চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় অভিমান করে মনোয়ারা বেগম (৭২) নামের এক বৃদ্ধা আত্মহত্যার করেছেন।
আজ শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ।
নিহত মনোয়ারা বেগম চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছি গ্রামের মণ্ডলপাড়ার মৃত. নূর আলী মল্লিকের স্ত্রী।
এর আগে শুক্রবার সকালে নিজ ঘর থেকে মনোয়ারা বেগমের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত মনোয়ারার ছোট ভাই হাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বোন মনোয়ারা বেগমের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে আসাদুল ইসলাম কুয়েত প্রবাসী। আমার বোন আসাদুলের বাড়িতেই থাকতেন বেশিরভাগ সময়।
হাফিজুর রহমান রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত আসাদুলের স্ত্রী শিরিন খাতুন তার শাশুড়ী মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে অশোভন আচরণ করতেন বলে শুনে আসছি আমরা। সম্প্রতি এক দুইদিন আগে শিরিন তার স্বামী আসাদুলকে মোবাইলে তার শাশুড়ির বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলেছিলেন। এ সময় স্ত্রীর অভিযোগ শুনে আসাদুল তা মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে বলেন স্ত্রীকে। মোবাইলের লাউড স্পিকারে থাকায় ছেলের মুখে ‘মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার’ কথা শুনে ফেলেছিলেন। এরপর তিনি খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। এ ঘটনার পরদিন আমার বোন তার একমাত্র মেয়ে আলমডাঙ্গার বকশিপুরে বেড়াতে যান এবং তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ শেষে এদিনই স্বামীর বাড়ি বেলগাছি গ্রামে চলে আসেন। রাতের যে কোন সময় তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমার বোন নামাজী ছিলেন। তিনি কখনোই নামাজ বাদ দিতেন না। আর তিনি আত্মহত্যা করবেন এটা কেউই কল্পনাও করেননি।
আমাদের ধারণা ছেলের মুখে এই কথা শুনে মনে প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছিলেন। এর কারণেই হয়তো তিনি এই পথ বেচে নিয়েছেন।
নিহত মনোয়ারা বেগমের এক স্বজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, তিনি তার পুত্রবধূর কারণেই আত্মহত্যার পথ বেচে নিয়েছেন। তিনি অত্যান্ত ভালো মানুষ ছিলেন। মৃত্যুর আগে তার মেয়েকে বলেছিলেন এখানে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। কারণ, ছেলের বাড়িতেই খাবার চেয়ে খেতে হতো। আবার পুত্রবধূ খাবার খেতে বসলেও তাকে ডাকতো না। এই কথাগুলো অন্য কাউকে বলতে নিষেধ করেছিলেন। যা মৃত্যুর পর তিনি আমাদের বিষয়টি জানিয়েছেন। এছাড়া মোবাইলে নিজ ছেলে ও তার স্ত্রীর কথোপকথনের সময় মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছিলেন বলে আমরাও এমন কথা শুনতে পাচ্ছি। আমাদের পক্ষ থেকেও বিষয়টি খোঁজ নেয়া হচ্ছে। ওই পুত্রবধূ শিরিনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে কিনা সবার সঙ্গে আলোচনার সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
নিহতের মেয়ে জামায় মাহাবুল ইসলাম রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমার শাশুড়ী বয়স্ক মানুষ। পেটে টিউমার ব্রেনে সমস্যা ছিল। অপারেশন করার জন্য চাপ দিলেও তিনি করেননি। হয়তো অতিরিক্ত অসুস্থতার কারণে সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া কারোর সঙ্গে মনোমালিন্য ছিল কিনা এই বিষয়টি আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে জানতে নিহতের পুত্রবধূ শিরিনের নাম্বারটি বন্ধ থাকায় তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) মাসুদুর রহমান রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, খবর পেয়ে আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। প্রতিনেশি, আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলে আত্মহত্যার কোন কারণ জানা যায়নি। তিনি খুব বেশি অসুস্থতায় ভুগছিলেন না বলে জানান তারা। এ কারণে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। রিপোর্ট আসলেই বিস্তারিত জানা যাবে।
এএইচ
2 thoughts on “স্ত্রীর কথা শুনে বৃদ্ধা মাকে বাড়ি ছাড়া করতে বলেছিলেন প্রবাসী ছেলে, অভিমানে মায়ের আত্মহত্যা”