১২:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় শিক্ষার্থীদের বিজয় মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ

চুয়াডাঙ্গায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে স্বাধীনতা মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।

বুধবার (৭ আগস্ট) বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ চত্বর থেকে একটি মিছিল বের হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গার ব্যানারে জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেন।

মিছিলটিতে শিক্ষার্থীরা ‘হই হই রই রই, খুনি হাসিনা গেলি কই’, ‘আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাই নাই’ এরকম বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে পুরো চুয়াডাঙ্গা শহরকে প্রকম্পিত করে তোলে।

দীর্ঘ সারির এই মিছিলের প্রথম দিকে আন্দোলনে অংশ নিয়ে নিপীড়নের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীরা ছিলেন। নেতৃত্ব দেন জেলার সমন্বয়করা।

মিছিলটি শহরের কলেজ রোড, কোর্ট রোড, পুরাতন হাসপাতাল রোড হয়ে বড় বাজার চৌরাস্তার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে এক আনন্দ সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নানাভাবে নিপীড়নের শিকার হওয়া এবং কারাবরণকারী শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন।

নিপীড়নের শিকার শিক্ষার্থীরা বলেন, পুলিশ, ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা নানাভাবে আমাদের ওপর অত্যাচার করেছে। আমাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রশাসনের সদস্যরা মানসিক নির্যাতন করেছে। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতারা প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। চুয়াডাঙ্গাতে মানববন্ধন করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। ভয়াবহ অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পাননি নারী শিক্ষার্থীরাও। ধারাল অস্ত্র ও লাঠি দিয়ে আঘাতে অনেক নারী শিক্ষার্থীরা জখম হয়েছে। এমনকি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গেলে সেখানেও তাদের হেনস্থা করা হয়।

মিথ্যা মামলা থেকে অব্যহতি দেয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, কোটা আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় নাশকতা মামলা দেখিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের স্কুলশিক্ষক গোলাম মোস্তফার ছেলে আল শাহরিয়ার প্রান্তকে। জেল পর্যন্ত খাটিয়েছে। এখনো আমরা কেউ কেউ জামিনে আছি। আমরা এই হয়রানি থেকে পুরোপুরি মুক্তি চাই। সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।’ জেলায় শৃঙ্খলা ফেরাতে শিক্ষার্থীরা চুয়াডাঙ্গাবাসীর পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন।

সমন্বয়ক আসলাম হোসেন অর্ক বলেন, মানুষের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। নতুন করে করে মানবিক পুলিশ গঠন করা হোক। শিক্ষার্থীরা মন্দির পাহরা দিচ্ছে, এই বন্ধন অটুট রাখতে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা কাজ কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করবো ।

আরেক সমন্বয়ক সাফফাতুল ইসলাম বলেন, যে বিজয় আমরা পেয়েছি, এ বিজয় আমাদের সকলের। যেখানে অন্যায় দেখবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে ছাত্র জনতা। চুয়াডাঙ্গাতে কোন ঘুষ চলবে না, সিন্ডিকেট চলবে না, অন্যায় চলবে না, দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ব আমরা। চুয়াডাঙ্গাকে একটি মডেল জেলা হিসেবে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে সকল ছাত্র জনতাকে একসাথে কাজ করার আহবান জানান। আন্দোলনে চুয়াডাঙ্গার যে সকল শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হয়েছে তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় এসে শাস্তির দাবি জানায়। এছাড়া যেসব শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা ডিবেট ক্লাবের সমন্বয়ক রনি বিশ্বাস বলেন, কে ক্ষমতায় থাকবে, কে থাকবে না এটা নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই না, জনগণ যাকে চাবে তারা যাবে, আমরা শিক্ষার্থীরা মুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছি, তবে কেউ রাজনীতির সুযোগ নিয়ে পরিবেশে অস্থিরতা করলে আমরা সোচ্চার হব, আওয়াজ তুলবো।

এই আন্দোলনের জন্য মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া ইবি শিক্ষার্থী আল শাহরিয়ার প্রান্ত বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার পরও আমাকে মিথ্যা মামলা আটক করা হয়, জামাত শিবিরের মামলা আটক দেখিয়ে পুলিশ নির্যাতন করে, বলে তোর জীবন তো শেষ হয়ে যাবে। মেধাবী এই শিক্ষার্থী বলেন আমার অসুস্থ সার্টিফিকেট থাকার পরও আমাকে ঠিক মত খাবার দেওয়া হয়নি। অবিলম্বে এর বিচার চাই ওই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে।

এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন, গত ৪ আগস্ট কর্মসূচি পালনে সময় ছাত্রলীগের হাতে জমখ হওয়া সিরাজুম মনিরা, তিনি বলেন, অনেকে ভোল্ট পাল্টে এখন আমাদের সাথে আসছেন, সাবধান হয়ে যান, মুনাফেকি করবেন না। আমার বোনদের যারা কুপিয়ে আহত করেছে তাদের বিচার চাই। এছাড়া নির্যাতনের আহত ও গুলি লাগা অনেক শিক্ষার্থী বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া উক্ত মিছিলে সমন্বয়ক হিসেবে ছিলেন চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থী রাতুল খান, রিফাত রহমান, সিরাজুম মনিরা, তামান্না, সজীব বিশ্বাস, সাকিব আল হাসান, অনিমা ইসলাম প্রমুখ।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

