০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
চুয়াডাঙ্গায় ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা

‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান করে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি হাসানুজ্জামান সজীব বলেছেন, “জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান করে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। দেশের মানুষ আর পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে চায় না। বিগত ৫৪ বছর আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি যেভাবে দেশ পরিচালনা করেছে, তাতে তারা মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্যই জুলাই বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে।”

আজ বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার উদ্যো চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

মাওলানা মোহাম্মদ আলী’র সঞ্চালনায় এবং ক্বারী জিল্লুর রহমানের কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সহ-সভাপতি ও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা জহুরুল ইসলাম আজিজী।

কেন্দ্র ঘোষিত ৫ দফা দাবিগুলো হলো, (১) জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করা এবং উক্ত আদেশের উপর গণভোটের আয়োজন করা; (২) আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন করা; (৩) গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; (৪) জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা; (৫) জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা জহুরুল ইসলাম আজিজী বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সংঘটিত জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির মতো ভয়াবহ অপরাধের দৃশ্যমান বিচার না হলে জাতির সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি, তা কখনোই বাস্তবায়িত হতো না যদি বিপ্লবীরা রক্ত না দিতেন। জনগণের রক্তে রঞ্জিত রাজপথে যারা দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করেছে, বেগমপাড়ায় বিলাসী জীবন গড়ে তুলেছে— তাদের মৃত্যুদণ্ড ব্যতীত অন্য কোনো শাস্তি ন্যায়বিচার হবে না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে এবং অবিলম্বে সেই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার করতে হবে।”

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সেক্রেটারি মোহাম্মদ তুষার ইমরান সরকার বলেন, “দুই হাজারের অধিক বিপ্লবী ছাত্র-জনতার প্রাণের বিনিময়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলাম, তা যেন ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। জাতির ইতিহাসে ২৪-এর অভ্যুত্থান ৪৭, ৫২ ও ৭১-এর মতোই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটিকে জাতির ইতিহাসে সংরক্ষণ এবং আগামী প্রজন্মের মধ্যে জুলাই চেতনা ছড়িয়ে দিতে অবিলম্বে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে ও তার ওপর গণভোটের আয়োজন করতে হবে। এতে জনগণের মতামতের মূল্যায়ন হবে এবং জুলাই আন্দোলন জাতীয় স্বীকৃতি পাবে।”

জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সেক্রেটারি মাওলানা সাজিদুর রহমান বলেন, “যে সব স্বৈরাচার ও তাদের দোসররা দেশটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে, তাদের কার্যক্রম আর চলতে দেওয়া যায় না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবি থাকবে— জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। তা না হলে জুলাই চেতনার বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়বে।”

ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল ইসলাম বলেন, “নির্বাচনের আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ও সার্বিক স্থিতি বজায় রাখা, যাতে প্রতিটি রাজনৈতিক দল সমানভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা পায় এবং কারও প্রতি অন্যায় আচরণ না হয়। এজন্য নির্বাচনের পূর্বেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা অপরিহার্য, তবেই জনগণ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশে আস্থা রাখতে পারবে।”

বক্তারা আরও বলেন, “৫ই আগস্ট স্বৈরাচারের পতনের পর নতুন বাংলাদেশকে স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে, এবং ভবিষ্যতে কেউ যেন স্বৈরাচারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে না পারে— সে লক্ষ্যে আজকের কর্মসূচির ৫ দফা জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে ভূমিকা রাখবে।”

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় শিক্ষক ফোরাম চুয়াডাঙ্গা জেলা সভাপতি হাসানুজ্জামান রনি, ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা সভাপতি মীর শফিউল ইসলাম, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা সভাপতি ইব্রাহিম হোসেনসহ থানা ও পৌর শাখার নেতৃবৃন্দ এবং তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয়

চুয়াডাঙ্গায় মেছো বিড়াল সংরক্ষণে সচেতনতামূলক আলোচনা সভা

চুয়াডাঙ্গায় ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা

‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান করে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে’

প্রকাশের সময় : ০৩:১৪:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি হাসানুজ্জামান সজীব বলেছেন, “জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান করে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। দেশের মানুষ আর পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে চায় না। বিগত ৫৪ বছর আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি যেভাবে দেশ পরিচালনা করেছে, তাতে তারা মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্যই জুলাই বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে।”

আজ বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার উদ্যো চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

মাওলানা মোহাম্মদ আলী’র সঞ্চালনায় এবং ক্বারী জিল্লুর রহমানের কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সহ-সভাপতি ও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা জহুরুল ইসলাম আজিজী।

কেন্দ্র ঘোষিত ৫ দফা দাবিগুলো হলো, (১) জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করা এবং উক্ত আদেশের উপর গণভোটের আয়োজন করা; (২) আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন করা; (৩) গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; (৪) জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা; (৫) জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা জহুরুল ইসলাম আজিজী বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সংঘটিত জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির মতো ভয়াবহ অপরাধের দৃশ্যমান বিচার না হলে জাতির সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি, তা কখনোই বাস্তবায়িত হতো না যদি বিপ্লবীরা রক্ত না দিতেন। জনগণের রক্তে রঞ্জিত রাজপথে যারা দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করেছে, বেগমপাড়ায় বিলাসী জীবন গড়ে তুলেছে— তাদের মৃত্যুদণ্ড ব্যতীত অন্য কোনো শাস্তি ন্যায়বিচার হবে না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে এবং অবিলম্বে সেই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার করতে হবে।”

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সেক্রেটারি মোহাম্মদ তুষার ইমরান সরকার বলেন, “দুই হাজারের অধিক বিপ্লবী ছাত্র-জনতার প্রাণের বিনিময়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলাম, তা যেন ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। জাতির ইতিহাসে ২৪-এর অভ্যুত্থান ৪৭, ৫২ ও ৭১-এর মতোই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটিকে জাতির ইতিহাসে সংরক্ষণ এবং আগামী প্রজন্মের মধ্যে জুলাই চেতনা ছড়িয়ে দিতে অবিলম্বে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে ও তার ওপর গণভোটের আয়োজন করতে হবে। এতে জনগণের মতামতের মূল্যায়ন হবে এবং জুলাই আন্দোলন জাতীয় স্বীকৃতি পাবে।”

জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সেক্রেটারি মাওলানা সাজিদুর রহমান বলেন, “যে সব স্বৈরাচার ও তাদের দোসররা দেশটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে, তাদের কার্যক্রম আর চলতে দেওয়া যায় না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবি থাকবে— জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। তা না হলে জুলাই চেতনার বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়বে।”

ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল ইসলাম বলেন, “নির্বাচনের আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ও সার্বিক স্থিতি বজায় রাখা, যাতে প্রতিটি রাজনৈতিক দল সমানভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা পায় এবং কারও প্রতি অন্যায় আচরণ না হয়। এজন্য নির্বাচনের পূর্বেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা অপরিহার্য, তবেই জনগণ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশে আস্থা রাখতে পারবে।”

বক্তারা আরও বলেন, “৫ই আগস্ট স্বৈরাচারের পতনের পর নতুন বাংলাদেশকে স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে, এবং ভবিষ্যতে কেউ যেন স্বৈরাচারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে না পারে— সে লক্ষ্যে আজকের কর্মসূচির ৫ দফা জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে ভূমিকা রাখবে।”

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় শিক্ষক ফোরাম চুয়াডাঙ্গা জেলা সভাপতি হাসানুজ্জামান রনি, ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা সভাপতি মীর শফিউল ইসলাম, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা সভাপতি ইব্রাহিম হোসেনসহ থানা ও পৌর শাখার নেতৃবৃন্দ এবং তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা।