চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার দীননাথপুরে অবস্থিত জামেয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া কওমিয়া মাদরাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে ২ মাদরাসাছাত্রকে বেধড়ক পিটিয়েছেন এক শিক্ষক।
ঘুমের মধ্যে হুজুরের ভাগ্নের গায়ে পা লাগায় ক্ষুব্ধ হয়ে শিশু শিক্ষার্থী দুইজনকে কাঠ দিয়ে বেধড়ক পেটান ওই মাদরাসার শিক্ষক ইব্রাহিম। গুরুতর আহত অবস্থায় দুই ছাত্র বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে। এ ঘটনার পর থেকে স্থানীয়রা এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের পরিবার ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছে।
ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মাখালডাঙ্গা ইউনিয়নের কুকিয়া চাঁদপুর গ্রামের গোরস্থানপাড়ার মিলনের ছেলে মিরাজ (১২) ও একই এলাকার বজলুর রহমানের ছেলে রাব্বি (১৩)। তারা দুজনই এই মাদরাসার ছাত্র।
আহত শিক্ষার্থী মিরাজ রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা চারজন মিলে মাদরাসার মসজিদে ঘুমাচ্ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন হুজুর ইব্রাহিমের ভাগ্নে হুজাইফা। ঘুমের ঘোরে ভুলবশত হুজাইফার গায়ে পা লাগে। বিষয়টি নিজের চোখে দেখে ফেলেন শিক্ষক ইব্রাহিম। এরপর কোনো কথা না বলে ঘুমন্ত অবস্থাতেই লাঠি হাতে পেটাতে শুরু আমাকে ও রাব্বিকে। পরে আমাদের দুজনকে পাশের কক্ষে নিয়ে গিয়ে মেহগনি গাছের চেলা দিয়ে বেধড়ক মারতে থাকে।
আহত শিক্ষার্থী রাব্বি রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে জানায়, আমাকে কেন মারছেন। জিজ্ঞাসা করতেই আরও বেশি মারধর করে মেহগনি গাছের চেলা কাঠ দিয়ে। মারধরের পর শিক্ষক হুমকি দেন— ঘটনাটি পরিবারকে জানালে তাদের জবাই করে টুকরো টুকরো করে ফেলা হবে অথবা মাদরাসার ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হবে।
মিরাজের মা রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, “আমি বাড়িতে কাজ করছিলাম। হঠাৎ দেখি আমার ছেলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বাড়ি ফিরেছে। শরীরে ধুলোবালি লেগে আছে। কী হয়েছে জানতে চাইলে ছেলেটি জানায়, ঘুমের মধ্যে হুজুরের ভাগ্নের গায়ে পা লেগে যাওয়ায় হুজুর নির্মমভাবে মারধর করেছে। জামা খুলে দেখি পুরো শরীরে আঘাতের দাগ। আমার সন্তান অন্যায় করলে আমাদের বলতে পারতেন, কিন্তু এভাবে মারধর করা মানবিক নয়। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
আহত রাব্বির বাবা বজলুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, “আমার ছেলে ও তার সহপাঠীকে যেভাবে নির্দয়ভাবে পেটানো হয়েছে, তা সহ্য করা যায় না। এর আগেও এই শিক্ষক এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেছিলেন। ছেলে যদি কোনো অন্যায় করত, আমাদের জানানো যেত। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই এবং মামলা করব।”
এ বিষয়ে শিক্ষক ইব্রাহিম ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মেহেবুবা মুস্তারী মৌ রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, “আহত দুই শিক্ষার্থী মারাত্মকভাবে জখম হয়েছে। তাদের শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর দুজনকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছে।”
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদূর রহমান রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, “ঘটনাটি আমরা জেনেছি। পরিবারকে থানায় এসে অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। রাত ১১টা পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এএইচ
অর্ণব আহমেদ আশিক, নিজস্ব প্রতিবেদক 






















