০৫:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কৌশলে স্বামীকে দোকানে পাঠিয়ে স্ত্রীকে নির্জনস্থানে নিয়ে চিকিৎসা, সন্দেহের বশেই জবাই করা হয় চুয়াডাঙ্গার সেই কবিরাজকে

সেখানে গিয়ে কৌশলে স্বামী রুবেল হোসেনকে দোকান থেকে সিগারেট কিনে আনতে বলেন কবিরাজ আব্দুর রাজ্জাক। কিছুক্ষন পর রুবেল হোসেন ফিরে এসে তার স্ত্রী ও কবিরাজ আব্দুর রাজ্জাককে পূর্বের স্থানে না পেয়ে খোজাখুজি করতে থাকেন।

একপর্যায়ে ৩০-৩৫ মিনিট পর পান বরজের পাশ থেকে স্ত্রীকে নিয়ে আব্দুর রাজ্জাক ফিরে আসেন। এরপরই রুবেল হোসেনের মনে সন্দেহ জাগে তাকে কৌশলে দোকানে পাঠিয়ে তার স্ত্রীকে সম্ভ্রমহানি করেছেন কবিরাজ আব্দুর রাজ্জাক।

এরই জের ধরে সেই রাতেই চাচাতো ভাই সোহেল রানাকে সঙ্গে নিয়ে আব্দুর রাজ্জাককে গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করেন রুবেল হোসেন। পুলিশের তদন্তের পর রুবেল ও তার চাচাতো ভাই সোহেল রানাকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চ্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য।

আজ মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান (পিপিএম- সেবা) তার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

এর আগে গত শনিবার (১ জুন) সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের পুরাতন ভান্ডারদোহা গ্রামের কৃষি জমি থেকে আব্দুর রাজ্জাকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপরই পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের তারা হত্যার ঘটনা স্বীকার করেছেন এবং বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বেচ্ছায় দ্বায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। হত্যার কাজে ব্যবহৃত চুরি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নিহত আব্দুর রাজ্জাক নিহত রাজ্জাক শেখ সদর উপজেলার পদ্মবিলা ইউনিয়নের সুবদিয়া গ্রামের মৃত দেছের আলীর ছেলে। তিনি কৃষি কাজ করতেন এবং পাশাপাশি কবিরাজ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।

গ্রেফতার রুবেল মিয়া (২৩) সুবদিয়া গ্রামের পূর্বপাড়ার আব্দুস সেলিমের ছেলে ও সোহেল রানা (২০) একই এলাকার আনিসের ছেলে। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই।

পুলিশ সুপার বলেন, তদন্ত করে ঘটনার পরদিন অভিযুক্ত রুবেল মিয়াকে তার নিজ বাড়ি সুবদিয়া গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক অপর সহযোগী তারই চাচাতো ভাই সোহেল রানাকে একই গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামী দুজনকেই বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল মিয়া জানান, গত ৩১ মে সন্ধ্যার পর ব্যক্তিগত শারীরিক অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য স্ত্রীকে নিয়ে আব্দুর রাজ্জাকের নিকট আসেন। কবিরাজ আব্দুর রাজ্জাক জ্বীনের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে দুজনকেই পার্শ্ববর্তী হোগলডাঙ্গা গ্রামের নবগঙ্গা নদীর ব্রিজ সংলগ্ন একটি পান বরজের কাছে নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে পৌছে আব্দুর রাজ্জাক রুবেলকে দোকান থেকে সিগারেট কিনে আনতে পাঠায়। কিছুক্ষণ পরে রুবেল ঘটনাস্থলে এসে আব্দুর রাজ্জাক ও তার স্ত্রীকে খুজে না পেয়ে স্ত্রীর মোবাইলে কল দিলে বন্ধ পান। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে আনুমানিক ৩৫-৪০ মিনিট পর দুজন পানবরজের পাশ থেকে ফিরে আসতে দেখেন রুবেল। এসময় স্ত্রীকে দেখে রুবেলের মনে সন্দেহ জাগে তার স্ত্রীকে সম্ভ্রমহানি করেছেন আব্দুর রাজ্জাক। এরপর বাড়ীতে এসে তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার স্ত্রী কান্নাকাটির একপর্যায়ে স্বীকার করেন আব্দুর রাজ্জাক কবিরাজ চিকিৎসা দেওয়ার নামে সম্ভ্রমহানি করেছেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন রুবেল হোসেন। প্রতিশোধ নিতে সেই রাতেই চাচাতো ভাই সোহেল রানার স্ত্রীর জ্বীন তাড়ানোর কথা বলে কৌশলে আব্দুর রাজ্জাককে ডেকে নেন। পরে একটি মোটরসাইকেলযোগে রুবেল, তার চাচাতো ভাই সোহেল ও আব্দুর রাজ্জাকে নিয়ে আসেন পুরাতন ভান্ডারদহ গ্রামে। সেখানে পৌছেই আব্দুর রাজ্জাকের গলায় ছুরি দিয়ে পোচ দেন রুবেল হোসেন। এরপর মৃত্যু নিশ্চিতের জন্য জবাই করে আব্দুর রাজ্জাকের দেহ গাছপালা দিয়ে ঢেকে রেখে বাড়িতে চলে যায়। তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।

সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) রিয়াজুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নাজিম উদ্দিন আল আজাদ (পিপিএম-সেবা), সহকারি পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা সহ জেলার ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

জনপ্রিয় গায়ক নোবেল গ্রেপ্তার

কৌশলে স্বামীকে দোকানে পাঠিয়ে স্ত্রীকে নির্জনস্থানে নিয়ে চিকিৎসা, সন্দেহের বশেই জবাই করা হয় চুয়াডাঙ্গার সেই কবিরাজকে

প্রকাশের সময় : ০৭:১৪:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জুন ২০২৪

সেখানে গিয়ে কৌশলে স্বামী রুবেল হোসেনকে দোকান থেকে সিগারেট কিনে আনতে বলেন কবিরাজ আব্দুর রাজ্জাক। কিছুক্ষন পর রুবেল হোসেন ফিরে এসে তার স্ত্রী ও কবিরাজ আব্দুর রাজ্জাককে পূর্বের স্থানে না পেয়ে খোজাখুজি করতে থাকেন।

একপর্যায়ে ৩০-৩৫ মিনিট পর পান বরজের পাশ থেকে স্ত্রীকে নিয়ে আব্দুর রাজ্জাক ফিরে আসেন। এরপরই রুবেল হোসেনের মনে সন্দেহ জাগে তাকে কৌশলে দোকানে পাঠিয়ে তার স্ত্রীকে সম্ভ্রমহানি করেছেন কবিরাজ আব্দুর রাজ্জাক।

এরই জের ধরে সেই রাতেই চাচাতো ভাই সোহেল রানাকে সঙ্গে নিয়ে আব্দুর রাজ্জাককে গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করেন রুবেল হোসেন। পুলিশের তদন্তের পর রুবেল ও তার চাচাতো ভাই সোহেল রানাকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চ্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য।

আজ মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান (পিপিএম- সেবা) তার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

এর আগে গত শনিবার (১ জুন) সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের পুরাতন ভান্ডারদোহা গ্রামের কৃষি জমি থেকে আব্দুর রাজ্জাকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপরই পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের তারা হত্যার ঘটনা স্বীকার করেছেন এবং বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বেচ্ছায় দ্বায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। হত্যার কাজে ব্যবহৃত চুরি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নিহত আব্দুর রাজ্জাক নিহত রাজ্জাক শেখ সদর উপজেলার পদ্মবিলা ইউনিয়নের সুবদিয়া গ্রামের মৃত দেছের আলীর ছেলে। তিনি কৃষি কাজ করতেন এবং পাশাপাশি কবিরাজ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।

গ্রেফতার রুবেল মিয়া (২৩) সুবদিয়া গ্রামের পূর্বপাড়ার আব্দুস সেলিমের ছেলে ও সোহেল রানা (২০) একই এলাকার আনিসের ছেলে। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই।

পুলিশ সুপার বলেন, তদন্ত করে ঘটনার পরদিন অভিযুক্ত রুবেল মিয়াকে তার নিজ বাড়ি সুবদিয়া গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক অপর সহযোগী তারই চাচাতো ভাই সোহেল রানাকে একই গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামী দুজনকেই বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল মিয়া জানান, গত ৩১ মে সন্ধ্যার পর ব্যক্তিগত শারীরিক অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য স্ত্রীকে নিয়ে আব্দুর রাজ্জাকের নিকট আসেন। কবিরাজ আব্দুর রাজ্জাক জ্বীনের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে দুজনকেই পার্শ্ববর্তী হোগলডাঙ্গা গ্রামের নবগঙ্গা নদীর ব্রিজ সংলগ্ন একটি পান বরজের কাছে নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে পৌছে আব্দুর রাজ্জাক রুবেলকে দোকান থেকে সিগারেট কিনে আনতে পাঠায়। কিছুক্ষণ পরে রুবেল ঘটনাস্থলে এসে আব্দুর রাজ্জাক ও তার স্ত্রীকে খুজে না পেয়ে স্ত্রীর মোবাইলে কল দিলে বন্ধ পান। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে আনুমানিক ৩৫-৪০ মিনিট পর দুজন পানবরজের পাশ থেকে ফিরে আসতে দেখেন রুবেল। এসময় স্ত্রীকে দেখে রুবেলের মনে সন্দেহ জাগে তার স্ত্রীকে সম্ভ্রমহানি করেছেন আব্দুর রাজ্জাক। এরপর বাড়ীতে এসে তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার স্ত্রী কান্নাকাটির একপর্যায়ে স্বীকার করেন আব্দুর রাজ্জাক কবিরাজ চিকিৎসা দেওয়ার নামে সম্ভ্রমহানি করেছেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন রুবেল হোসেন। প্রতিশোধ নিতে সেই রাতেই চাচাতো ভাই সোহেল রানার স্ত্রীর জ্বীন তাড়ানোর কথা বলে কৌশলে আব্দুর রাজ্জাককে ডেকে নেন। পরে একটি মোটরসাইকেলযোগে রুবেল, তার চাচাতো ভাই সোহেল ও আব্দুর রাজ্জাকে নিয়ে আসেন পুরাতন ভান্ডারদহ গ্রামে। সেখানে পৌছেই আব্দুর রাজ্জাকের গলায় ছুরি দিয়ে পোচ দেন রুবেল হোসেন। এরপর মৃত্যু নিশ্চিতের জন্য জবাই করে আব্দুর রাজ্জাকের দেহ গাছপালা দিয়ে ঢেকে রেখে বাড়িতে চলে যায়। তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।

সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) রিয়াজুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নাজিম উদ্দিন আল আজাদ (পিপিএম-সেবা), সহকারি পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা সহ জেলার ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা।