চুয়াডাঙ্গা শহরের কোর্ট মোড়ে বৈষাম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে হামলার ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে।
এই মামলায় চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, দুই সংবাদকর্মীসহ মোট ৫৬ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
রোববার (১৮ আগস্ট) চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কলোনি পাড়ার মৃত খাজেম উদ্দীনের ছেলে শাহাবুদ্দীন আহম্মেদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা কোর্ট মোড়, কাঠপট্টি এলাকায় জড়ো হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করছিল। শান্তিপূর্ণ ওই কর্মসূচিতে নাশকতা চালিয়ে নস্যাৎ করার উদ্দেশ্যে দেশীয় ধারালো অস্ত্র রাম দা, হাতকুড়াল, হকিস্টিক ও ককটেল দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর হামলা চালায়। রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটনের নির্দেশে অন্যান্য আসামিরা নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর হামলে পড়ে। আসামিগণ তাদের হাতে থাকা রাম দা, হাতকুড়াল, হকিস্টিক দিয়া নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদের এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও মারপিট করে গুরুতর জখম করে।
মামলার ৭ নম্বর আসামি রাশিদুল ইসলাম মিঠুর নির্দেশে ৩-৬ নম্বর আসামিরা বৈষম্যবিরোধী সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে ককটেল বিস্ফোরণ করে নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ককটেল বিস্ফোরণের আলামত স্কসটেপ, টিনের কোটা, মারবেল, জালের কাঠি ঘটনাস্থলে পড়ে থাকলেও স্বৈরাশাসকের অভ্যুত্থানের কারণে আইনশৃঙ্খলা অবনতি থাকায় এজাহারকারীর পক্ষে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিদের এহেন কর্মকাণ্ড ফেসবুকসহ বিভিন্ন আইডিতে ভাইরাল হয়েছে।
ওই মামলার আসামিরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর এলাকার আরামপাড়ার সিরাজুল হকের ছেলে রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন (৬০), জেলা যুবলীগের সদস্য পৌর এলাকার জীবননগর বাসস্ট্যান্ড পাড়ার মৃত ছাদার হোসেনের ছেলে আলমগীর আজম খোকা (৪৫), জেলা যুবলীগের সদস্য পৌর এলাকার কেদারগঞ্জপাড়ার মৃত দরুদ কসাইয়ের ছেলে শরিফ হোসেন দুলু (৪৫), শান্তিপাড়ার ইউসুফ বাঙ্গালের ছেলে অনিক গ্রুপের কর্মী ও একাধিক মামলার আসামি ইমদাদুল হক আকাশ (২৬), নুরনগর কলোনি পাড়ার আব্দুল ওহাবের ছেলে মোমিন, একই এলাকার রবিউল ইসলামের ছেলে হালিম, মসলেম বাকীর ছেলে রশিদুল ইসলাম মিঠু (২৭), জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পৌর এলাকার আরামপাড়ার মোমিন জোয়ার্দ্দারের ছেলে অনিক জোয়ার্দ্দার (৩৫), জীবননগর বাসস্ট্যান্ড পাড়ার বকুল কানার ছেলে সাকিল (২৫), শান্তিপাড়ার রুহুল আমিনের ছেলে সুমন (২৫), একই এলাকার লালন শেখের ছেলে নাবিল হোসেন (২৬), ফার্মপাড়ার মেছো আলীর