০৯:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিষপানে শিশুকে হত্যার ঘটনা

সেই সৎ মায়ের বিরুদ্ধে মামলা, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার ভোমরাডাঙ্গা গ্রামে শিশু মাহমুদাকে পরিকল্পিতভাবে বিষপান করিয়ে হত্যার অভিযোগে সেই সৎ মা বন্যা খাতুন ওরফে হুমাইরার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন তারই স্বামী শাহিন আলম।

শুক্রবার (০৭ মার্চ) বিকেলে কোটচাঁদপুর থানায় বাদি হয়ে স্ত্রী হুমাইরা খাতুনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন স্বামী শাহীন আলম।

কোটচাঁদপুর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) কবির হোসেন মাতুব্বর রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আজ দুপুরের পর শাহিন আলম বাদি হয়ে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বিরুদ্ধে মেয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামীকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

এদিকে শিশু মাহমুদার মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তাঁর সৎ মা বন্যা খাতুন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সবাই এলাকা ছেড়েছেন। অন্যদিকে ঘটনাটি নিয়ে ঘৃনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে কোটচাঁদপুর সহ চুয়াডাঙ্গা জেলার মানুষের মাঝে। ঘৃনার ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমজুড়ে। দাবি উঠেছে শিশু মাহমুদা হত্যায় সৎ মা বন্যা খাতুনের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির।

মামলার এজাহার সুত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে কোটচাঁদপুর উপজেলার ভোমরাডাঙ্গা গ্রামের শাহিন আলমের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ভূলটিয়া গ্রামের জাকের মুন্সির মেয়ে আফরোজা খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের দুই বছর পর আফরোজার খাতুনের গর্ভে আসে শিশু মাহমুদা। তাঁর জন্মের দিনই মারা যান তাঁর মা আফরোজা খাতুন। এরপর শিশুকন্য মাহমুদাকে রেখে বিদেশে চলে যান শাহিন আলম। সে থেকে মাহমুদাকে কোলে পিঠে করে বড় করে তোলেন শাহীনের দাদী সখিনা খাতুন। এভাবেই কেটে গেছে কয়েক বছর।

গত ৬ মাস আগে ভোমরাডাঙ্গা গ্রামের জিয়াউর রহমানের মেয়ে বন্যা খাতুন ওরফে হুমাইরা খাতুনের সঙ্গে বিদেশে থাকা অবস্থায় মোবাইল ফোনে বিবাহ করেন শাহিন আলম। এরপর থেকে বন্যা খাতুন স্বামী শাহিন আলমের বাড়িতে যাতায়াত শুরু করেন।

গত ৭ জানুয়ারি শাহিন আলম সৌদি আরব থেকে বাড়িতে আসেন। কয়েক দিন ভালই কাটে তাদের দাম্পত্য জীবন। এর কিছু দিন পর মেয়ে মাহমুদাকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শুরু হয় কলহ। এই কলহের জেরে গত ৫-ই মার্চ সন্ধার দিকে বন্যা খাতুন কৌশলে শিশু মাহমুদাকে ঘরে ডেকে নিয়ে কোমল পানীয়ের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে পান করায়। এরপরই শিশু মাহমুদা অসুস্থ হয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়। দ্রুত মাহমুদাকে উদ্ধার করে প্রথমে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় মাহমুদাকে। তবে চিকিৎসক জানায় মাহমুদার অবস্থা খুবই আশংকাজনক। এরপর নিরুপায় হয়ে শিশু মাহমুদাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। বাড়িতে আসার পর সে আবারও অসুস্থ্য হয়ে পড়লে গত বুধবার পিতা শাহীন আলম চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরের দিন বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বেলা পৌনে ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় শিশু মাহমুদার মৃত্যু হয়।

শাহিন আলম রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমি বিদেশ থেকে বাড়িতে আসার পর কয়েকদিন সব কিছুই ভালোভাবে চলছিল। তবে আমার মেয়েকে সহ্য করতে পারতো না বন্যা খাতুন। তাঁর আচারনে আমি এটা বুঝতে পেরেছিলাম। তাকে কয়েকবারও বুঝিয়েছিলাম। শেষ-মেশ এভাবে পরিকল্পিতভাবে আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিবে তা আমি কল্পনাও করতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, আমি কোন চাষাবাদ করিনা। আমার মেয়েকে যে বিষ পান করানো হয়েছে সেই বিষ অন্য কোথাও থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে ধারণা করছি। এই পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত বন্যা খাতুনকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করছি।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

