১২:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টানা ৩ সপ্তাহ চুয়াডাঙ্গার নেহালপুর ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম বন্ধ, ভোগান্তি

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম থমকে গেছে। প্রশাসক ও সচিব না থাকায় ৩ সপ্তাহ যাবত বন্ধ আছে কার্যক্রম। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নাগরিক সেবা প্রত্যাশী জনগণকে। জরুরি সেবা নিতে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। দ্রুত প্রশাসক ও সচিব নিয়োগের দাবি স্থানীয়দের।

জানা গেছে, ২০১৫ সালে বৃহত্তর বেগমপুর ইউনিয়ন ভেঙে দুটি ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করা হয়। যার একটি নেহালপুর। মামলা জটিলতাসহ নানাবিধ সমস্যা মিটিয়ে এই বছরের ৩০ জুন প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার মাধ্যমে পরিষদের কার্যক্রম শুরু করা হয়।

বুধবার (২৮ নভেম্বর) সরেজমিনে নেহালপুর ইউনিয়ন পরিষদে দেখা যায়, একজন দফাদার ও একজন গ্রাম-পুলিশ ছাড়া পুরো পরিষদ ফাঁকা। প্রশাসক ও সচিবের রুম বন্ধ, সাথে তথ্য সেবা কেন্দ্রও।

পরিষদে ট্রেড লাইসেন্স করতে আসা হিজলগাড়ী বাজারের একজন ব্যবসায়ী বলেন, আজ ২ সপ্তাহ যাবত একটি ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য ঘুরছি। নতুন প্রশাসক আসবে শুনে আজকে আসলাম। কিন্তু পরিষদ বন্ধ।

নাগরিক সনদপত্র নিতে আসা একজন বলেন, চেয়ারম্যান-মেম্বার থাকা অবস্থায় ২০ টাকা দিয়ে একটি নাগরিক সনদপত্র নেওয়া যেত। চেয়ারম্যান মেম্বারদের কাছে গেলেই সই স্বাক্ষর করে দিতো। কিন্তু ১ সপ্তাহ যাবত একটি নাগরিক সনদের জন্য ঘুরছি।

আরও পড়ুন

প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদরের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. নুর মোহাম্মদকে। চলতি বছরের ১৬ জুলাই প্রশাসক পরিষদে যোগদান করেন। এরপর গত ২৪ জুলাই সচিব নিয়োগ প্রদান করা হয়। সচিব হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় আলুকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব জিয়াউর রহমানকে।

৯টি ওয়ার্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় যথাক্রমে- ১ নম্বর ওয়ার্ডে সাহাবুদ্দীন, ২ নম্বর ওয়ার্ডে আলমগীর কবির, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে আনোয়ার হোসেন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আনোয়ার হোসেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মোস্তাফিজুর রহমান, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মিল্টন আলী, ৭ নম্বর জান্নাতুল ফেরদৌস, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সহিদুল ইসলাম ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সানজিদা আফরিন মিতাকে।

এর মধ্যে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিহি কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফিজুর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বদলি হয়ে যান। তার বর্তমান কর্মস্থল তিতুদহ ইউনিয়নের বড়শলুয়া উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দীর্ঘদিন মামলা জটিলতায় ঝুলে থাকা নেহালপুর ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চালু হওয়ায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে স্বস্তি দেখা দেয়।

তবে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মোটামুটি স্বাভাবিক হয় এই ইউনিয়নের নাগরিক সেবা কার্যক্রম। এরই মধ্যে প্রশাসক নুর মোহাম্মদের বদলি হয়ে যায়। তিনি চলতি নভেম্বর মাসের ৬ তারিখে সর্বশেষ অফিস করেন। তারপর থেকেই মূলত ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম আংশিক বন্ধ হয়ে যায়। এরই মধ্যে সচিবের বদলির আদেশ হয়েছে চলতি মাসের ২৪ তারিখে। প্রশাসক ও সচিববিহীন নাগরিক সেবা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে পরিষদের। এমন অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে স্থানীয় জনগণ।

হিজলগাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ হলো নাগরিক সেবা কেন্দ্র। সেটা আজ ৩ সপ্তাহ যাবত বন্ধ। স্থানীয় জনগণের ভোগান্তি লাঘব করার জন্য যেন দেখার কেউ নেই।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নজীবুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার কার্যক্রম চলমান। দ্রুতই বিষয়টি সমাধান হবে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

