০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মাজলুম দল ‘জামায়াতে ইসলামী’ : ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দেশে ইনসাফভিত্তিক উন্নয়ন হবে। কথা দিচ্ছি আপনাদের খেদমতের দায়িত্ব পেলে ন্যায্য দাবিগুলো চাওয়া ছাড়াই বাস্তবায়ন হবে। কথা দিচ্ছি রক্তের বিনিময়ে হলেও দেশে চাঁদাবাজি বন্ধ করবো। জুলুমবাজি থাকবে না, দখলবাজিও থাকবে না। আমাদের সন্তানদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলতে চাই ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে চুয়াডাঙ্গা শহরে টাউন ফুটবল মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

চুয়াডাঙ্গায় আগমন নিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আগে আমরা কথা বলতে পারিনি। চুয়াডাঙ্গায় এসেছি দফায় দফায়। কাজ করেছি চুপিচুপি। চলে যেতে হয়েছে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। কারণ হচ্ছে ফ্যাসিবাদ এই জাতিকে আঁকড়ে রেখেছিল। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে কোথাও শান্তিতে দাঁড়াতে দেয়নি।

বিগত দিনে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, নেত্রকোণায় একটি বাড়িতে বাপ-বেটা দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। বাবা জামায়াতে ইসলাম ও ছেলে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী। দুইজনকে ধরে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দেয়। আমাদের ভাত খাওয়া হচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহিতা। এরা সাড়ে ১৫ বছর দেশকে ইচ্ছেমতো চালিয়েছে। স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষের কথা বলে দেশ ও জাতিকে বিভক্ত করেছে। বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে বিভক্তি টেনেছে।

জামায়াতের আমির বলেন, এক এক করে আমাদের শীর্ষ ১১ নেতাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে। সাড়ে ১৫ বছর আমাদের অফিস খুলতে দেওয়া হয়নি, বসতে দেওয়া হয়নি। দলীয় কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হয়নি। আমাদের নেতৃবৃন্দের বাড়িঘর বুলডোজার চালিয়ে তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। এরকমটা আর কোনো দলের ক্ষেত্রে ঘটেনি। আমাদের দলের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আর কোনো দলের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়নি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে, বিপ্লবের মুখে সরকার দিশেহারা হয়ে গত বছরের ১ আগস্ট বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

তিনি আরও বলেন, কবরস্থান, মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, রোড, কালভার্ট সবকিছু থেকে পার্সেনটিজের নামে লুণ্ঠন করা হয়েছে। লুণ্ঠন করার পর তারা পালিয়ে গেছে। তারা এমন লুটপাট করেছে যে এখন দেশের মানুষের সামনে মুখ দেখানোর সাহস তাদের নেই। আমরা তাদের বলি, ফিরে আসেন। আমরা আপনাদের বিচারটা দেখতে চাই। কারণ আপনারা এ দেশের বিরোধী দলের দেশপ্রেমিক নেতাকর্মী, নিরীহ মানুষ, আলেম-ওলামাদের ধরে নিয়ে গুম করেছেন। বিচারের নামে প্রহসন করে তাদের দুনিয়া থেকে বিদায় করেছেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আপনারা তখন বলেছেন আমরা কিছু করেননি, আদালত সবকিছু করেছে। আমরাও আপনাদের আদালতে সোপর্দ করতে চাই, আসেন। যদি এই দেশ এবং মাটির প্রতি ভালোবাসা থাকে, আসেন আপনাদের কাশিমপুরে ভালো করে থাকার ব্যবস্থা করে দেব।

চুয়াডাঙ্গাকে বঞ্চিত জেলা অভিহিত করে তিনি বলেন, এখানে একটি মেডিকেল কলেজ হওয়া দরকার সবার আগে। কারণ সুস্থতার জন্য চিকিৎসা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। চুয়াডাঙ্গাবাসীকে আশ্বস্ত করে বলি, আমাদের দল যদি দেশ পরিচালনা করার দায়িত্ব পায় তাহলে কথা দিচ্ছি, ইনসাফের কারণে আপনাদের দাবি পূরণ করা হবে। দেশের মালিক না হয়ে সেবকে পরিণত হব।

