চুয়াডাঙ্গায় ভুট্টাক্ষেতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ছত্রাকজনিত ফিউজারিয়াম স্টক রট নামের এক ধরনের ভাইরাস। যা ওষুধ ও কীটনাশক স্প্রে করেও মিলছে না কোন প্রতিকার। চাষীরা নিরুপায় হয়ে পড়েছে।
গত কয়েক বছরের মধ্যে এ ভাইরাসে এবারই সব থেকে বেশি ভুট্টাক্ষেত আক্রান্ত হয়েছে। একরের পর একর ভুট্টাগাছ বিবর্ণ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে, পঁচে যাচ্ছে শিকর গোড়া। মিলছে না ফলন।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সুত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ৪৯ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে।
কৃষকরা জানায়, প্রতি বছরই ভুট্টা আবাদে শীর্ষে থাকে চুয়াডাঙ্গা জেলা। এবারও মাঠের পর মাঠ জুড়ে চাষ হয়েছে ভুট্টার। ক’দিন বাদেই ক্ষেতের এ ভুট্টা কৃষকের ঘরে উঠবে। কিন্তু সবকিছু মলিন হয়েছে ফিউজারিয়াম স্টক রট নামে ভাইরাসের আক্রমণে। ফলন ও লাভ বেশী হওয়ায় অনেকেই বিভিন্নভাবে ঋণ নিয়ে আবাদ করেন। ফসল বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করেন। এখন ভুট্টার এ অবস্থায় ভুক্তভোগী কৃষকদের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হায়দারপুর গ্রামের খড়ের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, এ মাঠে প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেন কৃষকরা। ক্ষেতের সবুজ ভুট্টা গাছ এখন বিবর্ণ। ফলন হয়েও হয়নি আশা পূরণ। ধূসর শুকনা গাছে নেই ভুট্টার দেখা। চোখের পলকে ভাইরাস ছড়াচ্ছে এক মাঠ থেকে আরেক মাঠে। তাই রাগে ক্ষোভে গাছ কেটে ফেলছেন বেশিরভাগ চাষীরা।
কৃষক আলী হোসেন জানান, গতবার ৪ বিঘা করে আড়াই লাখ টাকার ভুট্টা বিক্রি করেছিলেন। এবার বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ৬ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। আশা ছিল লাখ চারেক টাকায় বিক্রি হবে। কিন্তু এখন ভাইরাসের সংক্রমণে ভুট্টা ক্ষেত শুকিয়ে গেছে। যেখানে বিঘায় ৫০ থেকে ৭০ মণ ভুট্টা হয় সেখানে এখন ১০ মণও হচ্ছে না। কিভাবে কি করবো কিছুই মাথায় আসছে না।
আরেক কৃষক জুয়েল মালিথা বলেন, ‘এবার ভুট্টা ক্ষেত করেছি ৪ বিঘা জমিতে। একেক বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। এছাড়াও রয়েছে জমি লীজের টাকা। চাষের শুরু থেকেই কৃষি অফিসের স্যারেরা যা বলেছে তাই করেছি। কিন্তু যখন ফলন আশা শুরু করে তারপর থেকেই ভুট্টা গাছ শুকানো শুরু হয়। এখন সব শেষ। দেড় লাখ টাকা কিস্তি তুলেছি। এখন কি দিয়ে কি করবো আল্লায় জানে।’
কৃষকরা আরও জানান, এবার ভাইরাসের আক্রমণ ভেঙেছে অতীতের সব রেকর্ড। এ ভাইরাস চাষীদের কাছে এখনো নতুন। কীটনাশক ও ওষুধ স্প্রে করেও হয়নি কোন প্রতিকার। অভিযোগ, এমন সংকটের সময়েও দেখা মিলছে না কৃষি কর্মকর্তাদের।
যদিও কৃষি বিভাগের দাবি, ভাইরাসজনিত এ রোগের হাত থেকে বাঁচতে ভুট্টাচাষীদের নানাভাবে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এজন্য কৃষকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান তাদের।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক ( উদ্ভিদ সংরক্ষন ) কাইছার ইকবাল বলেন, ভুট্টা গাছ লাগানোর সময় কৃষকরা যদি দূরত্ব না মানে সেক্ষেত্রে আক্রমণের মাত্রা বেড়ে যায়। আক্রমণের পর ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে ভুট্টা আবাদের শুরু থেকেই বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
সুত্র : দৈনিক আকাশ খবর
এএইচ