চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের আহ্বায়ক কমিটি দাবি করেছে, সাহিত্য পরিষদ নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা করছে একটি পক্ষ। বিভিন্ন ভুয়া খবর ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার পায়তারা করছে তারা।
আহ্বায়ক কমিটি বলছে, লুকিয়ে গোপন ঘরে ভিডিও মিটিং করে গঠনতন্ত্র বিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে অবৈধ পূর্বতন সভাপতি। নিজে পলাতক থেকে মিটিং না করে পুনরায় স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। সাধারণ সম্পাদকের মতো পদে কোয়াপ্ট করা গঠনতন্ত্র বিরোধী।
গঠনতন্ত্রের ২১ অনুচ্ছেদের শুন্যপদ পূরণে স্পষ্ট বলা আছে, সভাপতি/সম্পাদকের পদ শুন্য হলে বা কার্যনির্বাহী পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের পদ শুন্য হলে সেক্ষেত্রে কমিটি ভেঙ্গে যাবে।
সাহিত্য পরিষদের পূর্বতন পলাতক সভাপতি নজমুল হেলাল নিছক ছলনার আশ্রয় নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন সাহিত্য পরিষদের আহ্বায়ক কমিটি। এছাড়া, সাহিত্য পরিষদের সহসভাপতিও পদত্যাগ করেছিলেন।
তথ্য সূত্র বলছে, চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি কবি নজমুল হেলাল বুধবার চুয়াডাঙ্গাতেই ছিলেন না। মূলত, তিনি ৫ই আগস্টের পর থেকে পলাতক রয়েছেন।
বিভিন্ন সময় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও, তিনি প্রভাব খাটিয়ে তা দমিয়েছেন। তবে ৫ তারিখে শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোর পর নজমুল হেলালকেও দেখা যায়নি।
অনেকেই বলছেন, নিজেকে আওয়ামীলীগ নেতা ভাবা এবং পরিচয় দেয়ায় এই সাহিত্যিকের এখন পালিয়ে বেড়ানোর কারণ হয়েছে।
অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সদস্য সুমন ইকবাল প্রেরিত ই-মেইলে যে নির্বাহী কমিটির সভার কথা বলা হয়েছে সেখানে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন সাহিত্য পরিষদের সভাপতি নজমুল হেলাল। তবে তিনি পলাতক আছেন এবং বুধবার চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদে এ ধরনের কোনো সভা অনুষ্ঠিত
হয়নি। এ ধরনের সভা হওয়ারই আর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সুযোগ নেই।
চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের ওই সভা নিয়ে, সাহিত্যিকরা বলছেন, নজমুল হেলাল পলাতক। সাহিত্য পরিষদে বুধবার সাধারণ সভা ব্যতিত অন্য কোনো সভা বা নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। পলাতক থাকায় সাধারণ সভায় নজমুল হেলাল অংশ নেননি। তবে তাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো।
চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ইকবাল আতাহার তাজ বলেন, চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সদস্যদের সম্মতিতে সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছিলো। ওই সভার পূর্বে নিয়ম মেনে বিজ্ঞাপন দিয়ে তা জানানোও হয়েছিলো। সাধারণ সভায় উপস্থিতি সংন্তোষজনক ছিলো। সভাপতি বাদে অনেকেই না আসার কারণ বা বাস্ততার কারণ জানিয়েছিলেন মুঠোফোনে। তবে ওই দিন কোনো নির্বাহী কমিটির সভা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, প্রকৃতপক্ষে সাহিত্যিকরা রাষ্ট্রের, কোনো দলের না। কেউ যদি