চুয়াডাঙ্গায় মা ক্লিনিকের নার্স বিপাশার লা শ উদ্ধার

বিষপানে শিশুকে হত্যার ঘটনা

সেই সৎ মায়ের বিরুদ্ধে মামলা, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি

প্রকাশের সময় : ০৪:০৯:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার ভোমরাডাঙ্গা গ্রামে শিশু মাহমুদাকে পরিকল্পিতভাবে বিষপান করিয়ে হত্যার অভিযোগে সেই সৎ মা বন্যা খাতুন ওরফে হুমাইরার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন তারই স্বামী শাহিন আলম।

শুক্রবার (০৭ মার্চ) বিকেলে কোটচাঁদপুর থানায় বাদি হয়ে স্ত্রী হুমাইরা খাতুনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন স্বামী শাহীন আলম।

কোটচাঁদপুর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) কবির হোসেন মাতুব্বর রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আজ দুপুরের পর শাহিন আলম বাদি হয়ে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বিরুদ্ধে মেয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামীকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

এদিকে শিশু মাহমুদার মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তাঁর সৎ মা বন্যা খাতুন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সবাই এলাকা ছেড়েছেন। অন্যদিকে ঘটনাটি নিয়ে ঘৃনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে কোটচাঁদপুর সহ চুয়াডাঙ্গা জেলার মানুষের মাঝে। ঘৃনার ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমজুড়ে। দাবি উঠেছে শিশু মাহমুদা হত্যায় সৎ মা বন্যা খাতুনের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির।

মামলার এজাহার সুত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে কোটচাঁদপুর উপজেলার ভোমরাডাঙ্গা গ্রামের শাহিন আলমের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ভূলটিয়া গ্রামের জাকের মুন্সির মেয়ে আফরোজা খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের দুই বছর পর আফরোজার খাতুনের গর্ভে আসে শিশু মাহমুদা। তাঁর জন্মের দিনই মারা যান তাঁর মা আফরোজা খাতুন। এরপর শিশুকন্য মাহমুদাকে রেখে বিদেশে চলে যান শাহিন আলম। সে থেকে মাহমুদাকে কোলে পিঠে করে বড় করে তোলেন শাহীনের দাদী সখিনা খাতুন। এভাবেই কেটে গেছে কয়েক বছর।

গত ৬ মাস আগে ভোমরাডাঙ্গা গ্রামের জিয়াউর রহমানের মেয়ে বন্যা খাতুন ওরফে হুমাইরা খাতুনের সঙ্গে বিদেশে থাকা অবস্থায় মোবাইল ফোনে বিবাহ করেন শাহিন আলম। এরপর থেকে বন্যা খাতুন স্বামী শাহিন আলমের বাড়িতে যাতায়াত শুরু করেন।

গত ৭ জানুয়ারি শাহিন আলম সৌদি আরব থেকে বাড়িতে আসেন। কয়েক দিন ভালই কাটে তাদের দাম্পত্য জীবন। এর কিছু দিন পর মেয়ে মাহমুদাকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শুরু হয় কলহ। এই কলহের জেরে গত ৫-ই মার্চ সন্ধার দিকে বন্যা খাতুন কৌশলে শিশু মাহমুদাকে ঘরে ডেকে নিয়ে কোমল পানীয়ের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে পান করায়। এরপরই শিশু মাহমুদা অসুস্থ হয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়। দ্রুত মাহমুদাকে উদ্ধার করে প্রথমে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় মাহমুদাকে। তবে চিকিৎসক জানায় মাহমুদার অবস্থা খুবই আশংকাজনক। এরপর নিরুপায় হয়ে শিশু মাহমুদাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। বাড়িতে আসার পর সে আবারও অসুস্থ্য হয়ে পড়লে গত বুধবার পিতা শাহীন আলম চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরের দিন বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বেলা পৌনে ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় শিশু মাহমুদার মৃত্যু হয়।

শাহিন আলম রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমি বিদেশ থেকে বাড়িতে আসার পর কয়েকদিন সব কিছুই ভালোভাবে চলছিল। তবে আমার মেয়েকে সহ্য করতে পারতো না বন্যা খাতুন। তাঁর আচারনে আমি এটা বুঝতে পেরেছিলাম। তাকে কয়েকবারও বুঝিয়েছিলাম। শেষ-মেশ এভাবে পরিকল্পিতভাবে আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিবে তা আমি কল্পনাও করতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, আমি কোন চাষাবাদ করিনা। আমার মেয়েকে যে বিষ পান করানো হয়েছে সেই বিষ অন্য কোথাও থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে ধারণা করছি। এই পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত বন্যা খাতুনকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করছি।