০৯:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘ছাত্রলীগ করেছি, অস্বীকার করছি না, কিন্তু এখন শিবির করি’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রশিবিরের সোহরাওয়ার্দী হল সভাপতি আবরার ফারাবীর ৩ বছর আগের ছাত্রলীগ সম্পৃক্ততার কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

সম্প্রতি ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর ও ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বরের দুইটি পোস্টসহ বেশকিছু ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ‘এন ইউ আবরার ফারাবী’ নামের সেই ফেসবুক আইডিতে জামায়াত-শিবিরকে নিয়ে আপত্তিকর পোস্টও করেছিলেন তিনি।

এই ফেসবুক আইডিতে নিষিদ্ধ সংগঠন শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি ও বগি ভিত্তিক উপগ্রুপ ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স)-এর নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয়ের সাথে ‘প্রিয় ভাই’ লিখা একটি পোস্ট রয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ. জ. ম. নাছির উদ্দিন ও শেখ হাসিনার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতেও দেখা যায় তাকে।

২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বরের এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ২০০১ সালের ২৯ ডিসেম্বর খুনী জামায়াত-শিবিরের হাতে নির্মমভাবে নিহত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি জনপ্রিয় ছাত্রনেতা শহীদ আলী মরতুজা চৌধুরী ভাইয়ের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। দল টানা ক্ষমতায় থাকার পরও দুঃসময়ে জীবন দেয়া একজন জনপ্রিয় ছাত্রনেতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার এখানো না পাওয়াটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতা ড. রবিউল হাসান স্যার। শিবিরের মিথ্যা মামলা কাঁধে নিয়ে জেল খেটেছেন দীর্ঘদিন। শিবিরের মিনি ক্যান্টনমেন্টে প্রগতির পতাকা উড়ানোর জন্য উনারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। ছাত্রলীগ করার অপরাধে যৌবনে ওনার জীবনের অনেকগুলো বসন্ত হারিয়েছেন। আজ যখন দেখি উনার মত ত্যাগী মানুষের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে, তখন কষ্ট লাগে। এজন্য কি উনারা শিবিরের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। মনে রাখবেন রবিউল হাসান ভুইয়া স্যাররা আমাদের সম্পদ।

এ বিষয়ে বর্তমান ছাত্রশিবির নেতা আবরার ফারাবী বলেন, ২০২২ সালের জুনের ১৭ তারিখ পর্যন্ত আমি ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত ছিলাম। পরে ২০২৩ সালে ছাত্রলীগের সবধরনের রাজনীতি থেকে বের হয়ে এসে আমি ছাত্রশিবিরে যুক্ত হই। এরপর আর আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে অবস্থান করিনি। ছাত্রশিবিরে যুক্ত হয়ে মানোন্নয়ন করি। পরবর্তীতে সদস্য হয়ে ছাত্রশিবিরের দায়িত্বে যাই। এরপর যখন জুলাই বিপ্লব শুরু হয়, তখন থেকেই আমি মূলত আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হই এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নামে যে একটি গ্রুপ রয়েছে, সেটা আমিই অপেন করি।

তিনি বলেন, আমি ছাত্রলীগ করেছি, সেটা অস্বীকার করছি না কিন্তু ২০২২ সালের জুনের পর থেকে ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, তার যে ফেসবুক পোস্টগুলো সামনে আনা হচ্ছে, সবগুলোই ২০২১-২২ সালের। তখন সে ছাত্রলীগের সাথেই যুক্ত ছিল। কিন্তু এরপর সে ইসলামী ছাত্রশিবিরের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এই সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়। সে সংগঠনের সব ধারা পূর্ণ করে, মূলনীতি মেনে মানোন্নয়ন করে দায়িত্বশীল পর্যায়ে এসেছে।

তিনি বলেন, ব্যাপারটা এমন না যে সে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে ছাত্রশিবিরের সাথে যুক্ত হয়েছে; বরং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পূর্ব থেকেই সোহরাওয়ার্দী হল শাখার দায়িত্ব পালন করেছে সে। পরে এ বছর জানুয়ারি থেকে তাকে সোহরাওয়ার্দী হল শাখার সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

চুয়াডাঙ্গায় মেছো বিড়াল সংরক্ষণে সচেতনতামূলক আলোচনা সভা

‘ছাত্রলীগ করেছি, অস্বীকার করছি না, কিন্তু এখন শিবির করি’

প্রকাশের সময় : ০৯:৪৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রশিবিরের সোহরাওয়ার্দী হল সভাপতি আবরার ফারাবীর ৩ বছর আগের ছাত্রলীগ সম্পৃক্ততার কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

সম্প্রতি ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর ও ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বরের দুইটি পোস্টসহ বেশকিছু ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ‘এন ইউ আবরার ফারাবী’ নামের সেই ফেসবুক আইডিতে জামায়াত-শিবিরকে নিয়ে আপত্তিকর পোস্টও করেছিলেন তিনি।

এই ফেসবুক আইডিতে নিষিদ্ধ সংগঠন শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি ও বগি ভিত্তিক উপগ্রুপ ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স)-এর নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয়ের সাথে ‘প্রিয় ভাই’ লিখা একটি পোস্ট রয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ. জ. ম. নাছির উদ্দিন ও শেখ হাসিনার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতেও দেখা যায় তাকে।

২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বরের এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ২০০১ সালের ২৯ ডিসেম্বর খুনী জামায়াত-শিবিরের হাতে নির্মমভাবে নিহত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি জনপ্রিয় ছাত্রনেতা শহীদ আলী মরতুজা চৌধুরী ভাইয়ের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। দল টানা ক্ষমতায় থাকার পরও দুঃসময়ে জীবন দেয়া একজন জনপ্রিয় ছাত্রনেতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার এখানো না পাওয়াটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতা ড. রবিউল হাসান স্যার। শিবিরের মিথ্যা মামলা কাঁধে নিয়ে জেল খেটেছেন দীর্ঘদিন। শিবিরের মিনি ক্যান্টনমেন্টে প্রগতির পতাকা উড়ানোর জন্য উনারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। ছাত্রলীগ করার অপরাধে যৌবনে ওনার জীবনের অনেকগুলো বসন্ত হারিয়েছেন। আজ যখন দেখি উনার মত ত্যাগী মানুষের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে, তখন কষ্ট লাগে। এজন্য কি উনারা শিবিরের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। মনে রাখবেন রবিউল হাসান ভুইয়া স্যাররা আমাদের সম্পদ।

এ বিষয়ে বর্তমান ছাত্রশিবির নেতা আবরার ফারাবী বলেন, ২০২২ সালের জুনের ১৭ তারিখ পর্যন্ত আমি ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত ছিলাম। পরে ২০২৩ সালে ছাত্রলীগের সবধরনের রাজনীতি থেকে বের হয়ে এসে আমি ছাত্রশিবিরে যুক্ত হই। এরপর আর আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে অবস্থান করিনি। ছাত্রশিবিরে যুক্ত হয়ে মানোন্নয়ন করি। পরবর্তীতে সদস্য হয়ে ছাত্রশিবিরের দায়িত্বে যাই। এরপর যখন জুলাই বিপ্লব শুরু হয়, তখন থেকেই আমি মূলত আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হই এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নামে যে একটি গ্রুপ রয়েছে, সেটা আমিই অপেন করি।

তিনি বলেন, আমি ছাত্রলীগ করেছি, সেটা অস্বীকার করছি না কিন্তু ২০২২ সালের জুনের পর থেকে ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, তার যে ফেসবুক পোস্টগুলো সামনে আনা হচ্ছে, সবগুলোই ২০২১-২২ সালের। তখন সে ছাত্রলীগের সাথেই যুক্ত ছিল। কিন্তু এরপর সে ইসলামী ছাত্রশিবিরের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এই সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়। সে সংগঠনের সব ধারা পূর্ণ করে, মূলনীতি মেনে মানোন্নয়ন করে দায়িত্বশীল পর্যায়ে এসেছে।

তিনি বলেন, ব্যাপারটা এমন না যে সে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে ছাত্রশিবিরের সাথে যুক্ত হয়েছে; বরং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পূর্ব থেকেই সোহরাওয়ার্দী হল শাখার দায়িত্ব পালন করেছে সে। পরে এ বছর জানুয়ারি থেকে তাকে সোহরাওয়ার্দী হল শাখার সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।