ছেলে সাদিক, সবুজপাড়ার শহিদুলের ছেলে আনোয়ার (৩২), মহিলা কলেজপাড়ার ইমরান (২৫), জীবননগর বাসস্ট্যান্ড পাড়ার জুম্মন মিয়ার ছেলে খোকন (৪০), একই এলাকার বাবুলের ছেলে রুবেল (৩৫), সাদেক আলী মল্লিকপাড়ার মৃত তৈয়ব মিয়ার ছেলে জুয়েল (বাটুল) (৪৫), সবুজপাড়ার রমজানের ছেলে খান জাহান (৩০), সিনেমা হল পাড়া বাগান পট্টি (কাঠপট্টি) এলাকার বাদল (৪২), দামুড়হুদার ফকিরপাড়ার কদরের ছেলে রানা (৪০), দামুড়হুদার উজিরপুর গ্রামের আকবার আলীর ছেলে ইকরামুল (৪০), গুলশান পাড়ার মৃত মানজেদের ছেলে ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফ (২৮), একই এলাকার মৃত সুন্নার ছেলে গালিব (৪০), সিনেমা হল পাড়ার সাইদুরের ছেলে বাধন (৩৫), বাগানপাড়ার সোলেমানের ছেলে সুইট (৩৫), ফার্মপাড়ার জনি, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পৌর এলাকার আরামপাড়ার আব্দুল হান্নানের ছেলে যুবলীগ নেতা কামরুজ্জামান চাঁদ (৪০), কেদারগঞ্জপাড়ার গিয়াসের ছেলে ফরিদ (৪৫), একই এলাকার জাহাঙ্গীর (৩৫), মুক্তিপাড়ার আব্দুল লতিফের ছেলে রাজু কানা (৩০), মাঝেরপাড়ার রিগান (৩০), সিনেমাহল পাড়ার বালা বিহারীর ছেলে জনি (৩৮), দৌলতদিয়াড়ের রতন (৩০), হাটকালুগঞ্জের মুন্না (২৬), জোয়ার্দ্দার পাড়ার আসলাম ড্রাইভারের ছেলে রাসেল কানা (৩৩), বাগানপাড়ার শ্যাকড়াতলা মোড় এলাকার অনু মিস্ত্রির ছেলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা তাপু (৩০), সাবেক পৌর মেয়র ও কেদারগঞ্জ পাড়ার ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু (২৭), মুক্তিপাড়ার জাহাঙ্গীরের ছেলে ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন জ্যাকি (৩২), সিনেমা হল পাড়ার সাইদুরের ছেলে জয় (২২), একই এলাকার শাহাজান মোহরার ছেলে সোহেল (৩৫), বাগানপাড়ার চয়নালের ছেলে চঞ্চল (৩৯), মাঝেরপাড়ার সিরাজ ভেন্ডারের ছেলে সাঈদ (৩৮), আলমডাঙ্গা উপজেলার নতিডাঙ্গা কাচিকাটা গ্রামের আব্দার হোসেন ওরফে দুলালের ছেলে আকরাম (৪২), জোয়ার্দ্দার পাড়ার (কানা রাসেলের চাচাতো ভাই) শাকিব, ঠাকুরপুর গ্রামের কাবিলের ছেলে আনিচ (৩০), সাতগাড়ী গ্রামের বিশারতের ছেলে খালিদ (৩৩), চুয়াডাঙ্গা শহরের কবরী রোড়ের অভি জোয়ার্দ্দার (২৫), পোস্ট অফিসপাড়ার রতনের ছেলে দিশান (২৫), শেখপাড়ার পেদুর ছেলে বাপ্পী (২৭), মাঝেরপাড়ার আব্দুল হকের ছেলে রিংকু (২৫), নণ্টুর ছেলে মানিক (২৭), একই এলাকার ফিরোজ (২৭), মাঝেরপাড়ার আব্দুর রহমান বর্তমান-চুয়াডাঙ্গা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কর্মরত, সিঅ্যান্ডবি পাড়ার বিপ্লব (৩৫), কেদারগঞ্জ পাড়ার আফছারের ছেলে মিলন (৪২), একই এলাকার হাফিজ (৪২) সহ অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জন।
মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) শেখ সেকেন্দার আলী বলেন, মোট ৫৬ জনের নাম উল্লেখসহ ৫০ থেকে ৬০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
সুত্র : দৈনিক সময়ের সমীকরণ
এএইচ