০৫:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
টাকা না পেয়ে ৩০ লাখ টাকা কাবিনে ফের বিয়ে

জীবননগরে স্বামী-স্ত্রীকে আটকে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ বিএনপি নেতাসহ কয়েজনের বিরুদ্ধে

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর মিনি অটোর স্বত্ত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম করিম ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী মোছা. শ্যামলী পারভীনকে জোর করে অফিসে আটকে রেখে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চাঁদার টাকা না দেওয়ায় ৩০ লাখ টাকা কাবিন করে ফের এই দম্পতির বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার নারায়ণপুরের গাজী জাহিদ, জীবননগর পৌর ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পল্টু মন্ডল, আরজ আলী, হাবিবুর রহমান সজলসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।

সূত্রে জানা গেছে, সাইফুল ইসলাম করিম ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি মোছা. শ্যামলী পারভীনের সঙ্গে ১ লাখ টাকা দেনমোহরে কোর্ট ম্যারেজ করেন। পরে ২০২২ সালে তাদের দ্বিতীয় বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়। ভালোই চলছিল সাইফুল ইসলামের দুই সংসার।

গত শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে সাইফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী শ্যামলী তাদের লক্ষীপুর গ্রামে নির্মাণাধীন বাড়িতে গেলে কয়েকজন তাদের মধ্যে সম্পর্কের কথা জানতে চান।

পরে সাইফুল ইসলাম তাদের বিয়ের কাবিন দেখালে তারা চলে যান। আর তার স্ত্রী শ্যামলীর কয়েকজন লোকজন এসে তাকে এলাকায় নিয়ে যান।

এরপর গত শনিবার (২৫ জানুয়ারি) হঠাৎ করে গাজী জাহিদের নেতৃত্বে মিনি অটোর স্বত্ত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম করিমকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে নিজেদের অফিসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

অপর দিকে, জীবননগর পৌর ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পল্টু মন্ডল, আরজ আলী, হাবিবুর রহমান সজল শ্যামলী খাতুনকে তাদের অফিসে নিয়ে যান।

এসময় সাইফুল ইসলাম করিমের কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় অফিসে আটকে রেখে তাদের ভিডিও করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তারপরও তিনি টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় জোর করে ৩০ লাখ টাকার কাবিনে সই করানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে মিনি অটোর স্বত্ত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম করিম বলেন, ‘আমি ২০২১ সালে শ্যামলীকে বিয়ে করেছি। আমাদের সংসার ভালোই চলছিল। তবে গত শনিবার জাহিদসহ ৪০-৫০ জন আমার অফিসে এসে বলেন, আগে এক লাখ টাকা কাবিন ছিল, এটা হবে না। এখন কাবিন বৃদ্ধি করতে হবে। আমি তখন জানতে চাইলাম আমার স্ত্রী কি কোনো অভিযোগ করেছে? তারা বলে, না। এটা আমাদের পছন্দ না। আপনার অনেক টাকা আছে, হয় আমাদের ১৫ লাখ টাকা দেন, না হয় ৩০ লাখ টাকা কাবিন করতে হবে। এই বলে আমাকে তাদের অফিসে ধরে নিয়ে যেয়ে ৩০ লাখ টাকা কাবিন করে ফের বিয়ে দিয়েছে।’

এ বিষয়ে মোছা. শ্যামলী পারভীন বলেন, ‘আমাদের বিয়ে হয়েছে ২০২১ সালে। আমাদের সব ডকুমেন্ট আছে। হঠাৎ করে গতকাল আরজ আর পল্টু এসে আমাকে বলে অফিসে যেতে হবে। আমি যেতে চাইনি। তারা হুমকি দেয় না গেলে ভালো হবে না, যাওয়া লাগবে। পরে জোর করে আমাকে নিয়ে যায়। যেয়ে দেখি আমার স্বামীকে ওখানে বসিয়ে রেখেছে। ওখানে মানহানিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। পরে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়।’

অভিযোগের বিষয়ে গাজী জাহিদ বলেন, ‘আমি ওয়ার্ড বিএনপির কেউ না। আমার ওয়ার্ডের মেয়ে, আমাদের বাড়ি এক পাড়ায়। ওই জায়গার যখন ঘটনা, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি-সেক্রেটারি যখন যাচ্ছে, আমি উপজেলা যুবদল নেতা ময়েন ভাইয়ের সাথে রাজনীতি করি। আমার ডেকেছে, আমি সরেজমিনে সেখানে গেছি। সবাই যেটা করছে, আমি সেটার সঙ্গে সম্মতি জানিয়েছি। এটাই আমার অপরাধ।’

তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব রিমন ওরাই প্রথমে তাদের আটকে ছিল। পরে বললাম এটা ইজ্জতের ব্যাপার। আমরা আমাদের পাড়া-মহল্লার লোকজন এটা মানি না। আমরা বিয়ে দিই, এবং আমরা বিয়ে দিয়েছে। যেহেতু মেয়েটা স্বামী পরিত্যাক্তা, বাপ নেই। সেই জন্য সবার সম্মতিক্রমে বলেছে, ৩০ লাখ টাকা কাবিন। যাতে তাকে বাদ দিতে গেলেও মেয়েটার একটা অবলম্বন হয়। যেহেতু ওই ব্যক্তির অনেক পয়সা আছে।’

তাদের ২০২২ সালের বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে জাহিদ বলেন, ‘সাইফুল ইসলাম বিয়ের কাবিন দেখানোর জন্য বিকেল চারটা পর্যন্ত সময় নিয়েছিল। নয়ত আবার বিয়ে করবে। ৭টার সময় ১ লাখ টাকার এফিডেভিড করা একটা কাগজ আনে। যেই কাজী হুসাইনের নামে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সে বিভিন্নভাবে তারিখ আগে পিছে করে এসব কাজ করে। তার নামে আপনারা নিউজও করেছেন। সে জেলও খেটেছে।’

জীবননগর পৌর ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পল্টু মন্ডল বলেন, ‘সাইফুল ইসলাম ও শ্যামলী পারভীনকে আটকে রাখার বিষয়ে জানতে পারার পর আমি ঘটনাস্থলে যায়। যেহেতু মেয়েটি আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দা, দায়িত্ববোধ থেকেই আমি সেখানে গিয়েছিলাম।’

পল্টু মন্ডল জানান ২০২১ সালে তাদের বিয়ে হয়েছে, কিন্তু তিনি কাবিন দেখাতে পারছিলেন না। বিকেল পর্যন্ত সময় নিয়েও কাবিন দেখাতে ব্যর্থ হলে আমরা ৩০ লাখ টাকা কাবিনে তাদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছি।’ চাঁদা দাবির অভিযোগের বিষয়ে চানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো চাঁদা দাবি করিনি। কেউ এমন অভিযোগ করে থাকলে তা মিথ্যা। ছাত্রদল নেতা রিমন তাদেরকে আটকে রেখেছিল। আমরা এর একটি সমাধান করেছি মাত্র।’

এ বিষয়ে রেডিও চুয়াডাঙ্গার পক্ষ থেকে জীবননগর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব রিমনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে : আবহাওয়া অধিদপ্তর  

টাকা না পেয়ে ৩০ লাখ টাকা কাবিনে ফের বিয়ে

জীবননগরে স্বামী-স্ত্রীকে আটকে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ বিএনপি নেতাসহ কয়েজনের বিরুদ্ধে

প্রকাশের সময় : ০৯:৪৪:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর মিনি অটোর স্বত্ত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম করিম ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী মোছা. শ্যামলী পারভীনকে জোর করে অফিসে আটকে রেখে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চাঁদার টাকা না দেওয়ায় ৩০ লাখ টাকা কাবিন করে ফের এই দম্পতির বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার নারায়ণপুরের গাজী জাহিদ, জীবননগর পৌর ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পল্টু মন্ডল, আরজ আলী, হাবিবুর রহমান সজলসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।

সূত্রে জানা গেছে, সাইফুল ইসলাম করিম ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি মোছা. শ্যামলী পারভীনের সঙ্গে ১ লাখ টাকা দেনমোহরে কোর্ট ম্যারেজ করেন। পরে ২০২২ সালে তাদের দ্বিতীয় বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়। ভালোই চলছিল সাইফুল ইসলামের দুই সংসার।

গত শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে সাইফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী শ্যামলী তাদের লক্ষীপুর গ্রামে নির্মাণাধীন বাড়িতে গেলে কয়েকজন তাদের মধ্যে সম্পর্কের কথা জানতে চান।

পরে সাইফুল ইসলাম তাদের বিয়ের কাবিন দেখালে তারা চলে যান। আর তার স্ত্রী শ্যামলীর কয়েকজন লোকজন এসে তাকে এলাকায় নিয়ে যান।

এরপর গত শনিবার (২৫ জানুয়ারি) হঠাৎ করে গাজী জাহিদের নেতৃত্বে মিনি অটোর স্বত্ত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম করিমকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে নিজেদের অফিসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

অপর দিকে, জীবননগর পৌর ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পল্টু মন্ডল, আরজ আলী, হাবিবুর রহমান সজল শ্যামলী খাতুনকে তাদের অফিসে নিয়ে যান।

