১২:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক নিয়ে ধুম্রজাল

চুয়াডাঙ্গায় জনতা ক্লিনিকে ২ রোগীর মৃত্যু, চিকিৎসকের স্বামীর দৌড়ঝাপ

ক্লিনিকের দেয়া কাগজপত্রে অ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তারের নাম থাকলেও পরিদর্শনের পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে সকল কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশনায় সিভিল সার্জন স্পষ্ট করে বলছেন, অ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তার ব্যতিত অপারেশন করা হয়, যা মোটেও কাম্য নয়। আবার ওই অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক বলছেন, তিনি সোমবার পর্যন্ত জানতেন না, ওই রোগীর অপারেশনে তিনি ছিলেন।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সামনে ‘ট’বাজারে অবস্থিত জনতা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এক প্রসূতি ও ১৮ ফেব্রুয়ারি আরেকজন নারীর মৃত্যু হয়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামা-চাপা দেয়ার নানা পায়তারা করে। তবে বিষয়টি শেষমেষ স্বাস্থ্য বিভাগের কানে পৌঁছুলে জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্যবিভাগ ২ মার্চ ওই ক্লিনিকে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। লাইসেন্স না থাকায় ক্লিনিকটি তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। দুইজন রোগী মৃত্যুর ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়াও, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ দুইটি অপারেশন সংক্রান্ত কাগজপত্র তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জনতা ক্লিনিকের দেয়া ওই কাগজপত্রেও গড়মিল করা হয়েছে। মৃত দুই রোগীর মধ্যে মর্জিনা খাতুনের ভর্তি ফরম ও অনান্য কাজগপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভর্তির তারিখ থাকলেও সময় নেই আবার প্রস্থানের তারিখ ও সময় কোনোটাই নেই। কোন চিকিৎসকের তত্বাবধানে থাকবেন সেটাও নেই ভর্তি ফরমে। অস্ত্রোপাচারের সম্মতি পত্রে মর্জিনা খাতুনের জামাই শাওন নামের এক ব্যাক্তির স্বাক্ষর আছে।

অস্ত্রেপাচারে ডা. তাসনিম সরোয়ার এবং অ্যানেস্থেসিয়া ডা. মো. রাকিবুল ইসলামের নাম আছে। অপারেশনের সময় আছে ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায়। অপারেশন নোটে কোনো সার্জনের স্বাক্ষর পাওয়া যায়নি।

আরেক মৃত রোগী ময়না রানীর ভর্তি ফরম ও অনান্য কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি ভর্তি হয়েছেন। তবে তার ভর্তির সময় উল্লেখ নেই। আবার এই রোগীর প্রস্থানের তারিখ ও সময় কোনোটাই নেই। অস্ত্রোপাচারের সম্মতি পত্রে ময়না রানীর ভাই শ্রী রাবন রায়ের স্বাক্ষর আছে। অ্যানেস্থেসিয়া ডা. শিরিনা আক্তার শিরিন এবং অ্যানেস্থেসিয়ায় আরেকজন চিকিৎসকের নাম আছে। ভর্তি এবং অস্ত্রোপাচারের তারিখ একই দিনে ৭ ফেব্রুয়ারি। অপারেশন নোটে অপারেশনের সময় সকাল ১০টা উল্লেখ করা আছে। পোস্ট অপারেটিভ অর্ডার শীটে কোনো চিকিৎসকের স্বাক্ষর নেই।

আবার সবথেকে বড় বিষয়, দুইটি অপারেশনের অপারেশন নোট এবং পোস্ট অপারেটিভ অর্ডার শীটে কোনো রোগীর নাম নেই। সিভিল সার্জনের দপ্তরে সরবরাহ করা ওই কাগজপত্রে শুধুমাত্র রোগীদের ভর্তি ফরমে নাম পাওয়া গেছে।

তবে অপারেশন নোট এবং পোস্ট অপারেটিভ অর্ডার শীট দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি ওই রোগীদের কিনা, বা অন্য কারো কিনা। এতে নতুন বির্তকের সৃষ্টি হয়েছে, ময়না রানীর অপারেশন নিয়ে।

এদিকে, গত ২ মার্চ সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিদর্শনের পরই সিভিল সার্জন একটি পত্রের মাধ্যমে জনতা ক্লিনিককে বন্ধ করার নির্দেশ দেন। সিএস/চুয়া/শা-৩/২০২৫/৪৪৮ স্মারকের ওই পত্রে, সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দীন আহমেদ স্পষ্ট করে তিনটি ক্রটি তুলে ধরেন।

