারীর স্বামীকে হাজির করতে বলে আমরা অভিযোগকারির বাড়িতে অবস্থান করি। এসময় শিমুল হোসেন নামের এক ছেলে আমাদের কথাবার্তা ভিডিও ধারণ করছিলেন। তার পরিচয় জানতে চাইলে সে অভিযোগকারী নারীর প্রতিবেশি বলে জানান। পরে সেখান থেকে তাকে চলে যেতে বললে তিনি যেতে অস্বীকার করেন। পরে নিজেকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন। এসময় আমার এক কনস্টেবল শাহিন তার সাংবাদিক পরিচয়পত্র দেখাতে বললে তিনি দেখাতে ব্যর্থ হন। পরে কনস্টেবল তার গায়ে (সামান্য ধাক্কা দিয়ে) হাত দিয়ে চলে যেতে বললে তার ইগোতে হয়তো লেগেছে। পরে ওই সাংবাদিক পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান। পরে এসআই মামুন স্যার ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নেন।

তিনি আরও বলেন, ওই সাংবাদিকই আমাদের সরকারি কাজে বাধা প্রদান করেছে্ন। সাংবাদিককে হেনস্থা বা মারধর করা হয়নি। এটা সম্পন্ন ভিত্তিহীন।

ডিবিসি নিউজের চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি কামরুজ্জামান সেলিম রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমি ঘটনাস্থলে পৌছে দেখি আমার ক্যামেরাপারসন শিমুল হোসেনকে পুলিশের পিকআপ ভ্যানে তুলেছে। এসময় পুলিশকে বলা হয় যেহেতু থানাতেই নিয়ে যাবেন তাই একটা ছবি তুলে রাখি। এসময় ছবি তুলতে গেলে আমাকে বাধা প্রদানসহ মোবাইল কেড়ে নেই। এখন দেখছি মোবাইলে ঠিকঠাক মতো কাজ করছেনা।

এসএই মামুন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, এএসআই নাসরিনসহ তার টিমকে ওই ভিডিও সাংবাদিকের পরিবার অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন এমন সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। সেখানে কোন সাংবাদিককে মারধর বা হেনস্থার ঘটনা ঘটেনি। তবে সেখানে আগে কি ঘটনা ঘটেছে আমি জানিনা।

চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) নাজিম উদ্দীন আল আজাদ জানান, বিষয়টি দুঃখজনক। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য সাংবাদিকদের কাছে সময়ও চান তিনি।

এদিকে, এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন জেলার সাংবাদিক নেতারা। এ ঘটনার সঠিক তদন্ত ও উপযুক্ত শাস্তি না হলে মানববন্ধন ও বিক্ষোভের ঘোষনাও দেন তারা।

2 thoughts on “চুয়াডাঙ্গায় পুলিশের বিরুদ্ধে দুই সাংবাদিককে হেনস্থা ও মারধরের অভিযোগ

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

দর্শনা থানা পুলিশের অভিযানে ৬ কেজি গাজাসহ দুজন আটক

চুয়াডাঙ্গায় পুলিশের বিরুদ্ধে দুই সাংবাদিককে হেনস্থা ও মারধরের অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ০২:৫৯:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ জুন ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় শিমুল হোসেন নামে এক ভিডিও সাংবাদিককে হেনস্থা-মারধর এবং ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক কামরুজ্জামান সেলিমের মোবাইলফোন কেড়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

রোববার (২ জুন) রাত ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সাতগাড়িতে এঘটনা ঘটে।

তবে মারধর ও মোবাইল কেড়ে নেয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি বলে অস্বীকার করেছেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা। পুলিশ বলছে, ওই ভিডিও সাংবাদিকই পুলিশের কাজে (সরকারি কাজ) বাধা প্রদান করেছেন। তাকে কোন মারধরের ঘটনা ঘটেনি।

পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, সাতগাড়ি গ্রামে এক নারীকে মারধরের অভিযোগ বিষয়ে তদন্তে যান চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) নাসরিন আক্তারসহ তার সঙ্গীয় ফোর্স। সেখানেই এঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধির ক্যামেরাপারসন (ভিডিও সাংবাদিক) শিমুল হোসেন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, রোববার সন্ধ্যার পর আমি নিজের বাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এসময় সদর থানা পুলিশের এএসআই নাসরিন আক্তাসহ একটি টিম আসেন। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাকে কল করতে বলেন আমাকে। তার ফোন নাম্বার আমার কাছে নেই বলে জানালে পুলিশের এক সদস্য বলেন, তাহলে তুই এখানে কি করছিস? সর এখান থেকে। পরে আমার পরিচয় (ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক) জানালে সাংবাদিকের পরিচয়পত্র দেখতে চান কনস্টেবল শাহিন। পরিচয়পত্র বাড়িতে আছে জানালে আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। পরে বিষয়টি ডিবিসি নিউজের চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি সাংবাদিক কামরুজ্জামান সেলিম ভাইকে জানালে তিনি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানায়। পরে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এএসআই নাসরিনের নিকট কল করে জানানোর পর কনস্টেবল শাহিন আরও উত্তেজিত হয়ে বলেন, তোকে মারেনি তো ভাগ্য ভাল।

তিনি আরও বলেন, এর কিছুক্ষন পর সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামুন ঘটনাস্থলে এসে আমাকে বলেন, তুই পুলিশের কাজে বাধা কেন দিয়েছিস? পরে আমাকে মারধর করে পুলিশের গাড়িতে তোলেন। খবর পেয়ে সাংবাদিক কামরুজ্জামান সেলিম ভাই ঘটনাস্থলে এসে ছবি তুলতে গেলে তার মোবাইলও কেড়ে নেই পুলিশ। পরে লোকজন জড়ো হলে আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে তারা চলে যায়।

এ বিষয়ে এএসআই নাসরিন আক্তার রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, এক নারী মারধরের অভিযোগ করেছিলেন তার স্বামীসহ দুজনের বিরুদ্ধে। আমরা ঘটনাস্থলে খবর পেয়ে ওই নারীর স্বামী পালিয়ে যান। পরে ওই নারীর স্বামীকে হাজির করতে বলে আমরা অভিযোগকারির বাড়িতে অবস্থান করি। এসময় শিমুল হোসেন নামের এক ছেলে আমাদের কথাবার্তা ভিডিও ধারণ করছিলেন। তার পরিচয় জানতে চাইলে সে অভিযোগকারী নারীর প্রতিবেশি বলে জানান। পরে সেখান থেকে তাকে চলে যেতে বললে তিনি যেতে অস্বীকার করেন। পরে নিজেকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন। এসময় আমার এক কনস্টেবল শাহিন তার সাংবাদিক পরিচয়পত্র দেখাতে বললে তিনি দেখাতে ব্যর্থ হন। পরে কনস্টেবল তার গায়ে (সামান্য ধাক্কা দিয়ে) হাত দিয়ে চলে যেতে বললে তার ইগোতে হয়তো লেগেছে। পরে ওই সাংবাদিক পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান। পরে এসআই মামুন স্যার ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নেন।

তিনি আরও বলেন, ওই সাংবাদিকই আমাদের সরকারি কাজে বাধা প্রদান করেছে্ন। সাংবাদিককে হেনস্থা বা মারধর করা হয়নি। এটা সম্পন্ন ভিত্তিহীন।

ডিবিসি নিউজের চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি কামরুজ্জামান সেলিম রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমি ঘটনাস্থলে পৌছে দেখি আমার ক্যামেরাপারসন শিমুল হোসেনকে পুলিশের পিকআপ ভ্যানে তুলেছে। এসময় পুলিশকে বলা হয় যেহেতু থানাতেই নিয়ে যাবেন তাই একটা ছবি তুলে রাখি। এসময় ছবি তুলতে গেলে আমাকে বাধা প্রদানসহ মোবাইল কেড়ে নেই। এখন দেখছি মোবাইলে ঠিকঠাক মতো কাজ করছেনা।

এসএই মামুন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, এএসআই নাসরিনসহ তার টিমকে ওই ভিডিও সাংবাদিকের পরিবার অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন এমন সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। সেখানে কোন সাংবাদিককে মারধর বা হেনস্থার ঘটনা ঘটেনি। তবে সেখানে আগে কি ঘটনা ঘটেছে আমি জানিনা।

চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) নাজিম উদ্দীন আল আজাদ জানান, বিষয়টি দুঃখজনক। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য সাংবাদিকদের কাছে সময়ও চান তিনি।

এদিকে, এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন জেলার সাংবাদিক নেতারা। এ ঘটনার সঠিক তদন্ত ও উপযুক্ত শাস্তি না হলে মানববন্ধন ও বিক্ষোভের ঘোষনাও দেন তারা।