এসময় সাইফুল ইসলাম করিমের কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় অফিসে আটকে রেখে তাদের ভিডিও করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তারপরও তিনি টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় জোর করে ৩০ লাখ টাকার কাবিনে সই করানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে মিনি অটোর স্বত্ত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম করিম বলেন, ‘আমি ২০২১ সালে শ্যামলীকে বিয়ে করেছি। আমাদের সংসার ভালোই চলছিল। তবে গত শনিবার জাহিদসহ ৪০-৫০ জন আমার অফিসে এসে বলেন, আগে এক লাখ টাকা কাবিন ছিল, এটা হবে না। এখন কাবিন বৃদ্ধি করতে হবে। আমি তখন জানতে চাইলাম আমার স্ত্রী কি কোনো অভিযোগ করেছে? তারা বলে, না। এটা আমাদের পছন্দ না। আপনার অনেক টাকা আছে, হয় আমাদের ১৫ লাখ টাকা দেন, না হয় ৩০ লাখ টাকা কাবিন করতে হবে। এই বলে আমাকে তাদের অফিসে ধরে নিয়ে যেয়ে ৩০ লাখ টাকা কাবিন করে ফের বিয়ে দিয়েছে।’

এ বিষয়ে মোছা. শ্যামলী পারভীন বলেন, ‘আমাদের বিয়ে হয়েছে ২০২১ সালে। আমাদের সব ডকুমেন্ট আছে। হঠাৎ করে গতকাল আরজ আর পল্টু এসে আমাকে বলে অফিসে যেতে হবে। আমি যেতে চাইনি। তারা হুমকি দেয় না গেলে ভালো হবে না, যাওয়া লাগবে। পরে জোর করে আমাকে নিয়ে যায়। যেয়ে দেখি আমার স্বামীকে ওখানে বসিয়ে রেখেছে। ওখানে মানহানিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। পরে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়।’

অভিযোগের বিষয়ে গাজী জাহিদ বলেন, ‘আমি ওয়ার্ড বিএনপির কেউ না। আমার ওয়ার্ডের মেয়ে, আমাদের বাড়ি এক পাড়ায়। ওই জায়গার যখন ঘটনা, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি-সেক্রেটারি যখন যাচ্ছে, আমি উপজেলা যুবদল নেতা ময়েন ভাইয়ের সাথে রাজনীতি করি। আমার ডেকেছে, আমি সরেজমিনে সেখানে গেছি। সবাই যেটা করছে, আমি সেটার সঙ্গে সম্মতি জানিয়েছি। এটাই আমার অপরাধ।’

তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব রিমন ওরাই প্রথমে তাদের আটকে ছিল। পরে বললাম এটা ইজ্জতের ব্যাপার। আমরা আমাদের পাড়া-মহল্লার লোকজন এটা মানি না। আমরা বিয়ে দিই, এবং আমরা বিয়ে দিয়েছে। যেহেতু মেয়েটা স্বামী পরিত্যাক্তা, বাপ নেই। সেই জন্য সবার সম্মতিক্রমে বলেছে, ৩০ লাখ টাকা কাবিন। যাতে তাকে বাদ দিতে গেলেও মেয়েটার একটা অবলম্বন হয়। যেহেতু ওই ব্যক্তির অনেক পয়সা আছে।’

তাদের ২০২২ সালের বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে জাহিদ বলেন, ‘সাইফুল ইসলাম বিয়ের কাবিন দেখানোর জন্য বিকেল চারটা পর্যন্ত সময় নিয়েছিল। নয়ত আবার বিয়ে করবে। ৭টার সময় ১ লাখ টাকার এফিডেভিড করা একটা কাগজ আনে। যেই কাজী হুসাইনের নামে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সে বিভিন্নভাবে তারিখ আগে পিছে করে এসব কাজ করে। তার নামে আপনারা নিউজও করেছেন। সে জেলও খেটেছে।’

জীবননগর পৌর ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পল্টু মন্ডল বলেন, ‘সাইফুল ইসলাম ও শ্যামলী পারভীনকে আটকে রাখার বিষয়ে জানতে পারার পর আমি ঘটনাস্থলে যায়। যেহেতু মেয়েটি আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দা, দায়িত্ববোধ থেকেই আমি সেখানে গিয়েছিলাম।’

পল্টু মন্ডল জানান ২০২১ সালে তাদের বিয়ে হয়েছে, কিন্তু তিনি কাবিন দেখাতে পারছিলেন না। বিকেল পর্যন্ত সময় নিয়েও কাবিন দেখাতে ব্যর্থ হলে আমরা ৩০ লাখ টাকা কাবিনে তাদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছি।’ চাঁদা দাবির অভিযোগের বিষয়ে চানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো চাঁদা দাবি করিনি। কেউ এমন অভিযোগ করে থাকলে তা মিথ্যা। ছাত্রদল নেতা রিমন তাদেরকে আটকে রেখেছিল। আমরা এর একটি সমাধান করেছি মাত্র।’

এ বিষয়ে রেডিও চুয়াডাঙ্গার পক্ষ থেকে জীবননগর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব রিমনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।