তিনটি ক্রটিতে সিভিল সার্জন বলেছেন, ‘প্রথমত উক্ত জনতা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর নামে অদ্যাবধি লাইসেন্স হয় নাই। লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন মাত্র। দ্বিতীয়ত ২০ শয্যা বিশিষ্ট ক্লিনিকে ৬ জন ডাক্তার, ১২ জন নার্স, ৬ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ বাধ্যতামূলক হলেও পরিদর্শনের সময় ১ জন ডাক্তার ও ১ জন ডিপ্লোমাধারী নার্সের উপস্থিতি পাওয়া যায়। সরকার কর্তৃক আরোপিত নিয়মানুযায়ী সকল জনবল নিয়োগ করতে হবে এবং সর্বশেষ তিন নম্বর ক্রটিতে বলা হয়েছে, সকল প্রকার অপারেশনের সময় অ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তার রাখা বাধ্যতামূলক। অথচ অ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তার ব্যতিত অপারেশন করা হয় যাহা মোটেও কাম্য নয়। অ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তার ব্যতিত অপারেশন করা যাবে না।’

এ ঘটনার পর ময়না রানীর ভর্তি ফরমের সাথে পূর্বে পান্সকৃত দুইটি শীট পিনআপ করে জমা দেয়া হয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। অদ্ভুদভাবে ময়না রানীর অপারেশনের সম্মতিপত্রে এক এ্যানেসথিসিয়া চিকিৎসকের নাম দেয়া হয়েছে।

সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য বিভাগের পরিদর্শনের সময় ওই এ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসকও সেখানে ছিলেন। ওই সময় গণমাধ্যমকর্মীরা তাকেও প্রশ্ন করেছিলেন। তবে সে সময় ওই চিকিৎসক বলেন, আমি ওই রোগীর অপারেশনে ছিলাম না। নতুন করে ওই চিকিৎসকের নাম আসায় গণমাধ্যমকর্মীদের নজরে পড়ে বিষয়টি।

নাম প্রকাশ না করতে চাইলেও ওই চিকিৎসক বলেন, ‘আমি পরিদর্শনের দিনই বলে দিয়েছিলাম, আমি ছিলাম না। প্রকৃতপক্ষে গত সোমবার পর্যন্ত আমাকে জানানোই হয়নি। সোমবার দুপুরে কাকতালীয়ভাবে আমি বিষয়টি জানতে পারি। একজন চিকিৎসকের সেবাগ্রহণকারী কোনো রোগীর সমস্যা দেখা দিলেই সেটা ওই চিকিৎসকের জানার কথা ছিলো। এতো বড় একটা ঘটনা, অথচ আমাকে বলাই হয়নি।’

ওই চিকিৎসকের দাবি, ‘অপরেশন নোটে তার স্বাক্ষর থাকলেও সেটি ওই রোগীর কিনা তা বোঝার উপায় নেই। ওপারেশন শীট বা পোস্ট অপারেটিভ অর্ডার শীটে কোনো রোগীর নাম নেই।’

আবার ময়না খাতুনের অপারেশনের সময় দেয়া আছে সকাল ১০টা। তবে ময়না খাতুনের পরিবারের লোকজনের দাবি, ময়না খাতুনকে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য ভর্তিই করা হয় বেলা ১১টার পর। এরপরই আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে ক্লিনিকটি চালু নিয়েই।

ক্লিনিক মালিকরা বলছেন, যে ক্লিনিকের লাইসেন্সই হয়নি, সেটাকে কিভাবে পূর্ববর্তী সিভিল সার্জন নিজে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করে দেন। আবার চালু রাখার অনুমতিও দেন। পরের সিভিল সার্জন বন্ধ করে দেন। ঘটনা হাস্যকর। আবার ওই ক্লিনিকটিতে দুইজন রোগী মৃত্যুর ঘটনায় এসব আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই এক চিকিৎসকের স্বামীর দৌড়ঝাপ নজরে পড়েছে গণমাধ্যমকর্মীদের।

অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতাল এলাকায় সংশ্লিষ্ট্য কয়েকজনকে ওই চিকিৎসকের উৎসুক স্বামী হুমকিও দিচ্ছেন। এসব বিষয় নিয়ে ক্লিনিকটির মালিক জান্নাতের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘অ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তার ছিলো। ওই দুই রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগ কাগজপত্র নিয়েছেন।’

সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত স্বচ্ছ হওয়ার স্বার্থে আমি তদন্ত কমিটিতে সামান্য পরিবর্তন করবো। অ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তার ছিলো বলেই আমরা জানি। যদি কোনো নাম দেয়া হয়, তাহলে তদন্তে সেসব বেরিয়ে আসবে। আদৌও তিনি ছিলেন কিনা সেটা তদন্ত করে দেখা হবে। বিষয়টি গভীরভাবে এবং স্বচ্ছতার সাথে তদন্ত করা হবে। ইতোমধ্যে ক্লিনিকটিকে বন্ধ করা হয়েছে। কোনো ভুল তথ্য প্রমাণ করার সুযোগ থাকবে না।’