পালিয়ে থাকেন, আর কোনোভাবে যদি সাহিত্য চর্চা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়, সেটা মোটেও সাহিত্যিকদের জন্য সুখকর নয়। সাহিত্য সভা বন্ধ থাকায় সাহিত্যিকরা এ উদ্যোগ নিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা সাহিত্য চর্চাকে থামতে দিতে চাই না। একটি মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের একাধিক সদস্য বলেন, চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদে রবিন্দ্র-নজরুল জন্ম বা মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তেমন কিছু না করলেও একটি দলের বিশেষ কারো জন্মদিন উদযাপন করে। সাহিত্য চর্চা বাদ দিয়ে লেজুরবৃত্তিতে নজর দিয়েছেন সভাপতি নজমুল হেলাল। এপার বাংলা ওপার বাংলা সাহিত্য সম্মেলনে শুধুমাত্র মোবাইল কল বিল নিয়েছে ৬০ হাজার টাকা। অতিথি করার নাম করে টাকা নেয়া হয়েছে। অযোগ্য লোকদের
অতিথির সারিতে বসিয়ে নাম ভাঙিয়ে আর্থিক ফায়দা এবং নানা প্রকার সুযোগ সুবিধা নেয়ায় মেতেছিলেন সভাপতি।
সদস্যরা বলেন, তবে সাহিত্য পরিষদ অরক্ষিত, কার্যালয় না খোলার কারণে সাহিত্য পরিষদ চত্বরে ঝোড় জঙ্গল, তবুও সেদিকে নজর দেয়নি বর্তমান কমিটি। প্রকাশনা নেই। সাহিত্য চর্চা নেই। শুধু সভাপতির ব্যক্তিগত রাজনৈতিক কার্যালয়ে পরিণত হয়েছিলো সাহিত্য পরিষদ। মূল্যবান বই থেকে শুরু করে আলমারি, সঙ্গিতের যন্ত্রপাতিসহ সব কিছুই অরক্ষিত থাকায় নষ্ট হয়েছে এবং নষ্ট হচ্ছে। অফিস সহকারীকে বাদ দেয়া হয়েছে। সাহিত্য পরিষদের সামনেই সভাপতি নজমুল হেলালের একটি মুদিখানার দোকান। সেখানে তিনি এবং তার ভাই দোকানদারী করেন। সারাদিন সেখানে থাকার সুবাদে সাহিত্য পরিষদ চত্বরের শহীদ আলাউল ইসলাম অ্যসোসিয়েশন হলে তারা ব্যতিত অন্য কোনো সংগঠনকে কোনো অনুষ্ঠানাদী করতে দেয়া হয় না।
সদস্যরা বলেন, ব্যক্তিগতভাবে সাহিত্য পরিষদের সভাপতির কারো সাথে সামান্য মনোমালিন্য থাকলেও তিনি তাকে বা তিনি জড়িত এমন কোনো সংগঠনকে সাহিত্য পরিষদ চত্বরে ঢুকতে দিতেন না।
সাহিত্য পরিষদের কয়েকজন সদস্য মজার ছলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অফিস সহকারীকে বাদ দিয়ে সভাপতি নজমুল হেলাল নিজে সাহিত্য পরিষদ ও শহীদ আলাউল ইসলাম অ্যসোসিয়েশন হলের চৌকিদারের দায়িত্ব নিয়েছেন। তবে ক্ষতির জন্য পাহারা দেন না, তিনি পাহারা দেন তার ভিন্ন মতের কেউ যাতে ওই চত্বরে প্রবেশ করতে না পারে।
চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ নিয়ে জেলার একাধিক সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা বলেন, চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ এই জেলার অন্তত্য পুরোনো এবং সফল সংগঠন। এই সাহিত্য পরিষদের বয়স ৪৭ বছর। এটি কম নয়। এই সাহিত্য পরিষদ থেকেই কত স্বনামধন্য মানুষের পদযাত্রা শুরু হয়েছে। উত্তম শিক্ষক, সাংবাদিক কত পেশার মানুষ
তৈরি হয়েছে। এই সাহিত্য পরিষদ সব সময় জেলার অনান্য সংগঠনকে আদরের স্নেহে রেখেছে। সকলকে এক ডোরে বাধার চেষ্টা করেছে। তবে, বর্তমান কমিটি সকল সংগঠনকে শত্রু ভেবে কাজ করেছে। ব্যক্তিগত মত বিরোধ থাকায় তিনি সকল সংগঠন থেকে সাহিত্য পরিষদকে আলাদা করেছেন। অথচ, অনেকেই অন্য কোনো সংগঠন করলেও, সাহিত্য চর্চা করেন দীর্ঘ বছর থেকে।
লেখক
সাংবাদিক শেখ সেলিম
চুয়াডাঙ্গা
এএইচ
নষ্টামী চলছে