১২:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিহত লিজার বাবা : মেয়েকে বুঝিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠালাম, তাকে তারা বাঁচিয়ে রাখলো না!

গৃহবধু লিজা খাতুনকে (২০) শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে।

আজ বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে শ্বশুর বাড়ি এলাকার লোকজন লিজা খাতুনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (হারদী হাসপাতাল) নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

নিহত লিজা খাতুন মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার সাহারবাটী ইউনিয়নের ভোমরদাহ গ্রামের বিলপাড়ার ভ্যানচালক আরিফুল ইসলামের মেয়ে এবং কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার মালিহাদ গ্রামের আবু তাহেরের স্ত্রী। নিহত লিজা খাতুনের একটি সাড়ে তিনমাসের পুত্র সন্তান রয়েছে।

নিহত লিজা খাতুনের পিতা আরিফুল ইসলাম অভিযোগ করে রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমার মেয়েকে গলা টিপে হত্যা করেছে জামায় আবু তাহের ও তার বাবা-মা। আসওয়াত হোসেন নামে সাড়ে তিন মাসের পুত্র সন্তান রয়েছে। এখন আমার এই নাতির কি হবে?

আরিফুল ইসলাম রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, গত দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে দেখাশোনা করে বিবাহ দিয়েছি মেয়েকে। আমার মেয়েটা মাদরাসার ছাত্রী ছিল। বিয়ের পর থেকেই আমার মেয়েকে নির্যাতন করতো আবু তাহের। কিছুদিন আগেও মারধর করে মেয়েকে। এরপর আমি মেয়েকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসি। তখন মেয়ে আমাকে জানায়, জামায় আবু তাহের বলেছে, আমার উপার্জনের সম্ভব ভ্যানটি যেন তাকে দিই, নাই একটি নতুন ভ্যান যেন কিনে দিই। এ কারণেই তাকে মারধর করেছে। আমি মেয়েকে বলেছিলাম, এখন আমার হাতে টাকা নাই। চাষবাষ করে একটি গরু কিনে দেবো বা ভ্যান কিনে দেব। এরপর আমি মেয়েকে বুঝিয়ে শ্বশুর বাড়ি পাঠাই। এই পাঠানোই যে আমার কাল হবে কে জানতো? আমার মেয়েটাকে বাঁচিয়ে রাখল না তারা। মেয়েটাকে তারা মেরে এখন বলছে আত্মহত্যা করেছে। আমার মেয়ে মাদরাসার ছাত্রী, সে কখনোই আত্মহত্যা করবে না।

আরিফুল ইসলাম বলেন, আজ সকালে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি এলাকার লোকজনের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসি। এসে মেয়ের মরদেহ দেখতে পাই। মেয়ের শ্বশুর বাড়ির কেউ ছিল না। তারা আমাদের সাথেও কোন যোগাযোগ করেননি। আমার নাতিটা তাদের কাছে। শুনেছি, নাতিটা খুব কান্নাকাটি করছে। যারা আমার মেয়ের মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন তারা বলছেন, ঝুলন্ত অবস্থায় মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এক কথায় মৃত অবস্থায় মেয়েকে নিয়ে আসা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ের ঠোটে আঘাতের চিহৃ আছে। ওরা আমার মেয়েকে গলা টিপে হত্যা করেছে। আমি তাদের কঠিন বিচার চাই।

এদিকে বুধবার দুপুরে লিজা খাতুনের মরদেহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হন্তান্তর করে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ। বিকেলেই মরদেহ বাবার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

লিজা খাতুনের মরদেহ সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী কর্মকর্তা আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়াহিদুল ইসলাম রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, লিজা খাতুনের পরিবারের সদস্যদের দাবি তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। আমরাও প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি শ্বাসরোধে লিজাকে হত্যা করা হয়েছে। তার ঠোট ও গলায় ক্ষতচিহৃ রয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। রিপোর্ট আসলে বিস্তারিত জানা যাবে এটা হত্যা কিনা।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

চুয়াডাঙ্গায় নজরুল চেতনায় অরিন্দমের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

নিহত লিজার বাবা : মেয়েকে বুঝিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠালাম, তাকে তারা বাঁচিয়ে রাখলো না!

