ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় ৬ বছর বয়সী ফুটফুটে শিশুকন্যা মাহমুদা খাতুনকে বিষপান করিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তারই সৎ মা হুমাইরা খাতুনের বিরুদ্ধে।
আজ বৃহস্পতিবার (০৬ মার্) বেলা ১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বিষক্রিয়ায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
শিশু মাহমুদা কোটচাঁদপুর উপজেলার ভোমরাডাঙ্গা গ্রামের শাহিন মোল্লার মেয়ে।
এর আগে, গতকাল বুধবার (০৫ মার্চ) দুপুরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বাবাসহ স্বজনরা। এসময় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহমুদাকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করেন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ১ মার্চ সন্ধার দিকে সবার অগোচরে নিজ বাড়িতে সৎ মা হুমাইরা খাতুন কোমল পানীয়’র সঙ্গে বিষ মিশিয়ে শিশুটিকে পান করায়। বিষক্রিয়ার কারণে শিশুটির শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। বিষয়টি জানাজানি হলে পরিবারের সদস্যরা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরে যশোর জেনারেল হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে গত মঙ্গলবার শিশুটিকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। এরই শিশুটির অবস্থা আরও অবনতি হলে গতকাল বুধবার তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শিশুটির পিতা শাহিন মোল্লা রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে অভিযোগ করে বলেন, গত ৬ মাস আগে বিদেশে থাকাকালীন সময় আমার এলাকার জিয়ারুল ইসলামের মেয়ে হুমাইয়ার সঙ্গে মোবাইলের মাধ্যমে আমার বিবাহ হয়। আমি গত দুমাস আগে বিদেশ থেকে বাড়ি এসেছি। আমার মেয়েকে গত ১ তারিখে সন্ধায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে মেয়ে নিজেই জানায় তাকে কোমল পানী পান করায় সৎ মা হুমাইবিষ খাইয়ে দেয়া হয়েছে। কে খাইয়েছে জিজ্ঞেস করলে জানায় তার সৎ মা অর্থাৎ আমার দ্বিতীয় স্ত্রী হুমাইরা খাতুন কোমল পানীয়র সঙ্গে তাকে বিষ খাইয়ে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মেয়ের জন্মের সময় তার মায়ের মৃত্যু হয় এরপর থেকে আমার দাদির কাছে থাকতো। মেয়ে হত্যার বিচার চাই। অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে গতকাল বুধবার আমি কোটচাদপুর থানায় অভিযোগ দিতে গিয়েছিলাম। পুলিশ আমার কোন অভিযোগই নেইনি। তারা বলেছে, চিকিৎসকের সার্টিফিটেক ছাড়া কোন অভিযোগ নেয়া যাবে না। এরমধ্যে অভিযুক্ত হুমাইরা পালিয়ে গেছে। পুলিশকে ওরা টাকা দিয়ে মেনেজ করেছে। এর জন্যেই আমার অভিযোগ নেইনি।

শাহিনের দাদী সকিনা বেগম রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, মাহমুদার জন্মের সময় তার মা আফরোজা খাতুন মারা যায়। এরপর থেকে আমিই তাকে লালন-পালন করে বড় করেছি। ওর বাবা শাহিন সৌদি আরবে অবস্থানকালে একই গ্রামের জিয়ারুলের মেয়ে হুমাইরাকে মোবাইলে বিয়ে করে। প্রায় দুই মাস পূর্বে সে দেশে ফিরে তাকে বাড়িতে আনে। সে কখনই মাহমুদাকে ভালো চোখে দেখতো না। কিন্তু বিষ খাইয়ে হত্যা করবে তা আমরা কেউ ভাবতেও পারিনি। আমি হুমাইরার শাস্তি চাই।
গতকাল বুধবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আল ইমরান জুয়েল রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে জানিয়েছিলেন, বিষক্রিয়ায় শিশুটির মুখ থেকে পাকস্থলি পর্যন্ত পুড়ে গেছে। অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।
ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কোটচাদপুর সার্কেল) মো. মুন্না বিশ্বাস রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, গতকাল বুধবার মেয়েটির বাবা থানায় এসেছিলেন। সেই সময় আমিও ছিলাম থানাতে। মেয়েটির আগে চিকিৎসার করানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। এরপর বিষপানে অসুস্থ হয়েছে এটা যেন চিকিৎসকের মাধ্যমে সার্টিফিটেক নিয়ে আসে। এরপরই আমরা অভিযোগ গ্রহন করব।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু মেয়েটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে কোন ছাড়পত্র ছাড়ায় নিয়ে চলে এসেছিল। তাদের কাছে কোন সার্টিফিকেট ছিল না। এছাড়া সৎ মা অর্থাৎ হুমাইরা খাতুনও নাকি বিষপানে অসুস্থ হয়ে কোথাও চিকিৎসাধীন আছে এমনটি জেনেছি। আজ দুপুরে শিশু মাহমুদা খাতুন মারা গেছে জানালে তিনি বলেন, ডেট সার্টিফিটেক নিয়ে ওর পরিবার থানাতে আসলে আমরা মামলাসহ যাবতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান করব।ব।
এএইচ