০৪:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় প্রভাব খাটিয়ে যুবলীগ নেতার ইট ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, প্রশাসন নীরব

পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ভাটার কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশনা দিলেও যুবলীগ নেতা প্রভাব খাটিয়ে কাঠ পুড়িয়ে ভাটা চালু রেখেছেন বলে অভিযোগ। পৌর এলাকার মধ্যে ভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে আইনের আওতায় আনার দাবি এলাকাবাসির।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের সুমিরদিয়া-বুজরুকগড়গড়ি এলাকার জেলা যুবলীগ সদস্য দরুদ হোসেনের ইটভাটাতে পোড়ানো হয় কাঠ। জেলা যুবলীগ নেতা দরুদ হোসেন প্রভাব খাটিয়ে ভাটাটি চালু রেখেছেন। পৌর শহরের মধ্যে ভাটার অবস্থান এবং ভাটাটি চালু থাকায় এলাকায় চরম পরিবেশ দূষণ হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন এলাকাবাসী।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) ২০১৯ অনুযায়ী, পৌর এলাকা, বিশেষ কোনো স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিংবা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ইট পোড়াতে কোনো জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করা যাবে না। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব ইটভাটা স্থাপন করার কথা থাকলেও সনাতন পদ্ধতিতেই এখনো ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের সুমিরদিয়া-বুজরুকগড়গড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এমএস ভাটা নামে ওই ভাটাটিতে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর কাজ চলছে। পাওয়ার ট্রিলার ভর্তি করে বিভিন্ন এলাকা থেকে আনা হচ্ছে কাঠ। ভাটা ঘিরে চারিদিকে রয়েছে মানুষের বসতি। ভাটার কালো ধোঁয়ায় এলাকার গাছপালা ও লতাপাতা বিবর্ণ হয়ে গেছে। ভাটার মাটি সড়কের পাশে পাহাড়ের মতো উচু স্তূপ করে রাখা হয়েছে। কিছু মাটি সড়কের ওপর এসে পড়েছে।

সুমিরদিয়া এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘পৌর এলাকার মহল্লাগুলোতে ঘনবসতি, তার মধ্যে ইটভাটায় রাত-দিন চলছে ইট পোড়ানোর কাজ। ইট পোড়ানোর মৌসুমে বাড়িঘর ধুলাবালি দিয়ে ভরে যায়, তখন ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়।’

নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে সুমিরদিয়া এলাকার একজন স্থায়ী বাসিন্দা বলেন, ‘দরুদ জেলা যুবলীগের ক্যাডার। তার নামে অসংখ্য মামলা। মার্ডার মামলাও আছে। জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে করা মামলারও সে আসামি। তবুও সে পুলিশের ধরা ছোয়ার বাইরে। এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেই সে চলে। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। প্রশাসনও তো নীরব। আমরা কী করব। এই একটি মাত্র ইটভাটা আমাদের এই পাড়াকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে।’

পৌর শহরের কেদারগঞ্জ এলাকার আরেক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে বলেন, ‘সুমিরদিয়ার ওই ভাটা শুধু ওই এলাকার জন্য ক্ষতির কারণ নয়, ভাটাটি শহরের এই প্রান্তে চরম সমস্যা সৃষ্টি করে। মাটি নিয়ে যাবার সময় রাস্তায় প্রচুর মাটি পড়ে। সামান্য বৃষ্টি হলেই দুর্ঘটনা ঘটে। পরিবেশের তো ক্ষতি করা হচ্ছেই, এলাকাবাসী কিছু বললে তাদেরকেও মারধর করার রেকর্ড আছে। তাই এখন আর কেউ কিছু বলে না।’

রেডিও চুয়াডাঙ্গার পক্ষ থেকে ইট ভাটা মালিক দরুদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে কোন মন্তব্য জানা যায়নি।

আরও পড়ুন

পরিবেশ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নরেশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘পৌর এলাকায় ইটভাটা চালানোর কোনো নিয়ম নেই। পৌর এলাকা বর্ধিত হওয়ার আগে স্থাপন করা হলেও ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনটি কার্যকর হওয়ার দুই বছরের মধ্যে ভাটাটি সরিয়ে নিতে হবে। এটাই বিধান।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমএস ইটভাটাকে আগেই বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমাদের চুয়াডাঙ্গা কার্যালয় নতুন। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হবে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এম সাইফুল্লাহ বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। যদি অবৈধভাবে পৌর এলাকার মধ্যে ভাটা চলে এবং কাঠ পোড়ানো হয়, তাহলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