প্রকাশের সময় : ০৬:৪৪:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গৃহবধু লিজা খাতুনকে (২০) শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে।

আজ বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে শ্বশুর বাড়ি এলাকার লোকজন লিজা খাতুনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (হারদী হাসপাতাল) নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

নিহত লিজা খাতুন মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার সাহারবাটী ইউনিয়নের ভোমরদাহ গ্রামের বিলপাড়ার ভ্যানচালক আরিফুল ইসলামের মেয়ে এবং কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার মালিহাদ গ্রামের আবু তাহেরের স্ত্রী। নিহত লিজা খাতুনের একটি সাড়ে তিনমাসের পুত্র সন্তান রয়েছে।

নিহত লিজা খাতুনের পিতা আরিফুল ইসলাম অভিযোগ করে রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমার মেয়েকে গলা টিপে হত্যা করেছে জামায় আবু তাহের ও তার বাবা-মা। আসওয়াত হোসেন নামে সাড়ে তিন মাসের পুত্র সন্তান রয়েছে। এখন আমার এই নাতির কি হবে?

আরিফুল ইসলাম রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, গত দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে দেখাশোনা করে বিবাহ দিয়েছি মেয়েকে। আমার মেয়েটা মাদরাসার ছাত্রী ছিল। বিয়ের পর থেকেই আমার মেয়েকে নির্যাতন করতো আবু তাহের। কিছুদিন আগেও মারধর করে মেয়েকে। এরপর আমি মেয়েকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসি। তখন মেয়ে আমাকে জানায়, জামায় আবু তাহের বলেছে, আমার উপার্জনের সম্ভব ভ্যানটি যেন তাকে দিই, নাই একটি নতুন ভ্যান যেন কিনে দিই। এ কারণেই তাকে মারধর করেছে। আমি মেয়েকে বলেছিলাম, এখন আমার হাতে টাকা নাই। চাষবাষ করে একটি গরু কিনে দেবো বা ভ্যান কিনে দেব। এরপর আমি মেয়েকে বুঝিয়ে শ্বশুর বাড়ি পাঠাই। এই পাঠানোই যে আমার কাল হবে কে জানতো? আমার মেয়েটাকে বাঁচিয়ে রাখল না তারা। মেয়েটাকে তারা মেরে এখন বলছে আত্মহত্যা করেছে। আমার মেয়ে মাদরাসার ছাত্রী, সে কখনোই আত্মহত্যা করবে না।

আরিফুল ইসলাম বলেন, আজ সকালে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি এলাকার লোকজনের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসি। এসে মেয়ের মরদেহ দেখতে পাই। মেয়ের শ্বশুর বাড়ির কেউ ছিল না। তারা আমাদের সাথেও কোন যোগাযোগ করেননি। আমার নাতিটা তাদের কাছে। শুনেছি, নাতিটা খুব কান্নাকাটি করছে। যারা আমার মেয়ের মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন তারা বলছেন, ঝুলন্ত অবস্থায় মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এক কথায় মৃত অবস্থায় মেয়েকে নিয়ে আসা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ের ঠোটে আঘাতের চিহৃ আছে। ওরা আমার মেয়েকে গলা টিপে হত্যা করেছে। আমি তাদের কঠিন বিচার চাই।

এদিকে বুধবার দুপুরে লিজা খাতুনের মরদেহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হন্তান্তর করে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ। বিকেলেই মরদেহ বাবার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

লিজা খাতুনের মরদেহ সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী কর্মকর্তা আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়াহিদুল ইসলাম রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, লিজা খাতুনের পরিবারের সদস্যদের দাবি তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। আমরাও প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি শ্বাসরোধে লিজাকে হত্যা করা হয়েছে। তার ঠোট ও গলায় ক্ষতচিহৃ রয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। রিপোর্ট আসলে বিস্তারিত জানা যাবে এটা হত্যা কিনা।