গত ৬ নভেম্বর টাকার বিনিময়ে আলমডাঙ্গার খালেদা আক্তার মুন্নির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন চুয়াডাঙ্গার হাজরাহাটির গ্রামের মানিক আলীসহ তার কয়েকজন বন্ধু । সে সময় সুযোগ বুঝে স্থানীয়দের সহযোগীতায় ব্লাকমেইল করে তাদের নিকট ২০ হাজার টাকা আদায় করেছিলেন মুন্নি। এরপর থেকেই প্রতিশোধ নিতে পরিকল্পনা করেন মানিক। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আবারও ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে মুন্নির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের চুক্তি করা হয়। রাতের আধারে শারীরিক সম্পর্কের পর চুক্তির ২০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৫ হাজার টাকা দেয় মানিক। টাকা কম দেয়ায় চিৎকার চেচামেচি করতে গেলে গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় মুন্নিকে।

এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ।
তারা হলেন, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাজরাহাটি গ্রামের শেখপাড়ার টোকন আলীর ছেলে মানিক আলী ওরফে মানিক মুন্সি (২২) ও একই এলাকার মইদুল ইসলামের ছেলে পারভেজ মুন্সি ওরফে স্বপন (১৯)।
আরও পড়ুন
চুয়াডাঙ্গায় উদ্ধার হওয়া সেই অর্ধগলিত মরদেহটি আলমডাঙ্গার মুন্নির
শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সন্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) রিয়াজুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
নিহত খালেদা আক্তার মুন্নি চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়ীয়া গ্রামের মৃত খোয়াজ আলী শেখের কন্যা। মুন্নি ছিলেন স্বামী পরিতক্ত্যা। এ দিনই মুন্নির মা বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সকাল ৭টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদরের হাজরাহাটি-বোয়ালমারি গ্রামের মাঝামাঝি একটি পানবরজের পাশ থেকে অজ্ঞাত হিসেবে মরদেহ উদ্ধার করে সদর থানা পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া একটি মোবাইল নম্বর ও জুয়েলারি দোকারের ক্যাশ ভাউচার থেকে পুলিশ দ্রুত সময়ের মধ্যে অজ্ঞাত মরদেহটি পরিচয় খালেদা আক্তার মুন্নির বলে নিশ্চিত হয়। এছাড়া মুন্নির হাতে ও শরীরের বেশ কয়েকটি আকা ট্যাটু দেখে তার পরিবারের সদস্যরাও মুন্নির বলে শনাক্ত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, স্বীকারোক্তিতে অভিযুক্ত মানিক স্বীকার করেছেন গত ৬ নভেম্বর তিনি ও তার বন্ধুরা মিলে আলমডাঙ্গার বড়গাংনীতে মুন্নির সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের করেন। এসময় মুন্নি স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের ব্লাকমেইল করে বিশ হাজার টাকা আদায় করেন। মানিক মুন্সি ভিকটিমের ওপর রাগের বশবর্তী হয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকেন। পরিকল্পরা অনুযায়ী গত ৯ নভেম্বর শনিবার বিকেলে ফোনকলের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকার বিনিমতে মুন্নির সঙ্গে সারারাত শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের কথা বলে চুক্তি করেন।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলাম জানান, মরদেহ উদ্ধারের পাঁচ দিন আগে ৯ নভেম্বর (শনিবার) দুপুর ১২টার দিকে খালেদা আক্তার মুন্নি বাড়ি থেকে বের হন। সন্ধার দিকে তার মাকে জানিয়েছিলেন, কেনাকাটা করতে রাত হয়ে যাবে তাই রাতে খালার বাড়িতে থাকবেন, সকালে বাড়িতে ফিরবেন।

এদিকে, ২০ হাজার টাকায় সারারাত শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য মুন্নি গত ৯ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নীলমনিগঞ্জের পিটিআই মোড়ে পৌঁছান। সেখান থেকে অভিযুক্ত স্বপন মোটরসাইকেলযোগে মুন্নিকে বোয়ালমারি ফাঁকা মাঠে পানবরজের পাশে নিয়ে যান। যেখানে আগে থেকেই তারই চাচাতো ভাই মানিক অবস্থান করছিলেন। মুন্নি সেখানে পৌঁছানোর পর মানিক ও স্বপন তাকে পান বরজের পাশের একটি ঝোপের মধ্যে নিয়ে চুক্তি অনুযায়ী তারা তার সঙ্গে পালাক্রমে শারীরিক সম্পর্ক করেন। এরপর শারীরিক সম্পর্ক শেষে ঘটনাস্থল থেকে স্বপন চলে যান, তবে মানিক মুন্সি তার সঙ্গে আরও একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করেন। পরে চুক্তির ২০ হাজার টাকার বদলে পাঁচ হাজার টাকা দিতে চাইলে মুন্নি ও স্বপনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এসময় মুন্নি চিৎকার করবে বললে স্বপন তার গলা চেপে ধরেন। এতেকরে মুন্নি মাটিতে পড়ে গেলে স্বপন তার পিঠের ওপর বসে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করেন। এবং ওঁড়না দিয়ে হাত বেঁধে সেখানেই ফেলে রেখে পালিয়ে স্বপন যায়। পালানোর সময় মুন্নির শপিং ব্যাগ ও জুতা নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুর্গন্ধের উৎস খুজতে গিয়ে অজ্ঞাত নারীর মরদেহ দেখতে পেরে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে মরদেহ উদ্ধার করে।
অপরদিকে শুক্রবার পুলিশ মানিক আলী মুন্সি ও পারভেজ মহাসিন স্বপনকে চুয়াডাঙ্গা আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মানিক ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। স্বীকারোাক্তি নেওয়ার পর বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফা কামালের আদালত তাদের কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
এএইচ