জামায়াতের আমির বলেন, দুর্নীতি আর দুঃশাসন একটি আরেকটির পরিপূরক। যেখানে দুঃশাসন আছে সেখানে দুর্নীতি থাকবেই। দুর্নীতি আর দুঃশাসনের জন্য কি আমাদের সন্তানেরা জীবন দিয়েছে? তাদের রক্তের ওপর দিয়ে দখলবাজি চলবে? নিরীহ মানুষকে আসামি বানিয়ে বাণিজ্য চলবে? তাদেরও একটাই চাওয়া ছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। আমরা ন্যায়বিচার চাই, বৈষম্য চাই না। সেই বাংলাদেশ কায়েম হয়নি বলেই আমাদের সন্তানরা আবারও স্লোগান তুলেছে ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’। একটি মানবিক বাংলাদেশ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না। আমরা কারও রক্তচক্ষু পরোয়া করি না। আমরা পরোয়া করি আল্লাহকে। হাজার বছর বেঁচে থাকার চেয়ে একটি শ্বাস সিংহের মতো নিতে চাই। আমরা সবাইকে বলি আরেকটি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। খারাপ ফুলের গাছ কাটা পড়েছে, কিন্তু আগাছা রয়ে গেছে। এগুলো পরিষ্কার করব ইনশাআল্লাহ।

জেলার আমির মো. রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যশোর কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসাইন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আনোয়ারুল হক মালিক, নায়েবে আমির মাওলানা আজিজুর রহমান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল, মো. আব্দুল কাদের, জেলার দলিত পরিষদ নেতা শোভন দাস, জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আসলাম অর্ক, ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি সাগর আহমেদ, শহীদ শুভর গর্বিত বাবা মো. আবু সঈদ মন্ডল। এর আগে মাওলানা মহিউদ্দীনের অর্থসহ কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে কর্মী সম্মেলন শুরু হয়।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

দর্শনা থানা পুলিশের অভিযানে ৬ কেজি গাজাসহ দুজন আটক

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মাজলুম দল ‘জামায়াতে ইসলামী’ : ডা. শফিকুর রহমান

প্রকাশের সময় : ০২:২৫:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দেশে ইনসাফভিত্তিক উন্নয়ন হবে। কথা দিচ্ছি আপনাদের খেদমতের দায়িত্ব পেলে ন্যায্য দাবিগুলো চাওয়া ছাড়াই বাস্তবায়ন হবে। কথা দিচ্ছি রক্তের বিনিময়ে হলেও দেশে চাঁদাবাজি বন্ধ করবো। জুলুমবাজি থাকবে না, দখলবাজিও থাকবে না। আমাদের সন্তানদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলতে চাই ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে চুয়াডাঙ্গা শহরে টাউন ফুটবল মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

চুয়াডাঙ্গায় আগমন নিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আগে আমরা কথা বলতে পারিনি। চুয়াডাঙ্গায় এসেছি দফায় দফায়। কাজ করেছি চুপিচুপি। চলে যেতে হয়েছে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। কারণ হচ্ছে ফ্যাসিবাদ এই জাতিকে আঁকড়ে রেখেছিল। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে কোথাও শান্তিতে দাঁড়াতে দেয়নি।

বিগত দিনে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, নেত্রকোণায় একটি বাড়িতে বাপ-বেটা দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। বাবা জামায়াতে ইসলাম ও ছেলে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী। দুইজনকে ধরে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দেয়। আমাদের ভাত খাওয়া হচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহিতা। এরা সাড়ে ১৫ বছর দেশকে ইচ্ছেমতো চালিয়েছে। স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষের কথা বলে দেশ ও জাতিকে বিভক্ত করেছে। বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে বিভক্তি টেনেছে।

