০৪:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

(ভিডিও): কেরু এণ্ড কোম্পানির চেইন চুরির অভিযোগে যুবককে অমানবিক নির্যাতন

গুরুতর অবস্থায় গতকাল বুধবার (৩ জুলাই) দুপুরে সোহেলকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত সোহেল হোসেন চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার (আজমপুর) কেরু মিলপাড়ার মৃত বিল্লাল হোসেনের ছেলে।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির কারখানায় চলমান কাজের সাইড থেকে গত ২৯ জুন রাতে কে বা কারা আধুনিকায়নের বয়লারের মূল্যবান কেরিয়ার চেইন চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর নিরাপত্তার দায়িত্বে অবহেলায় স্থায়ী দরবেশ আলী ও চারজন অস্থায়ী (চুক্তিভিক্তিক) হাবিলদার শাহিন, শাহাবুল, রাহিমুল ইসলাম ও মিলন জোয়ার্দ্দারকে কৈফিয়ত তলব করে তিনদিনের মধ্যে জবার দিতে নির্দেশনা দেয় কেরুর প্রশাসনিক বিভাগ।

আহত সোহেল হোসেন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, মঙ্গলবার (২ জুলাই) সন্ধার পর শাহীন, শাহাবুলসহ কয়েকজন কেরুর নিরাপত্তাকর্মী আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে কেরুর এন্ড কোম্পানি মধ্যে নিয়ে আসেন তারা। এরপরই শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন। তারা আমারে রাতভর বেধে রড-কাঠ দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। পরদিন ভোরে (বুধবার) কেরুর মেইন গেটে আমাকে ফেলে রাখে। কি কারণে এই নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছে জানতে চাইতে তিনি বলেন, কেন আমাকে মারধর করেছে আমি জানিনা। তারা পরিকল্পিতভাবেই মেরেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করব।

অভিযুক্ত নিরাপত্তাকর্মী শাহিন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, গত ২৯ জুন রাতে সোহেল ও তার সহযোগীরা কেরু এন্ড কোম্পানির আধুনিকায়ন করনের বয়লারের কেরিয়ার চেইন চুরি করে নিয়ে যায়। এদিন রাতে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে আমিসহ পাঁচজন দায়িত্বে ছিলাম। এ ঘটনার পর কেরু এন্ড কোম্পানি প্রশাসনিক শাখা থেকে আমাদের পাঁচজনকে শোকজ করেন। পরে চুরির ঘটনাস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষন করে সোহেলকে শনাক্ত করি। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর সোহেল স্বেচ্ছায় আমার নিকট আসে। পরে আমি কেরু প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিকট নিয়ে যায়। সেখানে অনেকেই মারধর করতে গেলে আমি নিজেই ঠেকিয়েছি। সামান্য মারধরের ঘটনা ঘটেছে। সে সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। সোহেল আমাদের নিকট চুরির বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত নিরাপত্তাকর্মী শাহাবুলের নিকট কল করা হলে তিনি বলেন, আমি এখন মোটরসাইকেলের উপর আছি। পরে কথা হবে। এর কয়েক ঘন্টা পর একাধিকবার কল করা হলে তিনি আর রিসিভ করেননি।

কেরুজ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুুর রহমান রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। অত্যান্ত দুংখজনক। সে গরীব ঘরের ছেলে। তাকে বেধে ঝুলিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। বুধবার ভোরে কেরুর গেইটের সামনে গুরুতর আহত অবস্থায় সোহেলকে পড়ে থাকতে দেখে আমি নিজে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কেরুর হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সোহেল চুরির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। আমিও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেছি। ফুটেজে চোরদের চেহারা অস্পষ্ট ছিল। কোন দিক থেকেই সোহেলের সঙ্গে তাদের মিল নেই।

কেরু এণ্ড কোম্পানি লিমিডেটের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মুজাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মঙ্গলবার সন্ধার পর সোহেলকে নিয়ে আসার পর আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। সে চুরির বিষয়টি অস্বীকার করেছে। এরপর আমি সেখান থেকে চলে যায়। পরদিন শুনেছি তাকে মারধর করা হয়েছে। এটি আইনসিদ্ধ নয়।

তিনি আরও বলেন, চুরির পর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা শাহিনসহ পাঁচ কর্মীকে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। যা তিনদিনের মধ্যে জবার দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রশাসনিক বিভাগ।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শাপলা খাতুন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, সোহেলের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহৃ পাওয়া গেছে। এছাড়া একটি হাত আঘাত ছিল, সেটি ভেঙ্গেছে কিনা জানতে এক্স-রে করা পরামর্শ দিয়েছি।

দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি মহাব্যবস্থাপক প্রশাসন মোহাম্মদ ইউসুফ আলী রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, চুরির ঘটনার পর দর্শনা থানায় অভিযোগ সহ দায়িত্ব অবহেলায় অভিযোগে কেরু এন্ড কোম্পানির একজন স্থায়ী ও চারজন অস্থায়ী নিরাপত্তাকর্মীকে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। সোহেলকে মারধরের বিষয়ে জানতে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মারধরের বিষয়টি আমি জেনেছি।

One thought on “(ভিডিও): কেরু এণ্ড কোম্পানির চেইন চুরির অভিযোগে যুবককে অমানবিক নির্যাতন