এক চাকা নিয়ে ঢাকায় অবতরণ করলো বিমানের ফ্লাইট, নিরাপদে ৭১ যাত্রী

চুয়াডাঙ্গায় শিক্ষার্থীদের বিজয় মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ

প্রকাশের সময় : ০৮:৩২:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ অগাস্ট ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে স্বাধীনতা মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।

বুধবার (৭ আগস্ট) বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ চত্বর থেকে একটি মিছিল বের হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গার ব্যানারে জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেন।

মিছিলটিতে শিক্ষার্থীরা ‘হই হই রই রই, খুনি হাসিনা গেলি কই’, ‘আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাই নাই’ এরকম বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে পুরো চুয়াডাঙ্গা শহরকে প্রকম্পিত করে তোলে।

দীর্ঘ সারির এই মিছিলের প্রথম দিকে আন্দোলনে অংশ নিয়ে নিপীড়নের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীরা ছিলেন। নেতৃত্ব দেন জেলার সমন্বয়করা।

মিছিলটি শহরের কলেজ রোড, কোর্ট রোড, পুরাতন হাসপাতাল রোড হয়ে বড় বাজার চৌরাস্তার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে এক আনন্দ সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নানাভাবে নিপীড়নের শিকার হওয়া এবং কারাবরণকারী শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন।

নিপীড়নের শিকার শিক্ষার্থীরা বলেন, পুলিশ, ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা নানাভাবে আমাদের ওপর অত্যাচার করেছে। আমাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রশাসনের সদস্যরা মানসিক নির্যাতন করেছে। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতারা প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। চুয়াডাঙ্গাতে মানববন্ধন করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। ভয়াবহ অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পাননি নারী শিক্ষার্থীরাও। ধারাল অস্ত্র ও লাঠি দিয়ে আঘাতে অনেক নারী শিক্ষার্থীরা জখম হয়েছে। এমনকি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গেলে সেখানেও তাদের হেনস্থা করা হয়।

মিথ্যা মামলা থেকে অব্যহতি দেয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, কোটা আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় নাশকতা মামলা দেখিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের স্কুলশিক্ষক গোলাম মোস্তফার ছেলে আল শাহরিয়ার প্রান্তকে। জেল পর্যন্ত খাটিয়েছে। এখনো আমরা কেউ কেউ জামিনে আছি। আমরা এই হয়রানি থেকে পুরোপুরি মুক্তি চাই। সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।’ জেলায় শৃঙ্খলা ফেরাতে শিক্ষার্থীরা চুয়াডাঙ্গাবাসীর পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন।

সমন্বয়ক আসলাম হোসেন অর্ক বলেন, মানুষের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। নতুন করে করে মানবিক পুলিশ গঠন করা হোক। শিক্ষার্থীরা মন্দির পাহরা দিচ্ছে, এই বন্ধন অটুট রাখতে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা কাজ কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করবো ।

আরেক সমন্বয়ক সাফফাতুল ইসলাম বলেন, যে বিজয় আমরা পেয়েছি, এ বিজয় আমাদের সকলের। যেখানে অন্যায় দেখবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে ছাত্র জনতা। চুয়াডাঙ্গাতে কোন ঘুষ চলবে না, সিন্ডিকেট চলবে না, অন্যায় চলবে না, দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ব আমরা। চুয়াডাঙ্গাকে একটি মডেল জেলা হিসেবে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে সকল ছাত্র জনতাকে একসাথে কাজ করার আহবান জানান। আন্দোলনে চুয়াডাঙ্গার যে সকল শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হয়েছে তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় এসে শাস্তির দাবি জানায়। এছাড়া যেসব শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা ডিবেট ক্লাবের সমন্বয়ক রনি বিশ্বাস বলেন, কে ক্ষমতায় থাকবে, কে থাকবে না এটা নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই না, জনগণ যাকে চাবে তারা যাবে, আমরা শিক্ষার্থীরা মুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছি, তবে কেউ রাজনীতির সুযোগ নিয়ে পরিবেশে অস্থিরতা করলে আমরা সোচ্চার হব, আওয়াজ তুলবো।

এই আন্দোলনের জন্য মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া ইবি শিক্ষার্থী আল শাহরিয়ার প্রান্ত বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার পরও আমাকে মিথ্যা মামলা আটক করা হয়, জামাত শিবিরের মামলা আটক দেখিয়ে পুলিশ নির্যাতন করে, বলে তোর জীবন তো শেষ হয়ে যাবে। মেধাবী এই শিক্ষার্থী বলেন আমার অসুস্থ সার্টিফিকেট থাকার পরও আমাকে ঠিক মত খাবার দেওয়া হয়নি। অবিলম্বে এর বিচার চাই ওই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে।

এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন, গত ৪ আগস্ট কর্মসূচি পালনে সময় ছাত্রলীগের হাতে জমখ হওয়া সিরাজুম মনিরা, তিনি বলেন, অনেকে ভোল্ট পাল্টে এখন আমাদের সাথে আসছেন, সাবধান হয়ে যান, মুনাফেকি করবেন না। আমার বোনদের যারা কুপিয়ে আহত করেছে তাদের বিচার চাই। এছাড়া নির্যাতনের আহত ও গুলি লাগা অনেক শিক্ষার্থী বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া উক্ত মিছিলে সমন্বয়ক হিসেবে ছিলেন চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থী রাতুল খান, রিফাত রহমান, সিরাজুম মনিরা, তামান্না, সজীব বিশ্বাস, সাকিব আল হাসান, অনিমা ইসলাম প্রমুখ।