চুয়াডাঙ্গায় টানা দুই দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জেলার মানুষের জীবনযাত্রা। বৈশাখের শুরুতে এসে তেঁতে উঠেছে প্রকৃতি। ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকা মাঝারি ধরনের এই তাপপ্রবাহে পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা। খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন।
আজ বুধবার (১৭ এপ্রিল) বেলা ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রী ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। গতকাল মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বেলা ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যা গতকালও ছিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। চলতি মৌসুমে টানা দুদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হলো।
জেলার উপর দিয়ে তীব্র তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আরও কিছুদিন অব্যহত থাকবে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান।
এদিকে তীব্র গরম ও রোদের তাপের কারণে শ্রমিক, দিনমজুর, ভ্যান-রিকশা চালকরা গরমে অস্থির হয়ে পড়ছেন। একটু প্রশান্তির খোঁজে গাছের ছায়া ও ঠান্ডা পরিবেশে গা এলিয়ে দিচ্ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা ঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ছে। আবার অনেকে জরুরি প্রয়োজন ও জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচ- তাপদাহ উপেক্ষা করে কাজে বের হচ্ছেন। অনেক পথচারিদের ছাতা মাথায় দিয়ে চলাচল করছেন। এছাড়া গরমে সদর হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের হাসফাস অবস্থা। প্রত্যেক ওয়ার্ডের বেশির ভাগ ফ্যান আস্তে ঘোরার কারণে অনেকে হাত পাখা কিংবা টেবিল ফ্যান কিনতে দেখা গেছে।
চুয়াডাঙ্গা সদরের ইটভাটার শ্রমিকরা বলছেন, গত ৭/৮ দিন খুব কষ্ট হচ্ছে কাজ করতে। দুপুর হলেই ক্লান্তিতে শরীর চলছেনা। বিকেলের আগেই বাড়িতে ফিরে যেতে হচ্ছে। এমন গরম পড়লে কাজ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার কৃষক আইনুদ্দিন আল আজাদ বলেন, আমার কয়েক বিঘাজমিতে এখনো ভুট্টা রয়েছে। শ্রমিকদের সাথে করে দু দিন যাবত নিজের ভুট্টা ক্ষেতে ভুট্টা কাছটি। প্রচণ্ড রোদের কারণে গরমে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের মাঠে কাজ করায় দুস্কর হয়ে পড়ছে তাদের। নির্ধারিত সময়ের আগেই বাড়ি চলে যাচ্ছেন।
অপরদিকে, চলমান তীব্র তাপদাহে ফল ফসল রক্ষায় কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন,
■ মাটির বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে, ফলন্ত আম গাছে ৭-১০ দিন অন্তর সেচ প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া অন্যান্য ফল যেমন- লিচু, জামরুল, জাম, কাঁঠাল ইত্যাদি ফলন্ত গাছেও ৭-১০ দিন অন্তর সেচ প্রদান করা প্রয়োজন। পরিবর্তিত বেসিন পদ্ধতিতে (গাছের চারপাশে রিং তৈরী করে) সেচ প্রদান করা উত্তম। তবে প্লাবন পদ্ধতিতেও সেচ দেয়া যাবে। তাপদাহ কমলেও ফল পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত ১৫ দিন অন্তর সেচ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন, এতে ফল ঝরে পড়া কমবে ও ফলন বৃদ্ধি পাবে।
■ মাটিতে পর্যাপ্ত রস ধরে রাখার জন্য সেচের পর গাছের গোড়ায় মালচিং করা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, পাহাড়ী ও বরেন্দ্র অঞ্চলে অর্থাৎ যেখানে পানির তীব্র সংকট সেখানে অবশ্যই সেচের পর মালচিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। মালচিং এর ক্ষেত্রে কচুরীপানা, খড়, গাছের পাতা অথবা আগাছা ইত্যাদি গাছের গোড়া থেকে একটু দূরে ব্যবহার করতে হবে।
■ ফল ধারণের পর সার প্রয়োগ না করা হয়ে থাকলে, ফল ঝরা রোধে একটি ৫-৭ বছর বয়সী গাছে ১৫০- ১৭৫ গ্রাম ইউরিয়া ও ৭৫-১০০ গ্রাম এমওপি সার গাছের গোড়া থেকে ১ মিটার দূর থেকে শুরু করে আরও ১.০-১.৫ মিটার জায়গায় হালকাভাবে কুপিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে যেন সার মাটির উপর ভেসে না থাকে। সার প্রয়োগের পর অবশ্যই হালকা সেচ দিতে হবে।
যে সকল অঞ্চলে (পাহাড়ী ও বরেন্দ্র) তীব্র পানি সংকট ও তাপদাহ সেখানে গাছে সকালে অথবা বিকলে পানি স্প্রে করা যেতে পারে।
■ লিচুর ক্ষেত্রে ফল ঝরা রোধে এবং ফলের সঠিক বৃদ্ধি জন্য সাধারণত ১০-১৫ বছর বয়সী গাছের ক্ষেত্রে ২৫০-৩০০ গ্রাম ইউরিয়া ও এমওপি সার মাটিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বয়স ভেদে সারের মাত্রা কম বেশী হতে পারে। সার প্রয়োগের পর অবশ্যই হালকা সেচের ব্যবস্থা করতে হবে
চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আজ বুধবার (১৭ এপ্রিল) বেলা ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। টানা ২ দিন দেশের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গার উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আরও কিছুদিন অব্যহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।