০৫:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এখনো শরীরে ২২টি ছররা গুলি বয়ে বেড়াচ্ছেন জুলাইযোদ্ধা চুয়াডাঙ্গার আলাউদ্দিন

  • আফজালুল হক
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৪১:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
  • ৫৫৫ Views

পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অপারেশন করে গলা থেকে গুলি বের করা হলেও শরীরে এখনো প্রায় ২০-২২টা গুলি রয়েই গেছে। এই গুলিগুলো বের করলে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তাই শরীরে গুলি নিয়েই শারীরিক যন্ত্রণার সঙ্গে দৈনন্দিন কাজ করে যাচ্ছেন আলাউদ্দিন।

জুলাইযোদ্ধা আলাউদ্দিন চুয়াডাঙ্গার জীবননগর পৌর এলাকার ৮নং ওয়ার্ডের বসতিপাড়ার মৃত আব্দুল হাইয়ের ছেলে। চাকরির সুবাদে বর্তমানে আলাউদ্দিন স্ত্রী এবং দুই সন্তান আলিফ (১০) ও আনিসকে (৪) নিয়ে কুষ্টিয়া পৌর শহরের থানাপাড়া এলাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। তিনি গ্রিন আর্কিটেক্ট নামক একটি কোম্পানিতে কর্মরত।

রেডিও চুয়াডাঙ্গার প্রতিবেদনের সঙ্গে আলাপকালে আলাউদ্দিন বলেন, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার পতনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলাম। চাকরির সুবাদে তখনো আমি কুষ্টিয়াতে আমার পরিবার নিয়ে বসবাস করতাম। ওখান থেকেই আমি আন্দোলনে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলাম। আগস্টের ৫ তারিখ দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলন চলাকালীন কুষ্টিয়া থানার নিকটবর্তী স্থান থেকে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ শুরু করে। এতে আমার সামনেই এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এরপর মুহূর্তেই আমার গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান ছররা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায়।

তিনি বলেন, গুলিতে আহত হওয়ার পর সহকর্মী রকিসহ অনেকে আমাকে উদ্ধার করে প্রথমে কুষ্টিয়ার বেসরকারি আদ দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে আসেন। অবস্থার অবনতি হলে সেই দিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে গলায় অপারেশন করে ছররা গুলি বের করেন চিকিৎসক। চিকিৎসক জানিয়েছেন, শরীরের বাকি গুলিগুলো এখনই বের করার দরকার নেই। সে সময় অনেক রোগীর চাপ ছিল। পরবর্তীতে একসাথে এতগুলো গুলি বের করলে শরীরে নানার ধরনের সমস্যা হতে পারে। এর কারণে শরীরের বিভিন্ন রকম সমস্যা হলেও দৈনন্দিন কাজগুলো করতে হচ্ছে।  

আলাউদ্দিন রেডিও চুয়াডাঙ্গার বলেন, সে সময় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে কুষ্টিয়ায় ভাড়া বাড়িতে থাকতাম। পৈতৃক বাড়ি জীবননগরে আমার ভাইয়ের সাথে  আম্মা থাকেন। আমি যখন আন্দোলনে গিয়েছি তখন থেকে আমার পরিবার দুশ্চিন্তার মধ্যেই দিন পার করছিল। এ সময় চারদিকে পুলিশের ধরপাকড়, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতন, এ বিষয়গুলো নিয়ে আমার পরিবার আতঙ্কের মধ্যে ছিল। তবুও আমি ফিরে আসিনি আন্দোলন থেকে, আন্দোলন চালিয়েছি। প্রথম থেকেই আমি আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম।

তিনি আরও বলেন, আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা ছেলে। আন্দোলনের আগে আমি কুয়েতে ছিলাম। আন্দোলনের পর কুয়েতে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করি আবারও। যাবতীয় ট্রেনিং করি এবং আমার ভিসাও আসে। এরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে শরীরে ২০-২২টা গুলি থাকার কারণে আমাকে আনফিট দিয়েছিল। আমার ভিসা ক্যানসেল হয়ে গিয়েছিল। আমার জন্য এটা একটা বিশাল বড় ক্ষতি। তবে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে এতে আমি অনেক খুশি।

আলাউদ্দিন রেডিও চুয়াডাঙ্গার বলেন, আমার বার্তা থাকবে, আগামীতে সেই সরকারই আসুক না কেন তারা যেন জনবান্ধব হয়। গত ১৫ বছর স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার যেসব ক্ষতিগুলো করে গেছে সে সব থেকে উন্নতি যেন হয় আমি সেই প্রত্যশা করি। আর সেই সরকারই আসুন না কেন আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের যথাযথ মর্যাদা যেন দেওয়া হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির সাবেক আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আমাদের অন্যতম সহযোদ্ধা এবং আহত আলাউদ্দিন এখনো তার বুকে অনেকগুলো গুলি নিয়ে চলছেন। তিনি এখনো সুস্থ না। চিকিৎসক বলেছেন, গুলিগুলো বের করতে হলে শরীরের চামড়া কেটে বের করতে হবে যা পরবর্তীতে ক্যান্সারের ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের জায়গা থেকে তাদের সব সময় খোঁজখবর রাখি এবং তার সর্বাত্মক সুস্থতা কামনা করি। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে কিছুটা সহযোগিতা পেয়েছেন তিনি। আগামীতে সেই সুবিধাগুলো যেন সরকার নিশ্চিত করতে পারে। রাষ্ট্র কর্তৃক যে প্রাপ্ত সম্মানটা যেন আমরা তাকে দিতে পারি। 

