এক ইউপি চেয়ারম্যানকে হত্যাচেষ্টার না কাটতেই এবার চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন খানকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার (২৮ জুন) রাত ৮টার দিকে জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের আলার মোড়ের অদূরে এ ঘটনা ঘটে। এরপরই সুযোগ বুঝে পালিয়ে যান দূর্বত্তরা।
পরে রক্তাক্ত অবস্থায় চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনকে উদ্ধার করে প্রথমে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো নেয়া হয়েছে।

এর আগে গত ২৮ মে সকালে একই স্টাইলে একই উপজেলার উথলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হান্নানকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বত্তরা। তিনি বর্তমানে ঢাকার বক্ষব্যাধী ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দুই চেয়ারম্যানই স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা।
এ ঘটনার জীবননগর থানায় মামলা দায়ের হলেও এখনো পর্যন্ত পুলিশ কারোর টিকিও ছুতে পারেনি। এ কারনেই উপজেলারজুড়ে বিরাজ করতে আতঙ্ক।
এদিকে, এক মাসের ব্যবধানে দুই চেয়ারম্যানকে একই স্টাইলে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় উপজেলাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। উপজেলাবাসী বলছে, তাহলে পরবর্তী টার্গেট কে? এমন প্রশ্ন এখন জীবননগরবাসীর মুখে মুখে।
তবে একটি সুত্র বলছে, জীবননগর উপজেলার শিয়ালমারী পশুহাট নিয়ে দ্বন্ধের জের ধরেই প্রতিপক্ষরা এ হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে। তবে ক্যামেরার সামনে এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

স্থানীয়রা জানান, ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন প্রতিদিন সন্ধ্যার পর মনোহরপুর গ্রামের আলার মোড় নামকস্থানের চায়ের দোকানে চা পান করতে আসেন। শুক্রবার সন্ধ্যার পর আমরা একসাথে বসে চা পান করলাম। পরে তিনি (চেয়ারম্যান) মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে ফিরছিলেন। এর এক মিনিট পরেই এক নারীর চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পেয়ে আমরা দৌঁড়ে গিয়ে দেখি চেয়ারম্যানকে কে বা কারা পিছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে পালিয়ে গেছে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে রক্তাক্ত অবস্থায় চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করে জীবননগর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসক তাকে যশোরে রেফার্ড করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ওই নারীর চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে হয়ত দুর্বৃত্তরা পালিয়ে গেছে। না হলে তারা চেয়ারম্যানকে মেরে ফেলত।’
মনোহরপুর গ্রামের জুলি খাতুন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, সন্ধ্যার পর আমার ছোট ছেলের সাথে আলার মোড়ে সুপারি কিনতে যাচ্ছিলাম। পথের মাঝে দেখি চেয়ারম্যান মামা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আর পাশ দিয়ে একটি মোটরসাইকেলে মুখোশ পরিহিত দুজন ব্যক্তি চলে যাচ্ছে। যাওয়ার সময় তাদের হাতে ধারাল অস্ত্র দেখতে পাই। চিৎকার-চেঁচামেচি করলে স্থানীয়রা ছুটে আসে।
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মোস্তাফিজুর রহমার সুজন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনের পিঠের ডান পাশে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের জখম পাওয়া গেছে। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। তিনি অ্যাজমা ও পেশারের রোগী, তাই ঝুঁকি এড়াতে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।

খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নাজিম উদ্দিন আল আজাদ।
তিনি রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো নজরদারি করা হচ্ছে। আমরা প্রত্যাশা করছি, কারা এ গুপ্ত হামলার সাথে জড়িত, তা দ্রুতই উন্মোচন করতে পারব। গত ১ মাস আগে ইউপি চেয়ারম্যাব আব্দুল হান্নানের উপর হামলার ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। অতি শীঘ্রই অভিযুক্তদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৮ মে জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নানকে একই স্টাইলে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। ওই সময় তাঁকে প্রথমে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্ব্যুলেন্সে করে ঢাকায় নেয়া হয়। তিনি বর্তমানে ঢাকা বক্ষব্যাধী ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এএইচ