১২:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় আ.লীগের ছত্রছায়ায় চলত রুপার রঙ্গশালা ও মাদক ব্যবসা : মধ্যরাতে বসত মদের আসর

রুপার বিরুদ্ধে অনেকবার স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও প্রশাসন তদন্ত করে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে রুপা হয়ে ওঠেন আরও বেপরোয়া। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না তার। অসামাজিক কাজের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে তালতলা পশুহাট পাড়ার মানুষ।

প্রতিদিন মধ্যরাতে অচেনা-অজানা যুবকরা এসে আড্ডা জমায় রুপার বাড়িতে। একাধিক বিয়ে করেও তিনি বিভিন্ন পরপুরষের সঙ্গে মোবাইল ফোনে চ্যাট করেন। তার বাড়িতে আনাগোনা রয়েছে চুয়াডাঙ্গার বিশিষ্ট পরিবহন ব্যবসায়ী, আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় কিছু সাংবাদিকের। সম্প্রতি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করেছেন রুপার স্বামী মিরাজুল ইসলাম মামুন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তালতলা পশুহাট পাড়ার পটে আবু তাহের বাদলের মেয়ে রুপা খাতুন (৩৫) এ পর্যন্ত তিনের অধিক বিয়ে করেছেন।

রুপা খাতুন প্রথম বিয়ে করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কলাবাড়ি গ্রামের শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। ওই পক্ষের মোছা. নাসরিন নামের একটি (১৯) মেয়ে আছে। বেশ কিছুদিন সংসার করে স্বামীকে তালাক দিয়ে দেন রুপা। দ্বিতীয় বিয়ে করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ বাজারের আব্দুল মোতালের ছেলে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুন্নাকে। পরবর্তীতে মুন্নার মৃত্যুর পর ২০২৩ সালে জীবননগর পৌরসভার ইসলামপুর গ্রামের সোহরাব হোসেনের কাতার প্রবাসী ছেলে মিরাজুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে করেন।

কিন্তু বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে রুপার উশৃঙ্খল জীবনযাপন এবং ও উগ্র আচরণের শিকার হন স্বামী মিরাজুল ইসলাম। মিরাজুল প্রতিবাদ করায় তাকে তার বাড়িতে এক বছর আটকে রাখেন। একপর্যায়ে মিরাজুল বাড়ি থেকে পালিয়ে এলে তার বিরুদ্ধে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ২৫ লাখ টাকা নিয়ে এ বাড়ি থেকে পালিয়েছে মর্মে অভিযোগ তোলেন। এ ঘটনায় মিরাজুলের নিকট থেকে অর্থ আদায় করতে রুপা ২০২৩ সালে মিরাজুলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করেন।

রুপা খাতুনের স্বামী মো. মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘রুপার বিরুদ্ধে আরও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে রুপার মিথ্যা মামলায় আমি জেল খেটেছি। সে সময় তার বাড়িতে পুলিশের আনাগোনা ছিল অনেক, যার ফলে সে যা বলতো, পুলিশ তাই করতো। তার বাড়িতে নিয়মিত মদের আড্ডা বসতো। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও পুলিশের কর্মকর্তারা আসতেন। তার কাছে একটি নাইন এম এম অস্ত্র আছে, সে ওই অস্ত্র দিয়ে আমাকে হত্যা করার জন্য বেশ কয়েকবার হুমকি দিয়েছে। আমি গত শুক্রবার বিকেলে তার বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি। ইতোমধ্যেই সে আওয়ামী লীগ দল পরিবর্তন করে ছাত্রদলের কিছু ছেলেদের ম্যানেজ করে আমাকে তার গুন্ডা বাহিনী দিয়ে তুলে নিয়ে হত্যা করবে বলে হুমকি-ধমকি প্রদান করছে। এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধে আমি জীবননগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।’

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, রুপার নামে একটি মাদকের লাইসেন্স আছে, যার লাইসেন্স নম্বর ১৮১/২০২২-২০২৩। সে এর আগে জীবননগর উপজেলার উথলীতে ‘কুটুম বাড়ি’ নামের একটি ফুড পার্ক দেন। সেখানে তিনি ফুড পার্কের আড়ালে মাদক বিক্রি করতেন। তার বিরুদ্ধে জমি দখল, মাদক বিক্রি ও নারীদের দিয়ে দেহ ব্যবসা করার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, মেহেরপুরের ট্রেজারি অফিসের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের স্বাক্ষর জাল করে ১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার স্টাম্প ও কোট ফির মালিক ছিলেন এই রুপা। চুয়াডাঙ্গা তালতলা পাড়ার নিজ বাড়ির পাশে দুই বিঘা জমির ওপর গড়ে তুলেছেন একটি ডেইরি খামার, তার রয়েছে দামি গাড়ি।