চুয়াডাঙ্গায় প্রভাব খাটিয়ে যুবলীগ নেতার ইট ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, প্রশাসন নীরব

প্রকাশের সময় : ১২:৪১:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ভাটার কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশনা দিলেও যুবলীগ নেতা প্রভাব খাটিয়ে কাঠ পুড়িয়ে ভাটা চালু রেখেছেন বলে অভিযোগ। পৌর এলাকার মধ্যে ভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে আইনের আওতায় আনার দাবি এলাকাবাসির।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের সুমিরদিয়া-বুজরুকগড়গড়ি এলাকার জেলা যুবলীগ সদস্য দরুদ হোসেনের ইটভাটাতে পোড়ানো হয় কাঠ। জেলা যুবলীগ নেতা দরুদ হোসেন প্রভাব খাটিয়ে ভাটাটি চালু রেখেছেন। পৌর শহরের মধ্যে ভাটার অবস্থান এবং ভাটাটি চালু থাকায় এলাকায় চরম পরিবেশ দূষণ হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন এলাকাবাসী।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) ২০১৯ অনুযায়ী, পৌর এলাকা, বিশেষ কোনো স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিংবা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ইট পোড়াতে কোনো জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করা যাবে না। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব ইটভাটা স্থাপন করার কথা থাকলেও সনাতন পদ্ধতিতেই এখনো ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের সুমিরদিয়া-বুজরুকগড়গড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এমএস ভাটা নামে ওই ভাটাটিতে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর কাজ চলছে। পাওয়ার ট্রিলার ভর্তি করে বিভিন্ন এলাকা থেকে আনা হচ্ছে কাঠ। ভাটা ঘিরে চারিদিকে রয়েছে মানুষের বসতি। ভাটার কালো ধোঁয়ায় এলাকার গাছপালা ও লতাপাতা বিবর্ণ হয়ে গেছে। ভাটার মাটি সড়কের পাশে পাহাড়ের মতো উচু স্তূপ করে রাখা হয়েছে। কিছু মাটি সড়কের ওপর এসে পড়েছে।

সুমিরদিয়া এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘পৌর এলাকার মহল্লাগুলোতে ঘনবসতি, তার মধ্যে ইটভাটায় রাত-দিন চলছে ইট পোড়ানোর কাজ। ইট পোড়ানোর মৌসুমে বাড়িঘর ধুলাবালি দিয়ে ভরে যায়, তখন ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়।’

নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে সুমিরদিয়া এলাকার একজন স্থায়ী বাসিন্দা বলেন, ‘দরুদ জেলা যুবলীগের ক্যাডার। তার নামে অসংখ্য মামলা। মার্ডার মামলাও আছে। জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে করা মামলারও সে আসামি। তবুও সে পুলিশের ধরা ছোয়ার বাইরে। এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেই সে চলে। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। প্রশাসনও তো নীরব। আমরা কী করব। এই একটি মাত্র ইটভাটা আমাদের এই পাড়াকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে।’

পৌর শহরের কেদারগঞ্জ এলাকার আরেক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে বলেন, ‘সুমিরদিয়ার ওই ভাটা শুধু ওই এলাকার জন্য ক্ষতির কারণ নয়, ভাটাটি শহরের এই প্রান্তে চরম সমস্যা সৃষ্টি করে। মাটি নিয়ে যাবার সময় রাস্তায় প্রচুর মাটি পড়ে। সামান্য বৃষ্টি হলেই দুর্ঘটনা ঘটে। পরিবেশের তো ক্ষতি করা হচ্ছেই, এলাকাবাসী কিছু বললে তাদেরকেও মারধর করার রেকর্ড আছে। তাই এখন আর কেউ কিছু বলে না।’

রেডিও চুয়াডাঙ্গার পক্ষ থেকে ইট ভাটা মালিক দরুদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে কোন মন্তব্য জানা যায়নি।

আরও পড়ুন

পরিবেশ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নরেশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘পৌর এলাকায় ইটভাটা চালানোর কোনো নিয়ম নেই। পৌর এলাকা বর্ধিত হওয়ার আগে স্থাপন করা হলেও ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনটি কার্যকর হওয়ার দুই বছরের মধ্যে ভাটাটি সরিয়ে নিতে হবে। এটাই বিধান।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমএস ইটভাটাকে আগেই বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমাদের চুয়াডাঙ্গা কার্যালয় নতুন। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হবে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এম সাইফুল্লাহ বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। যদি অবৈধভাবে পৌর এলাকার মধ্যে ভাটা চলে এবং কাঠ পোড়ানো হয়, তাহলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’