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক নিয়ে ধুম্রজাল

চুয়াডাঙ্গায় জনতা ক্লিনিকে ২ রোগীর মৃত্যু, চিকিৎসকের স্বামীর দৌড়ঝাপ

প্রকাশের সময় : ১২:১৬:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫

ক্লিনিকের দেয়া কাগজপত্রে অ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তারের নাম থাকলেও পরিদর্শনের পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে সকল কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশনায় সিভিল সার্জন স্পষ্ট করে বলছেন, অ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তার ব্যতিত অপারেশন করা হয়, যা মোটেও কাম্য নয়। আবার ওই অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক বলছেন, তিনি সোমবার পর্যন্ত জানতেন না, ওই রোগীর অপারেশনে তিনি ছিলেন।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সামনে ‘ট’বাজারে অবস্থিত জনতা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এক প্রসূতি ও ১৮ ফেব্রুয়ারি আরেকজন নারীর মৃত্যু হয়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামা-চাপা দেয়ার নানা পায়তারা করে। তবে বিষয়টি শেষমেষ স্বাস্থ্য বিভাগের কানে পৌঁছুলে জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্যবিভাগ ২ মার্চ ওই ক্লিনিকে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। লাইসেন্স না থাকায় ক্লিনিকটি তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। দুইজন রোগী মৃত্যুর ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়াও, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ দুইটি অপারেশন সংক্রান্ত কাগজপত্র তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জনতা ক্লিনিকের দেয়া ওই কাগজপত্রেও গড়মিল করা হয়েছে। মৃত দুই রোগীর মধ্যে মর্জিনা খাতুনের ভর্তি ফরম ও অনান্য কাজগপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভর্তির তারিখ থাকলেও সময় নেই আবার প্রস্থানের তারিখ ও সময় কোনোটাই নেই। কোন চিকিৎসকের তত্বাবধানে থাকবেন সেটাও নেই ভর্তি ফরমে। অস্ত্রোপাচারের সম্মতি পত্রে মর্জিনা খাতুনের জামাই শাওন নামের এক ব্যাক্তির স্বাক্ষর আছে।

অস্ত্রেপাচারে ডা. তাসনিম সরোয়ার এবং অ্যানেস্থেসিয়া ডা. মো. রাকিবুল ইসলামের নাম আছে। অপারেশনের সময় আছে ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায়। অপারেশন নোটে কোনো সার্জনের স্বাক্ষর পাওয়া যায়নি।

আরেক মৃত রোগী ময়না রানীর ভর্তি ফরম ও অনান্য কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি ভর্তি হয়েছেন। তবে তার ভর্তির সময় উল্লেখ নেই। আবার এই রোগীর প্রস্থানের তারিখ ও সময় কোনোটাই নেই। অস্ত্রোপাচারের সম্মতি পত্রে ময়না রানীর ভাই শ্রী রাবন রায়ের স্বাক্ষর আছে। অ্যানেস্থেসিয়া ডা. শিরিনা আক্তার শিরিন এবং অ্যানেস্থেসিয়ায় আরেকজন চিকিৎসকের নাম আছে। ভর্তি এবং অস্ত্রোপাচারের তারিখ একই দিনে ৭ ফেব্রুয়ারি। অপারেশন নোটে অপারেশনের সময় সকাল ১০টা উল্লেখ করা আছে। পোস্ট অপারেটিভ অর্ডার শীটে কোনো চিকিৎসকের স্বাক্ষর নেই।

আবার সবথেকে বড় বিষয়, দুইটি অপারেশনের অপারেশন নোট এবং পোস্ট অপারেটিভ অর্ডার শীটে কোনো রোগীর নাম নেই। সিভিল সার্জনের দপ্তরে সরবরাহ করা ওই কাগজপত্রে শুধুমাত্র রোগীদের ভর্তি ফরমে নাম পাওয়া গেছে।

তবে অপারেশন নোট এবং পোস্ট অপারেটিভ অর্ডার শীট দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি ওই রোগীদের কিনা, বা অন্য কারো কিনা। এতে নতুন বির্তকের সৃষ্টি হয়েছে, ময়না রানীর অপারেশন নিয়ে।

এদিকে, গত ২ মার্চ সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিদর্শনের পরই সিভিল সার্জন একটি পত্রের মাধ্যমে জনতা ক্লিনিককে বন্ধ করার নির্দেশ দেন। সিএস/চুয়া/শা-৩/২০২৫/৪৪৮ স্মারকের ওই পত্রে, সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দীন আহমেদ স্পষ্ট করে তিনটি ক্রটি তুলে ধরেন।

