রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ‘কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট’ ভবনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় মারা গেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নাহিয়ান আমিন ও লামিশা ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে নাহিয়ানের মৃত্যুর খবর জানিয়ে নটরডেম কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ফেসবুক পেজে পোস্ট দেয়া হয়েছে।
পোস্টে বলা হয়েছে, নটরডেম কলেজের সাবেক ছাত্র ও বুয়েটের ইইই বিভাগে বর্তমানে অধ্যয়নরত নাহিয়ান আমিন আগুনের পুড়ে মারা গেছেন।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মোট নিহত হয়েছেন ৪৪ জন। রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে ১ জন, ঢামেক হাসপাতালে ৩৩ জন ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১০ জনের মরদেহ রয়েছে।
নাহিয়ান আমিন বিশ্ববিদ্যালয়টির ইইই বিভাগের ২২ ব্যাচের শিক্ষার্থী। আর লামিশা ইসলাম একই ব্যাচের মেকানিক্যাল বিভাগের শিক্ষার্থী। নাহিয়ানের বাড়ি বরিশালে বলে জানা গেছে।
নাহিয়ানের মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টের মাধ্যমে নাহিয়ানের বন্ধু জুনায়েদ বলেন, ‘নাহিয়ান একবার আমাকে বলেছিল, এখানে থাকলে একদিন হয় রোড এক্সিডেন্টে মারা যাব, না হলে আগুনে পুড়ে। এত দ্রুত নাহিয়ানের কথা সত্যি হয়ে যাবে কল্পনাও করতে পারিনি।’
নিহত নাহিয়ানের আরেক বন্ধু তৌসিফ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, বরিশাল জিলা স্কুলের সাবেক ছাত্র নাহিয়ানের সঙ্গে আগামীতে অনেক আড্ডা ও গেট টুগেদারের পরিকল্পনা ছিল তাদের। সব কিছু অকল্পনীয়ভাবে এক নিমিষে শেষ হয়ে গেল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায়, মৃত্যুর ১৯ ঘণ্টা আগেও ফেসবুকে ২৯ ফেব্রুয়ারি লিপ ইয়ায়ের দিনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে নাহিয়ান লিখেছিল, ‘হয়তো চার বছর পর আবার ২৯ ফেব্রুয়ারির এমন একটা দিনের দিকে ফিরে তাকাব।’
নাহিয়ানের দেয়া শেষ পোস্টটির স্ক্রিনশট ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। নাহিয়ানের বন্ধুবান্ধবদের অনেকে জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় লামিশা ইসলাম নামে আরেকজন বুয়েটের শিক্ষার্থী ওই বিল্ডিংয়ে ছিলেন। তিনিও মারা গেছেন। লামিশা ২২ ব্যাচের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন বলে জানা গেছে।
এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, মারা যাওয়াদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছেন। এছাড়া ঢাকা মেডিকেল ও শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে আরও ২২ জন ভর্তি আছেন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি সংবাদ পেয়ে দ্রুত চলে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে দ্রুত যেতে বলেছেন। এখানে এসে ভয়াবহ অবস্থা দেখলাম। বার্ন ইনস্টিটিউটে এখন পর্যন্ত ১০ জন মারা গেছেন। অপরদিকে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৩ জন মারা গেছেন।
তিনি আরও বলেন, যারা এখন পর্যন্ত বেঁচে আছেন, তাদের বেশির ভাগের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা বেঁচে আছেন তাদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ‘কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট’ ভবনে ভয়াবহ আগুনে মোট ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ‘কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট’ ভবনে আগুন লাগে। প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টার পর রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এএইচ