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

দর্শনা থানা পুলিশের অভিযানে ৬ কেজি গাজাসহ দুজন আটক

(ভিডিও): কেরু এণ্ড কোম্পানির চেইন চুরির অভিযোগে যুবককে অমানবিক নির্যাতন

প্রকাশের সময় : ১২:৪৬:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪

গুরুতর অবস্থায় গতকাল বুধবার (৩ জুলাই) দুপুরে সোহেলকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত সোহেল হোসেন চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার (আজমপুর) কেরু মিলপাড়ার মৃত বিল্লাল হোসেনের ছেলে।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির কারখানায় চলমান কাজের সাইড থেকে গত ২৯ জুন রাতে কে বা কারা আধুনিকায়নের বয়লারের মূল্যবান কেরিয়ার চেইন চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর নিরাপত্তার দায়িত্বে অবহেলায় স্থায়ী দরবেশ আলী ও চারজন অস্থায়ী (চুক্তিভিক্তিক) হাবিলদার শাহিন, শাহাবুল, রাহিমুল ইসলাম ও মিলন জোয়ার্দ্দারকে কৈফিয়ত তলব করে তিনদিনের মধ্যে জবার দিতে নির্দেশনা দেয় কেরুর প্রশাসনিক বিভাগ।

আহত সোহেল হোসেন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, মঙ্গলবার (২ জুলাই) সন্ধার পর শাহীন, শাহাবুলসহ কয়েকজন কেরুর নিরাপত্তাকর্মী আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে কেরুর এন্ড কোম্পানি মধ্যে নিয়ে আসেন তারা। এরপরই শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন। তারা আমারে রাতভর বেধে রড-কাঠ দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। পরদিন ভোরে (বুধবার) কেরুর মেইন গেটে আমাকে ফেলে রাখে। কি কারণে এই নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছে জানতে চাইতে তিনি বলেন, কেন আমাকে মারধর করেছে আমি জানিনা। তারা পরিকল্পিতভাবেই মেরেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করব।

অভিযুক্ত নিরাপত্তাকর্মী শাহিন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, গত ২৯ জুন রাতে সোহেল ও তার সহযোগীরা কেরু এন্ড কোম্পানির আধুনিকায়ন করনের বয়লারের কেরিয়ার চেইন চুরি করে নিয়ে যায়। এদিন রাতে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে আমিসহ পাঁচজন দায়িত্বে ছিলাম। এ ঘটনার পর কেরু এন্ড কোম্পানি প্রশাসনিক শাখা থেকে আমাদের পাঁচজনকে শোকজ করেন। পরে চুরির ঘটনাস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষন করে সোহেলকে শনাক্ত করি। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর সোহেল স্বেচ্ছায় আমার নিকট আসে। পরে আমি কেরু প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিকট নিয়ে যায়। সেখানে অনেকেই মারধর করতে গেলে আমি নিজেই ঠেকিয়েছি। সামান্য মারধরের ঘটনা ঘটেছে। সে সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। সোহেল আমাদের নিকট চুরির বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত নিরাপত্তাকর্মী শাহাবুলের নিকট কল করা হলে তিনি বলেন, আমি এখন মোটরসাইকেলের উপর আছি। পরে কথা হবে। এর কয়েক ঘন্টা পর একাধিকবার কল করা হলে তিনি আর রিসিভ করেননি।

কেরুজ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুুর রহমান রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। অত্যান্ত দুংখজনক। সে গরীব ঘরের ছেলে। তাকে বেধে ঝুলিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। বুধবার ভোরে কেরুর গেইটের সামনে গুরুতর আহত অবস্থায় সোহেলকে পড়ে থাকতে দেখে আমি নিজে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কেরুর হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সোহেল চুরির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। আমিও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেছি। ফুটেজে চোরদের চেহারা অস্পষ্ট ছিল। কোন দিক থেকেই সোহেলের সঙ্গে তাদের মিল নেই।

কেরু এণ্ড কোম্পানি লিমিডেটের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মুজাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মঙ্গলবার সন্ধার পর সোহেলকে নিয়ে আসার পর আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। সে চুরির বিষয়টি অস্বীকার করেছে। এরপর আমি সেখান থেকে চলে যায়। পরদিন শুনেছি তাকে মারধর করা হয়েছে। এটি আইনসিদ্ধ নয়।

তিনি আরও বলেন, চুরির পর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা শাহিনসহ পাঁচ কর্মীকে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। যা তিনদিনের মধ্যে জবার দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রশাসনিক বিভাগ।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শাপলা খাতুন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, সোহেলের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহৃ পাওয়া গেছে। এছাড়া একটি হাত আঘাত ছিল, সেটি ভেঙ্গেছে কিনা জানতে এক্স-রে করা পরামর্শ দিয়েছি।

দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি মহাব্যবস্থাপক প্রশাসন মোহাম্মদ ইউসুফ আলী রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, চুরির ঘটনার পর দর্শনা থানায় অভিযোগ সহ দায়িত্ব অবহেলায় অভিযোগে কেরু এন্ড কোম্পানির একজন স্থায়ী ও চারজন অস্থায়ী নিরাপত্তাকর্মীকে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। সোহেলকে মারধরের বিষয়ে জানতে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মারধরের বিষয়টি আমি জেনেছি।