তিনটি ক্রটিতে সিভিল সার্জন বলেছেন, ‘প্রথমত উক্ত জনতা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর নামে অদ্যাবধি লাইসেন্স হয় নাই। লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন মাত্র। দ্বিতীয়ত ২০ শয্যা বিশিষ্ট ক্লিনিকে ৬ জন ডাক্তার, ১২ জন নার্স, ৬ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ বাধ্যতামূলক হলেও পরিদর্শনের সময় ১ জন ডাক্তার ও ১ জন ডিপ্লোমাধারী নার্সের উপস্থিতি পাওয়া যায়। সরকার কর্তৃক আরোপিত নিয়মানুযায়ী সকল জনবল নিয়োগ করতে হবে এবং সর্বশেষ তিন নম্বর ক্রটিতে বলা হয়েছে, সকল প্রকার অপারেশনের সময় অ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তার রাখা বাধ্যতামূলক। অথচ অ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তার ব্যতিত অপারেশন করা হয় যাহা মোটেও কাম্য নয়। অ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তার ব্যতিত অপারেশন করা যাবে না।’

এ ঘটনার পর ময়না রানীর ভর্তি ফরমের সাথে পূর্বে পান্সকৃত দুইটি শীট পিনআপ করে জমা দেয়া হয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। অদ্ভুদভাবে ময়না রানীর অপারেশনের সম্মতিপত্রে এক এ্যানেসথিসিয়া চিকিৎসকের নাম দেয়া হয়েছে।

সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য বিভাগের পরিদর্শনের সময় ওই এ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসকও সেখানে ছিলেন। ওই সময় গণমাধ্যমকর্মীরা তাকেও প্রশ্ন করেছিলেন। তবে সে সময় ওই চিকিৎসক বলেন, আমি ওই রোগীর অপারেশনে ছিলাম না। নতুন করে ওই চিকিৎসকের নাম আসায় গণমাধ্যমকর্মীদের নজরে পড়ে বিষয়টি।

নাম প্রকাশ না করতে চাইলেও ওই চিকিৎসক বলেন, ‘আমি পরিদর্শনের দিনই বলে দিয়েছিলাম, আমি ছিলাম না। প্রকৃতপক্ষে গত সোমবার পর্যন্ত আমাকে জানানোই হয়নি। সোমবার দুপুরে কাকতালীয়ভাবে আমি বিষয়টি জানতে পারি। একজন চিকিৎসকের সেবাগ্রহণকারী কোনো রোগীর সমস্যা দেখা দিলেই সেটা ওই চিকিৎসকের জানার কথা ছিলো। এতো বড় একটা ঘটনা, অথচ আমাকে বলাই হয়নি।’

ওই চিকিৎসকের দাবি, ‘অপরেশন নোটে তার স্বাক্ষর থাকলেও সেটি ওই রোগীর কিনা তা বোঝার উপায় নেই। ওপারেশন শীট বা পোস্ট অপারেটিভ অর্ডার শীটে কোনো রোগীর নাম নেই।’

আবার ময়না খাতুনের অপারেশনের সময় দেয়া আছে সকাল ১০টা। তবে ময়না খাতুনের পরিবারের লোকজনের দাবি, ময়না খাতুনকে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য ভর্তিই করা হয় বেলা ১১টার পর। এরপরই আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে ক্লিনিকটি চালু নিয়েই।

ক্লিনিক মালিকরা বলছেন, যে ক্লিনিকের লাইসেন্সই হয়নি, সেটাকে কিভাবে পূর্ববর্তী সিভিল সার্জন নিজে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করে দেন। আবার চালু রাখার অনুমতিও দেন। পরের সিভিল সার্জন বন্ধ করে দেন। ঘটনা হাস্যকর। আবার ওই ক্লিনিকটিতে দুইজন রোগী মৃত্যুর ঘটনায় এসব আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই এক চিকিৎসকের স্বামীর দৌড়ঝাপ নজরে পড়েছে গণমাধ্যমকর্মীদের।

অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতাল এলাকায় সংশ্লিষ্ট্য কয়েকজনকে ওই চিকিৎসকের উৎসুক স্বামী হুমকিও দিচ্ছেন। এসব বিষয় নিয়ে ক্লিনিকটির মালিক জান্নাতের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘অ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তার ছিলো। ওই দুই রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগ কাগজপত্র নিয়েছেন।’

সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত স্বচ্ছ হওয়ার স্বার্থে আমি তদন্ত কমিটিতে সামান্য পরিবর্তন করবো। অ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তার ছিলো বলেই আমরা জানি। যদি কোনো নাম দেয়া হয়, তাহলে তদন্তে সেসব বেরিয়ে আসবে। আদৌও তিনি ছিলেন কিনা সেটা তদন্ত করে দেখা হবে। বিষয়টি গভীরভাবে এবং স্বচ্ছতার সাথে তদন্ত করা হবে। ইতোমধ্যে ক্লিনিকটিকে বন্ধ করা হয়েছে। কোনো ভুল তথ্য প্রমাণ করার সুযোগ থাকবে না।’