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে : আবহাওয়া অধিদপ্তর  

এখনো শরীরে ২২টি ছররা গুলি বয়ে বেড়াচ্ছেন জুলাইযোদ্ধা চুয়াডাঙ্গার আলাউদ্দিন

প্রকাশের সময় : ০৮:৪১:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অপারেশন করে গলা থেকে গুলি বের করা হলেও শরীরে এখনো প্রায় ২০-২২টা গুলি রয়েই গেছে। এই গুলিগুলো বের করলে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তাই শরীরে গুলি নিয়েই শারীরিক যন্ত্রণার সঙ্গে দৈনন্দিন কাজ করে যাচ্ছেন আলাউদ্দিন।

জুলাইযোদ্ধা আলাউদ্দিন চুয়াডাঙ্গার জীবননগর পৌর এলাকার ৮নং ওয়ার্ডের বসতিপাড়ার মৃত আব্দুল হাইয়ের ছেলে। চাকরির সুবাদে বর্তমানে আলাউদ্দিন স্ত্রী এবং দুই সন্তান আলিফ (১০) ও আনিসকে (৪) নিয়ে কুষ্টিয়া পৌর শহরের থানাপাড়া এলাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। তিনি গ্রিন আর্কিটেক্ট নামক একটি কোম্পানিতে কর্মরত।

রেডিও চুয়াডাঙ্গার প্রতিবেদনের সঙ্গে আলাপকালে আলাউদ্দিন বলেন, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার পতনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলাম। চাকরির সুবাদে তখনো আমি কুষ্টিয়াতে আমার পরিবার নিয়ে বসবাস করতাম। ওখান থেকেই আমি আন্দোলনে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলাম। আগস্টের ৫ তারিখ দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলন চলাকালীন কুষ্টিয়া থানার নিকটবর্তী স্থান থেকে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ শুরু করে। এতে আমার সামনেই এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এরপর মুহূর্তেই আমার গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান ছররা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায়।

তিনি বলেন, গুলিতে আহত হওয়ার পর সহকর্মী রকিসহ অনেকে আমাকে উদ্ধার করে প্রথমে কুষ্টিয়ার বেসরকারি আদ দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে আসেন। অবস্থার অবনতি হলে সেই দিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে গলায় অপারেশন করে ছররা গুলি বের করেন চিকিৎসক। চিকিৎসক জানিয়েছেন, শরীরের বাকি গুলিগুলো এখনই বের করার দরকার নেই। সে সময় অনেক রোগীর চাপ ছিল। পরবর্তীতে একসাথে এতগুলো গুলি বের করলে শরীরে নানার ধরনের সমস্যা হতে পারে। এর কারণে শরীরের বিভিন্ন রকম সমস্যা হলেও দৈনন্দিন কাজগুলো করতে হচ্ছে।  

আলাউদ্দিন রেডিও চুয়াডাঙ্গার বলেন, সে সময় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে কুষ্টিয়ায় ভাড়া বাড়িতে থাকতাম। পৈতৃক বাড়ি জীবননগরে আমার ভাইয়ের সাথে  আম্মা থাকেন। আমি যখন আন্দোলনে গিয়েছি তখন থেকে আমার পরিবার দুশ্চিন্তার মধ্যেই দিন পার করছিল। এ সময় চারদিকে পুলিশের ধরপাকড়, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতন, এ বিষয়গুলো নিয়ে আমার পরিবার আতঙ্কের মধ্যে ছিল। তবুও আমি ফিরে আসিনি আন্দোলন থেকে, আন্দোলন চালিয়েছি। প্রথম থেকেই আমি আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম।

তিনি আরও বলেন, আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা ছেলে। আন্দোলনের আগে আমি কুয়েতে ছিলাম। আন্দোলনের পর কুয়েতে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করি আবারও। যাবতীয় ট্রেনিং করি এবং আমার ভিসাও আসে। এরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে শরীরে ২০-২২টা গুলি থাকার কারণে আমাকে আনফিট দিয়েছিল। আমার ভিসা ক্যানসেল হয়ে গিয়েছিল। আমার জন্য এটা একটা বিশাল বড় ক্ষতি। তবে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে এতে আমি অনেক খুশি।

আলাউদ্দিন রেডিও চুয়াডাঙ্গার বলেন, আমার বার্তা থাকবে, আগামীতে সেই সরকারই আসুক না কেন তারা যেন জনবান্ধব হয়। গত ১৫ বছর স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার যেসব ক্ষতিগুলো করে গেছে সে সব থেকে উন্নতি যেন হয় আমি সেই প্রত্যশা করি। আর সেই সরকারই আসুন না কেন আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের যথাযথ মর্যাদা যেন দেওয়া হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির সাবেক আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আমাদের অন্যতম সহযোদ্ধা এবং আহত আলাউদ্দিন এখনো তার বুকে অনেকগুলো গুলি নিয়ে চলছেন। তিনি এখনো সুস্থ না। চিকিৎসক বলেছেন, গুলিগুলো বের করতে হলে শরীরের চামড়া কেটে বের করতে হবে যা পরবর্তীতে ক্যান্সারের ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের জায়গা থেকে তাদের সব সময় খোঁজখবর রাখি এবং তার সর্বাত্মক সুস্থতা কামনা করি। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে কিছুটা সহযোগিতা পেয়েছেন তিনি। আগামীতে সেই সুবিধাগুলো যেন সরকার নিশ্চিত করতে পারে। রাষ্ট্র কর্তৃক যে প্রাপ্ত সম্মানটা যেন আমরা তাকে দিতে পারি।