এসব বিষয়ে রুপা খাতুনের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘আমার নামে কোনো মদের লাইসেন্স নেই। আমার স্বামী মুন্না জীবিত থাকাকালীন লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলেন। ওনার মৃত্যুর পর সেটি বাতিল হয়ে যায়। পরে আমি অ্যাপ্লাই করতেই পারি।’

মেহেরপুরের ট্রেজারি অফিসের কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বিষয়ে জানতে চাইলে আমার মহল্লায় এসে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবেন। আমাকে নিয়ে অনেকে নিউজ করেছে, কিন্তু কোনো সত্যতা পায়নি।’ বাড়িতে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার বিষয়ে রুপা খাতুন বলেন, ‘আমি সাধারণ মানুষ, আমার বাড়িতে পিস্তল কেন থাকবে? যদি আমার কাছে পিস্তল থাকে, আপনারা এসে সেটি খুঁজে বের করুন।’

নিজের স্বামী মিরাজুল ইসলামকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রুপা বলেন, ‘উনি আমার স্বামী, আমি যদি তাকে হুমকি দেব, তাহলে সে সকাল ১০টায় আমার চেম্বারে, রাত ১১টায় বাড়িতে আসতো কীভাবে? তার অনেকগুলো ভিডিও ফুটেজ আমার কাছে আছে, তার বিয়ের ভিডিও, ছবিও আছে। আপনারা সত্যতা যাচাই করেন। যদি আমি মাদক বিক্রি করি, তাহলে আমার নামে থানায় অভিযোগ থাকবে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখেন, আমার নামে কোনো অভিযোগ নেই।’

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

চুয়াডাঙ্গায় পাঁচ দফা দাবিতে ইসলামী আন্দোলনের বি ক্ষো ভ সমাবেশ

চুয়াডাঙ্গায় আ.লীগের ছত্রছায়ায় চলত রুপার রঙ্গশালা ও মাদক ব্যবসা : মধ্যরাতে বসত মদের আসর

প্রকাশের সময় : ০৩:২৫:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

রুপার বিরুদ্ধে অনেকবার স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও প্রশাসন তদন্ত করে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে রুপা হয়ে ওঠেন আরও বেপরোয়া। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না তার। অসামাজিক কাজের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে তালতলা পশুহাট পাড়ার মানুষ।

প্রতিদিন মধ্যরাতে অচেনা-অজানা যুবকরা এসে আড্ডা জমায় রুপার বাড়িতে। একাধিক বিয়ে করেও তিনি বিভিন্ন পরপুরষের সঙ্গে মোবাইল ফোনে চ্যাট করেন। তার বাড়িতে আনাগোনা রয়েছে চুয়াডাঙ্গার বিশিষ্ট পরিবহন ব্যবসায়ী, আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় কিছু সাংবাদিকের। সম্প্রতি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করেছেন রুপার স্বামী মিরাজুল ইসলাম মামুন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তালতলা পশুহাট পাড়ার পটে আবু তাহের বাদলের মেয়ে রুপা খাতুন (৩৫) এ পর্যন্ত তিনের অধিক বিয়ে করেছেন।

রুপা খাতুন প্রথম বিয়ে করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কলাবাড়ি গ্রামের শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। ওই পক্ষের মোছা. নাসরিন নামের একটি (১৯) মেয়ে আছে। বেশ কিছুদিন সংসার করে স্বামীকে তালাক দিয়ে দেন রুপা। দ্বিতীয় বিয়ে করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ বাজারের আব্দুল মোতালের ছেলে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুন্নাকে। পরবর্তীতে মুন্নার মৃত্যুর পর ২০২৩ সালে জীবননগর পৌরসভার ইসলামপুর গ্রামের সোহরাব হোসেনের কাতার প্রবাসী ছেলে মিরাজুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে করেন।

