চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে চরম উত্তেজনার ঘটনা ঘটেছে। রোগীর স্বজনরা স্বাস্থ্যকর্মী (ওয়ার্ডবয়) ও নার্সদের হেনস্থা ও মারমুখি আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় আজ রোববার (২২ ডিসেম্বর) চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সদর থানায় একটি জিডি করেছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) খালেদুর রহমান রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, গত শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাতটার দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার নুরনগর কলোনিপাড়ার আব্দুস সামাদ (৬০) নামের এক রোগীকে আশংকাজনক অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা। চিকিৎসক ভর্তি করে মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঠালে এর মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা অভিযোগ করেন, মৃতের ছেলে হৃদয়সহ স্বজনরা নার্স ও ওয়ার্ড বয়ের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রোমানা পারভীন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, রোগীকে তার স্বজনরা ওয়ার্ডের বাইরে নিয়ে এসে বলেন অক্সিজেন দিতে। এ সময় আমরা রোগীকে ওয়ার্ডের মধ্যে নিয়ে আসার অনুরোধ করি। কারণ ওয়ার্ডের বাইরে অক্সিজেন দেয়া সম্ভব নয়। এ নিয়ে আমাদেরকে গালিগালাজ করতে থাকেন রোগির স্বজনরা। ওয়ার্ডবয়কে কলার চেপে হেনস্থা করেন। উত্তেজিত স্বজনরা আমার ও সিনিয়র স্টাফ নার্স নাজমুন নাহারের মুখে ফাইল ছুড়ে মারে এবং আমাদের ওপর চড়াও হন তারা। এরপই আমরা ওয়ার্ড থেকে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে জরুরি বিভাগে চলে আসি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কোন নিরাপত্তা নেই। অকারণে আমরা লাঞ্চিত হচ্ছি। বিচারের দাবিতে আজ থানায় অভিযোগ করেছি।
এদিকে, এ ঘটনার পরই নার্সরা কর্মবিরতিতে যান। পরে হাসপাতালের কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন এমন আশ্বাস প্রদান করলে ১ ঘন্টা পর নার্সরা পুনরায় ডিউটিতে যোগদান করেন।
ওয়ার্ডবয় শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি অন্য একটি রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছিলাম। এসময় আমার কোটের কলার ধরে টানতে টানতে ওই রোগীর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে রোগীর স্বজনদের কারোর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য তাদের মন্তব্য জানা যায়নি।
জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মোর্শেদ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা নিয়ে রোগীটি জরুরি বিভাগে আসেন রোগীর স্বজনেরা। প্রাথমিক চিকিৎসার পর ওয়ার্ডে পাঠানো হলেও চিকিৎসা শুরুর পরপরই তার মৃত্যু হয়। তবে জরুরি বিভাগে রোগীকে নেয়ার পর থেকে স্বজনরা আমাদের সঙ্গে চিল্লাচিল্লি ও মারমুখী আচরণ করতে শুরু করেন। উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে হাসপাতালে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে ওয়ার্ডে যায় এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রোগীকে মৃত ঘোষণা করি।’
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ও সার্জারি কনসালট্যান্ট ডা. এহসানুল হক তন্ময় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ ঘটনায় নার্সদের নিরাপত্তা হুমকিতে পড়েছে। রোগী ও স্বজনদের আচরণ হাসপাতালের শৃঙ্খলা বিনষ্ট করেছে। আমরা ঘটনাটির তদন্ত এবং আইনানুগ ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।’
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) হোসেন আলী গণমাধ্যমকে জানান, ‘ঘটনার পরপরই আমি হাসপাতালে উপস্থিত হই। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করবে বলে জানিয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’ এদিকে, রোগীর স্বজনদের আচরণের কারণে নার্সরা ৩০ মিনিটের বেশি সময় কর্মবিরতি দেয়। নার্সদের অনুপস্থিতিতে রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রকিব সাদী রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি। অত্যান্ত দুংখজনক ঘটনা। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) খালেদুর রহমান রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি জিডি করেছেন। তদন্তপূর্বক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এএইচ
One thought on “চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীকে হেনস্থা, নার্সদের সঙ্গে মারমুখী আচরণ”