এক চাকা নিয়ে ঢাকায় অবতরণ করলো বিমানের ফ্লাইট, নিরাপদে ৭১ যাত্রী

টানা ৩ সপ্তাহ চুয়াডাঙ্গার নেহালপুর ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম বন্ধ, ভোগান্তি

প্রকাশের সময় : ০৩:২৫:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম থমকে গেছে। প্রশাসক ও সচিব না থাকায় ৩ সপ্তাহ যাবত বন্ধ আছে কার্যক্রম। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নাগরিক সেবা প্রত্যাশী জনগণকে। জরুরি সেবা নিতে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। দ্রুত প্রশাসক ও সচিব নিয়োগের দাবি স্থানীয়দের।

জানা গেছে, ২০১৫ সালে বৃহত্তর বেগমপুর ইউনিয়ন ভেঙে দুটি ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করা হয়। যার একটি নেহালপুর। মামলা জটিলতাসহ নানাবিধ সমস্যা মিটিয়ে এই বছরের ৩০ জুন প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার মাধ্যমে পরিষদের কার্যক্রম শুরু করা হয়।

বুধবার (২৮ নভেম্বর) সরেজমিনে নেহালপুর ইউনিয়ন পরিষদে দেখা যায়, একজন দফাদার ও একজন গ্রাম-পুলিশ ছাড়া পুরো পরিষদ ফাঁকা। প্রশাসক ও সচিবের রুম বন্ধ, সাথে তথ্য সেবা কেন্দ্রও।

পরিষদে ট্রেড লাইসেন্স করতে আসা হিজলগাড়ী বাজারের একজন ব্যবসায়ী বলেন, আজ ২ সপ্তাহ যাবত একটি ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য ঘুরছি। নতুন প্রশাসক আসবে শুনে আজকে আসলাম। কিন্তু পরিষদ বন্ধ।

নাগরিক সনদপত্র নিতে আসা একজন বলেন, চেয়ারম্যান-মেম্বার থাকা অবস্থায় ২০ টাকা দিয়ে একটি নাগরিক সনদপত্র নেওয়া যেত। চেয়ারম্যান মেম্বারদের কাছে গেলেই সই স্বাক্ষর করে দিতো। কিন্তু ১ সপ্তাহ যাবত একটি নাগরিক সনদের জন্য ঘুরছি।

আরও পড়ুন

প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদরের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. নুর মোহাম্মদকে। চলতি বছরের ১৬ জুলাই প্রশাসক পরিষদে যোগদান করেন। এরপর গত ২৪ জুলাই সচিব নিয়োগ প্রদান করা হয়। সচিব হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় আলুকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব জিয়াউর রহমানকে।

৯টি ওয়ার্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় যথাক্রমে- ১ নম্বর ওয়ার্ডে সাহাবুদ্দীন, ২ নম্বর ওয়ার্ডে আলমগীর কবির, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে আনোয়ার হোসেন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আনোয়ার হোসেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মোস্তাফিজুর রহমান, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মিল্টন আলী, ৭ নম্বর জান্নাতুল ফেরদৌস, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সহিদুল ইসলাম ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সানজিদা আফরিন মিতাকে।

এর মধ্যে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিহি কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফিজুর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বদলি হয়ে যান। তার বর্তমান কর্মস্থল তিতুদহ ইউনিয়নের বড়শলুয়া উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দীর্ঘদিন মামলা জটিলতায় ঝুলে থাকা নেহালপুর ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চালু হওয়ায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে স্বস্তি দেখা দেয়।

তবে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মোটামুটি স্বাভাবিক হয় এই ইউনিয়নের নাগরিক সেবা কার্যক্রম। এরই মধ্যে প্রশাসক নুর মোহাম্মদের বদলি হয়ে যায়। তিনি চলতি নভেম্বর মাসের ৬ তারিখে সর্বশেষ অফিস করেন। তারপর থেকেই মূলত ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম আংশিক বন্ধ হয়ে যায়। এরই মধ্যে সচিবের বদলির আদেশ হয়েছে চলতি মাসের ২৪ তারিখে। প্রশাসক ও সচিববিহীন নাগরিক সেবা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে পরিষদের। এমন অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে স্থানীয় জনগণ।

হিজলগাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ হলো নাগরিক সেবা কেন্দ্র। সেটা আজ ৩ সপ্তাহ যাবত বন্ধ। স্থানীয় জনগণের ভোগান্তি লাঘব করার জন্য যেন দেখার কেউ নেই।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নজীবুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার কার্যক্রম চলমান। দ্রুতই বিষয়টি সমাধান হবে।