চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে বেড়েছে বেওয়ারিশ কুকুরের দৌরাত্ম্য। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, শিশু, পথচারীসহ সাধারণ মানুষকে পড়তে হচ্ছে চরম বিড়ম্বনায়। রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে কুকুরের ভয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে পথচারীসহ স্থানীয়দের। প্রায় প্রতিদিনই কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন মানুষ।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!এ সব কুকুর নিধনে পৌরসভা ও প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ না থাকায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে ভ্যাকসিন-সুবিধা না থাকায় আক্রান্ত ব্যক্তিরাও চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, গত ৬ দিনে অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে ৬ জুলাই বেলা ৩টা পর্যন্ত কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে শিশুসহ মোট চিকিৎসা নিয়েছেন ৫৬ জন।
সদর হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমান অ্যান্টি-র্যাবিস ভ্যাকসিন থাকলে জেলার তিনটি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই ভ্যাকসিন। এতে বাধ্য হয়ে দূরদূরান্তের রোগীরা সদর হাসপাতালে এসে ভ্যাকসিন নিচ্ছেন।
এদিকে, রাতে বেওয়ারিশ কুকুরগুলোর ঘেউ ঘেউ শব্দে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে। রাতে কেউ মহল্লায় চলতে গেলে দল বেধে কুকুর এসে পথ আগলে রাখেয়। নতুন কেউ এলে তো ভয়ে অস্থির হয়ে যায়। কেবল যে পায়ে হাঁটা পথিক কুকুরের আক্রমণের শিকার, তা নয়। মোটরবাইক আরোহীর ওপরও কুকুর চড়াও হয়। এতে ঘটছে ছোটখাটো দূর্ঘটনা।
এদিকে, জেলার দামুড়হুদা, আলমডাঙ্গা ও জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন যাবত নেই অ্যান্টি-র্যাবিস ভ্যাকসিন। ফলে কুকুর-বিড়ালে আঁচড় কিংবা কামড়ালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এসে দিতে হবে। এতে চরম ভোগান্তি পড়ছেন রোগীরা।
ভুক্তভোগী এক নারী রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমার বাড়ি আলমডাঙ্গাতে। গতকাল একটি কুকুর কামড়িয়ে দিয়েছে। আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে তারা জানান এখানে ভ্যাকসিন নেই। কিনে দিতে হবে, অথবা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গিয়ে দিতে হবে। পরে বাধ্য হয়ে সদর হাসপাতালে এসেছি। সদর হাসপাতালের পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভ্যাকসিন রাখার দাবি জানান তিনি।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বেড়েছে কুকুরের উপদ্রব। দল বেধে সড়কের উপর শুয়ে-বসে থাকতে দেখা গেছে। এতে মাঝেমধ্যে ছোট-খাটো দূর্ঘটনাও ঘটছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, শহরের বিভিন্ন সড়কে কুকুরের উৎপাত বেড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় পাগলা কুকুরের আক্রমনে শিশুসহ নারী-পুরুষের জখম হচ্ছেন। রাতের বেলা সড়কের উপর শুয়ে থাকছে কুকুরের দল। এতে ছোটখাটো দূর্ঘটনাও ঘটছে। আবার পিছন থেকে তাড়া করছে কুকুরের দল।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভাধীন সুমিয়াদিয়া এলাকার বিজয় আরিয়ান রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমাদের এলাকায় গত চারদিনে পাগলা কুকুরের কামড়ে শিশুসহ মোট ৬ জন আহত হয়েছে। যাকে পাচ্ছে তাকে কামড়িয়ে দিচ্ছে। আবার পাশ দিয়ে কেউ গেলে তেড়ে আসছে। এতে এলাকায় রিতীমত আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরে গতকাল কে বা কারা কুকুরটাকে মেরে ফেলেছে বলে শুনেছি।
চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক বলেন, আইন অনুযায়ী কুকুর নিধনের অনুমতি নেই। তবে য়েহেতু শহরে কুকুরের উৎপাত বেড়েছে। তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হাসান রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, যদি কুকুর-বিড়ালের আক্রমনে আহত রোগী আসে তাহলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে অ্যান্টি-র্যাবিস ভ্যাকসিন নিয়ে রাখতে পারে। আর ভ্যাকসিন না থাকলে রোগীদের চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ড. কিসিঞ্জার চাকমা রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে কিছু এখতেয়ার দেয়া আছে, যদি জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ে সে ক্ষেত্রে বেওয়ারিশ কুকুরের বিষয়ে কিছু কার্যক্রম আছে। সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা ব্যবস্থা নিতে পারে। আমি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে পরিসখ্যান নেব। প্রয়োজনে পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে নির্দেশনা দেব।
তিনি আরও বলেন, শুধু কুকুর না, অন্য কোন প্রাণীর উপর অযাচিত কেউ ক্ষতি না করে সেটাও আমাদের দেখতে হবে৷ নিয়মতান্ত্রিকভাবে সেভাবে পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করা উচিত, যদি জনস্বাস্থ্যের হুমকি হয় সেগুলো বিধিবিধান প্রক্রিয়া আছে। চাইলেই কুকুর মেরে ফেলা যায়না। আইনত কিছু বিধিনিষেধ রয়ে গেছে।
এএইচ