জামায়াতের আমির বলেন, এক এক করে আমাদের শীর্ষ ১১ নেতাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে। সাড়ে ১৫ বছর আমাদের অফিস খুলতে দেওয়া হয়নি, বসতে দেওয়া হয়নি। দলীয় কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হয়নি। আমাদের নেতৃবৃন্দের বাড়িঘর বুলডোজার চালিয়ে তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। এরকমটা আর কোনো দলের ক্ষেত্রে ঘটেনি। আমাদের দলের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আর কোনো দলের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়নি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে, বিপ্লবের মুখে সরকার দিশেহারা হয়ে গত বছরের ১ আগস্ট বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

তিনি আরও বলেন, কবরস্থান, মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, রোড, কালভার্ট সবকিছু থেকে পার্সেনটিজের নামে লুণ্ঠন করা হয়েছে। লুণ্ঠন করার পর তারা পালিয়ে গেছে। তারা এমন লুটপাট করেছে যে এখন দেশের মানুষের সামনে মুখ দেখানোর সাহস তাদের নেই। আমরা তাদের বলি, ফিরে আসেন। আমরা আপনাদের বিচারটা দেখতে চাই। কারণ আপনারা এ দেশের বিরোধী দলের দেশপ্রেমিক নেতাকর্মী, নিরীহ মানুষ, আলেম-ওলামাদের ধরে নিয়ে গুম করেছেন। বিচারের নামে প্রহসন করে তাদের দুনিয়া থেকে বিদায় করেছেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আপনারা তখন বলেছেন আমরা কিছু করেননি, আদালত সবকিছু করেছে। আমরাও আপনাদের আদালতে সোপর্দ করতে চাই, আসেন। যদি এই দেশ এবং মাটির প্রতি ভালোবাসা থাকে, আসেন আপনাদের কাশিমপুরে ভালো করে থাকার ব্যবস্থা করে দেব।

চুয়াডাঙ্গাকে বঞ্চিত জেলা অভিহিত করে তিনি বলেন, এখানে একটি মেডিকেল কলেজ হওয়া দরকার সবার আগে। কারণ সুস্থতার জন্য চিকিৎসা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। চুয়াডাঙ্গাবাসীকে আশ্বস্ত করে বলি, আমাদের দল যদি দেশ পরিচালনা করার দায়িত্ব পায় তাহলে কথা দিচ্ছি, ইনসাফের কারণে আপনাদের দাবি পূরণ করা হবে। দেশের মালিক না হয়ে সেবকে পরিণত হব।

জামায়াতের আমির বলেন, দুর্নীতি আর দুঃশাসন একটি আরেকটির পরিপূরক। যেখানে দুঃশাসন আছে সেখানে দুর্নীতি থাকবেই। দুর্নীতি আর দুঃশাসনের জন্য কি আমাদের সন্তানেরা জীবন দিয়েছে? তাদের রক্তের ওপর দিয়ে দখলবাজি চলবে? নিরীহ মানুষকে আসামি বানিয়ে বাণিজ্য চলবে? তাদেরও একটাই চাওয়া ছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। আমরা ন্যায়বিচার চাই, বৈষম্য চাই না। সেই বাংলাদেশ কায়েম হয়নি বলেই আমাদের সন্তানরা আবারও স্লোগান তুলেছে ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’। একটি মানবিক বাংলাদেশ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না। আমরা কারও রক্তচক্ষু পরোয়া করি না। আমরা পরোয়া করি আল্লাহকে। হাজার বছর বেঁচে থাকার চেয়ে একটি শ্বাস সিংহের মতো নিতে চাই। আমরা সবাইকে বলি আরেকটি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। খারাপ ফুলের গাছ কাটা পড়েছে, কিন্তু আগাছা রয়ে গেছে। এগুলো পরিষ্কার করব ইনশাআল্লাহ।

জেলার আমির মো. রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যশোর কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসাইন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আনোয়ারুল হক মালিক, নায়েবে আমির মাওলানা আজিজুর রহমান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল, মো. আব্দুল কাদের, জেলার দলিত পরিষদ নেতা শোভন দাস, জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আসলাম অর্ক, ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি সাগর আহমেদ, শহীদ শুভর গর্বিত বাবা মো. আবু সঈদ মন্ডল। এর আগে মাওলানা মহিউদ্দীনের অর্থসহ কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে কর্মী সম্মেলন শুরু হয়।