কিন্তু বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে রুপার উশৃঙ্খল জীবনযাপন এবং ও উগ্র আচরণের শিকার হন স্বামী মিরাজুল ইসলাম। মিরাজুল প্রতিবাদ করায় তাকে তার বাড়িতে এক বছর আটকে রাখেন। একপর্যায়ে মিরাজুল বাড়ি থেকে পালিয়ে এলে তার বিরুদ্ধে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ২৫ লাখ টাকা নিয়ে এ বাড়ি থেকে পালিয়েছে মর্মে অভিযোগ তোলেন। এ ঘটনায় মিরাজুলের নিকট থেকে অর্থ আদায় করতে রুপা ২০২৩ সালে মিরাজুলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করেন।

রুপা খাতুনের স্বামী মো. মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘রুপার বিরুদ্ধে আরও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে রুপার মিথ্যা মামলায় আমি জেল খেটেছি। সে সময় তার বাড়িতে পুলিশের আনাগোনা ছিল অনেক, যার ফলে সে যা বলতো, পুলিশ তাই করতো। তার বাড়িতে নিয়মিত মদের আড্ডা বসতো। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও পুলিশের কর্মকর্তারা আসতেন। তার কাছে একটি নাইন এম এম অস্ত্র আছে, সে ওই অস্ত্র দিয়ে আমাকে হত্যা করার জন্য বেশ কয়েকবার হুমকি দিয়েছে। আমি গত শুক্রবার বিকেলে তার বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি। ইতোমধ্যেই সে আওয়ামী লীগ দল পরিবর্তন করে ছাত্রদলের কিছু ছেলেদের ম্যানেজ করে আমাকে তার গুন্ডা বাহিনী দিয়ে তুলে নিয়ে হত্যা করবে বলে হুমকি-ধমকি প্রদান করছে। এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধে আমি জীবননগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।’

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, রুপার নামে একটি মাদকের লাইসেন্স আছে, যার লাইসেন্স নম্বর ১৮১/২০২২-২০২৩। সে এর আগে জীবননগর উপজেলার উথলীতে ‘কুটুম বাড়ি’ নামের একটি ফুড পার্ক দেন। সেখানে তিনি ফুড পার্কের আড়ালে মাদক বিক্রি করতেন। তার বিরুদ্ধে জমি দখল, মাদক বিক্রি ও নারীদের দিয়ে দেহ ব্যবসা করার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, মেহেরপুরের ট্রেজারি অফিসের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের স্বাক্ষর জাল করে ১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার স্টাম্প ও কোট ফির মালিক ছিলেন এই রুপা। চুয়াডাঙ্গা তালতলা পাড়ার নিজ বাড়ির পাশে দুই বিঘা জমির ওপর গড়ে তুলেছেন একটি ডেইরি খামার, তার রয়েছে দামি গাড়ি।

এসব বিষয়ে রুপা খাতুনের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘আমার নামে কোনো মদের লাইসেন্স নেই। আমার স্বামী মুন্না জীবিত থাকাকালীন লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলেন। ওনার মৃত্যুর পর সেটি বাতিল হয়ে যায়। পরে আমি অ্যাপ্লাই করতেই পারি।’

মেহেরপুরের ট্রেজারি অফিসের কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বিষয়ে জানতে চাইলে আমার মহল্লায় এসে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবেন। আমাকে নিয়ে অনেকে নিউজ করেছে, কিন্তু কোনো সত্যতা পায়নি।’ বাড়িতে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার বিষয়ে রুপা খাতুন বলেন, ‘আমি সাধারণ মানুষ, আমার বাড়িতে পিস্তল কেন থাকবে? যদি আমার কাছে পিস্তল থাকে, আপনারা এসে সেটি খুঁজে বের করুন।’

নিজের স্বামী মিরাজুল ইসলামকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রুপা বলেন, ‘উনি আমার স্বামী, আমি যদি তাকে হুমকি দেব, তাহলে সে সকাল ১০টায় আমার চেম্বারে, রাত ১১টায় বাড়িতে আসতো কীভাবে? তার অনেকগুলো ভিডিও ফুটেজ আমার কাছে আছে, তার বিয়ের ভিডিও, ছবিও আছে। আপনারা সত্যতা যাচাই করেন। যদি আমি মাদক বিক্রি করি, তাহলে আমার নামে থানায় অভিযোগ থাকবে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখেন, আমার নামে কোনো অভিযোগ নেই।’